নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“ কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরণের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরণের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট। ” -আহমদ ছফা ।

আহমেদ রুহুল আমিন

“ মানূষের জীবনকাল মাত্র দুই দিনের যার একদিন যায় স্বপ্ন দেখতে- একদিন যায় স্বপ্ন ভাঙ্গতে ” ।

আহমেদ রুহুল আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। করোনাকালের দিনলিপি ।।

০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৪৯

পৃথিবীর সব বাবাদের ন্যায় আমাদের বাবাও জীবন যুদ্ধ শেষে সন্তানদের মানুষ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক আগেই । গেল কিছুদিন আগে ‘বাবা দিবস’ বলেই শুধু নয়- বাবাকে রোজ রোজ মনে পড়ে আজও ! সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে, আমার জন্মস্থান গ্রামে শৈশবে বুঝজ্ঞান হওয়ার পরে বাবার কাঁধে চড়ে নদীতে যাওয়া হতো গোছল করতে । বাবার কাঁধ ব্যথা হয়ে গেলে আমাকে নামিয়ে দিতে চাইলেও আমি নামতে চাইতামনা । জোড় করে নামালেও কিছুটা হাটার পরে আবারও কাঁধে উঠতাম । তখনকার উত্তরবঙ্গের ( একাত্তরে যুদ্ধ অব্যবহিত আগে-পরে ) আমাদের এলাকার প্রায় সব পুরুষ মানুষ নদীতে গোছল করতো । কেননা, তখন গ্রামে কোন টিউবওয়েল ছিলনা । বেশীরভাগ মাটি কিংবা পাকা কুঁয়োতেও বছরের ফাল্গুন বা চৈত্র মাসে পানি পাওয়া যেতোনা । তবে, নদীর পানি তখন স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ ছিল ।
কেন যেন আমার মনেই ছিলনা বিগত ২৫ জুন ২০২০ ছিল আমার একমাত্র ছেলের জন্মদিন । একুশ বছর আগে এই দিনে তার এই অসার পৃথিবীতে আগমণ । নিউবর্ণ বেবী হিসেবে তার মায়ের অনুপস্থিতিতে ঠেকার খাবার হিসেবে হাফক্রিম ল্যাকটোজেন বাসায় রেখেছিলাম তার ক্ষুধার সময় যেন এটি কাজে লাগে । বলা বাহুল্য, নিউবর্ণ বেবীর মা একজন সরকারী চাকুরীজীবি হওয়ার কারণে বিকল্প হিসেবে এই ব্যবস্থা রাখা । কিন্তু বিপদ দেখা দিল বাচ্চার মুখে ফিডারে একফোটা সেই হাফক্রিম ল্যাকটোজেন দুধ কোনমতেই খাওয়ান‘তো দুরের কথা মুখে দেওয়াই সম্ভব হয়ে উঠেনি । বাধ্য হয়ে, তার মাকে ম্যাটারনিটি লিভ শেষ হওয়ার পরে বাধ্য হয়ে অফিসেই তাকে নিয়ে যেতে হতো । সময়ের ফেরে ও যখন বড়ো হলো বা নিজেই হাটা শুরু করলো তখন থেকে হাটতে গিয়ে আমার বাম হাতের তর্জনী আঙ্গুল ছাড়তেই চাইতোনা । জোর করে ছাড়ালেও কিছুক্ষন পর আবার এসে আঙ্গুল ধরে হাটা শুরু করতো । ছেলের এই অভ্যাসটি হাইস্কুলগামী হওয়ার আগ পর্যন্ত বহাল ছিল । বিষয়টি আমার বাপের কাঁধে চড়া আমার শৈশবের সেই ক্ষণটিকে রিপ্লে করতো । সবচেয়ে জ্বালাতন করতো রাত্রে খাবার পর যখন ঘুমোতে যেতাম । তার ঘুম না আসা পর্যন্ত রাজ্যের সব গল্প শুনিয়ে যেতে হতো । একেকদিন একেক গল্প । কোন গল্প দ্বিতীয়বার বললে সে ধরে ফেলে বলতো সেটি বাদ দিয়ে অন্য গল্প শুনানোর জন্য ।
আমার মাঝে একইসাথে ‘বাবা’ ও ‘সন্তানের’ বৈপরীত্য ভীষণভাবে এক টেলিপ্যাথিক সংযোগ ঘটিয়ে মায়াময় পৃথিবীতে এক ধুম্রজালের সৃষ্টি করে ! তাই'তো বাবা হয়েও আজকাল শৈশব বড় কাছে টানে । মনে হয় যদি কখনো সেলুলয়েডে রিপ্লে হয়ে আবারও ফিরে যাওয়া যেতো সেই 'বাবা'সঙ্গ ভরা মধুর দিনগুলোতে...!
আজ ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে । এখন গল্পতো দুরে থাক, তার স্বার্থের বাইরে কোন কথা তাকে এখন বলতে পারিনা । আমার বাবাকে নিয়ে লেখা একটি কবিতা এখানে পোস্ট দিলাম ।

