নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“ কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরণের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরণের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট। ” -আহমদ ছফা ।

আহমেদ রুহুল আমিন

“ মানূষের জীবনকাল মাত্র দুই দিনের যার একদিন যায় স্বপ্ন দেখতে- একদিন যায় স্বপ্ন ভাঙ্গতে ” ।

আহমেদ রুহুল আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। একজন মা ও তার ‘বেওয়ারিশ বিড়াল মাতৃকতা’ ।। - আহমেদ রুহুল আমিন ।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৫৩

একটি জীবনঘনিষ্ঠ গল্প । উত্তরবঙ্গের একটি জেলা শহরে খুব কাছ থেকে দেখা একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের নানা উত্থান পতনের এই কাহিনী এই সমাজে- যাদের কেউ খোঁজখবর রাখেনা বা কোনদিন কেউ খোঁজখবর রাখার চেষ্টাও করেনি .... !

এটি একটি বড়গল্প, তাই ধারাবাহিকভাবে পর্ব আকারে সামু‘র সম্মানীত পাঠকদের জন্য পোস্ট করলাম ।

(পর্ব-১)

( “ এই মাঘিলা ... মাঘিলার মা-বাপলা উমহার হাতত দিছে মোবাইল...মাঘিলা পড়া লেখা কি করছে- না করছে...আর… হামার ভাতারলার লগত লাইন লাগাছে ........ । মাঘিলাক যদি একবার লগত পানু হয়, ওমহার .........ভিতরত ইন্ডিয়ান কারেন্ট মরিচ পেচকেটায় দিনু হয়...... মাঘিলা.....” - জেলা শহরের পুর্ব-দক্ষিণ বরাবর করোতোয়া নদীর পাড় ঘেষে শহর রক্ষাবাঁধের রাস্তা দিয়ে তুলারডাঙ্গার ‘খতে পাগলি’ চিৎকার দিয়ে ক্ষোভের সাথে এই কথাগুলো আওড়িয়ে সকাল- সন্ধ্যায় দ্রুত হেঁটে যায়....। পথচারী কিংবা বাসাবাড়ির লোকজন তার কথা শুনে শুধু মুখ টিপে হাসে.... ) ।
গল্পের যখন শুরু :
ভিতরগড় কাজিরহাট ব্রীজ সংলগ্ন তালমা নদীর পশ্চিমপাড় আড়াআড়ি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর অবস্থিত নয়ানাভিরাম গাছগাছালীতে পরিপুর্ণ 'তালমা গুচ্ছ গ্রাম' । ঠিক নদীর ওপারের গ্রামের নামটি ‘সোনারবান’। একসময় এখানে ছিল বিশাল জঙ্গল । লোকে বলতো 'তালমা নাওঘাটার জঙ্গল' । সেই পাকিস্তান আমলে - তখন তালমা নদীর উপর ব্রীজ ছিলনা । এখানে দিনে-দুপুরে বাঘ আর বুনো শুকরের আনাগোনা ছিল, অবশ্য তা অনেক আগে । যখন ভাটি অঞ্চলের ( ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল বা নোয়াখালী- কুমিল্লা অঞ্চলের) লোকজন এসে এখানে জঙ্গল কেটে বসতি গড়া শুরু করে তখন ধীরে ধীরে বাঘেরা ওপারবাংলার জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের গরুমারার জঙ্গলে পালিয়ে যায় । এখনোও সেই বন্যপ্রাণীদের ওয়ারিশেরা মাঝে মধ্যে তাদের পুর্বপূরুষদের আস্তানায় পথ ভুলে চলে আসে । বর্তমানে অসচ্ছল ভিটেমাটিহীন নিম্নবিত্ত মানুষেরা এখানে মাথা গুজার ঠাঁই পেয়েছে সেই প্রেসিডেন্ট এরশাদ সরকারের সময় । এখানকার ‘কেনু মিয়া’ একজন চা দোকানদার, লোকে বলে ‘কেনু ভুজারী’ । তালমা নদীর ব্রীজ পেরিয়েই কাজিরহাট ইউপি অফিস সংলগ্ন বাজারেই কেনু মিয়ার চায়ের দোকান ।এখানে বোর্ড অফিস, ভুমি অফিস ও স্কুল থাকায় এবং আশেপাশে বাজার-ঘাট না থাকায় খুব জমজমাট থাকে বাজারটা । কী এক পোড়া কপালে জন্ম ‘কেনু মিয়া’ সবসময়ই বলে - আল্লাহ্ তার ভাগ্যে ছেলে লেখে নাই । না হলে পরপর দুইটা মেয়ে হওয়ার পর তৃতীয়টাও মেয়েই হয়েছে । একমাত্র সম্বল এই চায়ের দোকানের উপর নির্ভরশীল হয়ে তিন-তিনটা মেয়েকে মানুষ করতে হিমসিম খেতে হয় তাকে । পর পর তিনটি বাচ্চা জন্ম দেয়া আর একআধপেট খাওয়া-না খাওয়া বউ কুলসুমকে দেখে কেনু মিয়া মাঝে মধ্যে চমকে উঠে । কি সুন্দর পেটানো শরীর ছিল বউটার এখন কেন যেন বউটার শরীর ভেঙ্গে গেছে । আগের মতো ভাল নেই । সবসময় মনমরা ভাব নিয়ে চলে । পর পর তিনটা বাচ্চা নেয়ায় আজকাল তাকে দেখে তার খুব কষ্ট লাগে ।সুতরাং সে সিদ্ধান্ত নেয়- সে নিজেই খাসি হয়ে নেবে । আর বাচ্চা নিবেনা ... কেননা, বাচ্চা নিতে গেলে আবারও যদি মেয়ে হয় ! সেই সূর্য উঠার আগেই চায়ের দোকানে পানি দেয়া থেকে শুরু করে লাকরী জমানোর কাজটা বউটা করতো । কাস্টমারদের কাপ-পিরিচ ধোয়া থেকে শুরু করে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়া সারাদিন বলতে সেই সকাল থেকে রাত কমপক্ষে দশটা অবধি । কোন কোনদিন রাত বারটাও বাজে । বউটার শরীরে কুলোচ্ছেনা বলে বড়মেয়েটা করে কিছূদিন । কিন্তু শালার পাবলিকের যতো মাথা ব্যথা মেয়েদের নিয়ে । মেয়ে বড় হয়ে গেছে বলে অনেকে গালমন্দ বা সমালোচনা করে । সেই কাজ এখন করে দ্বিতীয় মেয়েটা । খুব হেলা করে কেনু মিয়া মেয়ের নাম রেখেছিল আলেয়া । বড় মেয়ের নাম মরিয়ম । ছোটটার নাম রহিমা । এই নামগুলোর অর্থ কি তাও সে জানেনা বা জানার প্রয়োজনবোধ করেনি কখনও । লোকে এইসব নাম রাখে কিংবা নাম একটা রাখতে হয় তাই রাখা । আলেয়ার বয়স আর কতো হবে এই আট- দশ বছর । তেলচা কালো ছিপছিপে শরীরে ডাগর চোখের বাড়ন্ত বয়সের আলেয়াকে দেখতে বেশ মায়াবী মায়াবী লাগে । মাঝখানে তাকে আনন্দময়ী গ্রামের হবিবর মাষ্টারের বাড়িতে কাজের জন্য রাখে । সেখানে থাকার সময় আলেয়ার সমবয়সী মাষ্টারের মেয়ে তানিয়া আপুকে খুব ভাল লাগতো তার । সবচেয়ে ভাল লাগতো ওর মা যখন ওকে সুন্দরকরে দুটো বেনী বেঁধে স্কুলে পাঠাতো তখন খুব আফসোস হতো তার সে যদি এভাবে স্কুলে যেতে পারতো তবে কতইনা ভাল লাগতো । কিন্তু ভাগ্যবিধাতা'তো সবার ভাগ্য সমান লেখে নাই । বড়মেয়েটাকে কোনও মতেই দোকানে রাখা যাচ্ছেনা বলে কেনু মিয়া আলেয়াকে মাষ্টারের বাড়ি থেকে নিয়ে এসে এখন চায়ের দোকানে ফায়ফরমাস খাটায় । দোকানে কাজ করে বলেই এরই মধ্যে মেয়েটার দিকে কিছু মানুষ আড়চোখে তাকায় । সেই তাকানোর গভীরে ভীমরুলের হুল ফুটানোর মতো একধরনের বিষ আছে যা আলেয়া হারে হারে বুঝেছে মাষ্টারের বাড়িতে থাকতে । এতো সম্মানী ভাল মানুষির অন্তরালে থাকে একধরনের গা ঘিন ঘিন করা কুৎসিতপনা যা মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এগুতে থাকে........। (ক্রমশঃ)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: কেনু মিয়ার কাহিনী চলতে থাকুক।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:০২

আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে উৎসাহিত করার জন্য ।

২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:০১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



চমৎকার!
অতি চমৎকার!!
খুবই সুলিখিত প্রবন্ধ।
পাঠে ব্যাপক মজা লাভ করিলাম।
প্রাণ ভরে দোয়া রইলো আপনার জন্য।

আল্লাহ সোবাহানাতায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন।
আমিন।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:০৮

আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: চির কৃতজ্ঞ পাশে আবদ্ধ করলেন, অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য ।

৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:২১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার জীবন ঘনিষ্ঠ লেখা থেকে আশা করি আমরা জীবনের কিছু বাস্তবতা জানবো। এই নিম্নবিত্ত মানুষদের খবর কেউ রাখে না। কিন্তু তাদের জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:০৯

আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।

৪| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:৪৮

মা.হাসান বলেছেন: ছাত্র অবস্থায় কাজিরহাটের বন্ধুর সাথে একসাথে ক্লাস করেছি।

ডুয়ার্সে যদিও ডোরাকাটা এবং চিতা দু রকমের বাঘ আছে বলেই শোনা যায়, এই এলাকায় ৫০-৬০ বছরে বাঘ দেখার ঘটনা মনে হয় ঘটেনি। ৮০-৯০ বছর আগে হলেও হতে পারে।

ভাষা একেবারে ঐ এলাকার মতো হয়েছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:১৯

আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন । ৬০-৭০ বছর আগে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের উত্তরসুরি নেকরে বাঘ এই এলাকায় বসবাস করতো । এখনো মাঝে মাঝে এই বাঘ ভুল করে এই এলাকায় চলে আসে । বর্তমানে চা বাগান হওয়ায় মাঝে মাঝে এই এলাকায় এর উপদ্রব দেখতে পাওয়া যায় । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.