।। বর্ষায়ী বিষাদ ।।

সেইসময় বর্ষায় টইটম্বুর
আমার ছোট্ট `হলধর' গ্রাম -
পেছনে বয়ে চলা
খরস্রোতা 'চাওয়াই' ।
আমাদের শৈশবে
নদীর দুকুল ছাপিয়ে '
বর্ষা আসতো ফি বছরে,
এখন অনায়াসে যেমন
আসে শরীরে 'অসুখ-বিসুখ' ।
আমার 'প্রাইমারি টিচার বাবার'স্কুল ছিল
নদীর ঠিক ওপারে ।
একবারের কথা মনে আছে-
বর্ষার স্রোতসিনী নদী 'চাওয়াই'
সাঁতরে পার হচ্ছেন বাবা !
এপারে আমরা দু'ভাই-
বাবার ডুব সাঁতারে
নদী পার হওয়া দেখছি .....।
খর স্রোতের বিপরীতে
'বাবার' সেকি যুদ্ধ... !
- বাবা পেরে উঠছেননা !
ফলাফল যা.....
বাবার স্রোতের টানে ভেসে চলা -
যেমনটা আজকাল
বাজার মূল্যের উদ্ধর্গতিতে
আমাদের ভেসে চলা হরদম !
তারপর-
ভেসে ভেসে অনেকদুর ....
বাবা ভেসেই চলছেন যেন
সময়ের স্রোতে অনন্তকাল -
ভেসেই চলছেন- ভেসেই চলছেন .... !
এপারে তখন 'কান্না'র বিকল্প
কিছুই ছিলনা আমাদের !
'বাবা' অনেক দুরে স্রোতের টানে
নদী পার হয়েছেন ঠিকই ।
কিন্তু, কিছু বুঝে উঠবার আগেই
মেজভাই তাগিদ দেয়-
'চল্ - বাড়ি ফিরে চল্' ।
তখন 'সাইন ল্যাংগুয়েজ'এর
কিছুই বুঝতামনা আমি,
যা দুর থেকে 'বাবা' জানান দিয়েছিলেন ।
হু-হু করে দীর্ঘক্ষণ কেঁদেছিলাম-
'বাবার' নদীর স্রোতে ভেসে
যাওয়া দেখে.... !
দীর্ঘদিন তাঁর নদীতে
ভেসে যাওয়ার স্মৃতি ধারণ করে
কতোবার চোখ ছল্ ছল্
করে উঠতো নিরবে আমার.... !
তখন অনেক কিছুই বুঝতাম না... !
এই যেমন-
'বাবার ফেস মুভমেন্ট'
কিংবা 'বডি ল্যাংগুয়েজ' ।
-'মেজভাই' যা অনায়াসে
বুঝতো ঠিকই !
আজ দীর্ঘ দিন পর -
আমিও 'বাবার' মতো
সময়ের স্রোতে ভেসে চলছি ।
কখনও ডুব সাঁতারে
কিংবা-
স্রোতের বিপরীতে পার হওয়ার
জীবন যুদ্ধ চলছে হরদম... !
শুধু ভেসেই চলছি- ভেসেই চলছি অনন্তকাল... !!
'বাবা' তাও নদী পার হয়েছেন ঠিকই,
কিন্তু আমি পারিনি !
কেননা , আমিতো কখনো বাবার
'ফেস মুভমেন্ট' - 'বডি লেংগুয়েজ'
অথবা দুরে থেকে জানানো
'সাইন ল্যাংগুয়েজ'
বুঝতে পারতামনা - কিংবা সেভাবে বুঝার
চেষ্টাও করিনি কোন দিন !
-যেভাবে বুঝেছিলেন
'মেজভাই' অনায়াসেই ।।
=============

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বাবার জন্য শ্রদ্ধা রইলো।

০৬ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪৮

আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা, শুভকামনা সততঃ ।

২| ০৬ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৪২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বাবার জন্য শ্রদ্ধা

০৬ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪৯

আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা, শুভকামনা সততঃ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.