somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তি কমিটি,রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের জম্ম কথা

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শান্তি কমিটি

১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে খাজা খায়রুদ্দিন, ছিলেন গোলাম আযম, এ কিউ এম শাফিকুল ইসলাম, সায়েদ মাসুম প্রমূখের উদ্যোগে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটির প্রধানের পদবী ছিল চ্যায়ারম্যান। শান্তি কমিটি তৈরী হওয়ার পরপর এর বিভিন্ন এলাকায় জোর করে হিন্দুদের ধর্মান্তর শুরু করে। দক্ষিন পন্থী রাজনৈতিক ভাবার্দশের মানুষ সহ জামাত-ই-ইসলামের সমর্থকরা এ বাহিনীতে যোগ দেয়। পরবর্তীতে অনেককে প্রাণের ভয় দেখিয়ে বাধ্য করা হয় শান্তি কমিটিতে যোগ দিতে।

আল-বদর

আল বদর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর সহযোগী হিসাবে সৃষ্ট আধা-সামরিক বাহিনী। এদের মূল কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা, বাঙালি হত্যা, নারী ধর্ষন ।তবে এদের মূল কাজ ছিল শিক্ষক, বুদ্ধিজিবী, ডাক্তার তথা শিক্ষিত মানুষ লিস্ট ধরে হত্যা করা। জেনারেল নিয়াজির পোষকতায় জামাত-ই-ইসলাম এ বাহিনী তৈরী করে। এপ্রিল মাসে আল বদর বাহিনী গঠিত হয়।

২২ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মংমনসিংহের জামালপুলে এ বাহিনী গঠিত হয়।ময়মনসিংহ জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মুহম্মদ আশরাফ হোসাইনের নেতৃত্বে। ততকালীন জামাত-ই-ইসলামের ছাত্র সংগঠন ছিল ইসলামি ছাত্র সংঘ। ছাত্র সংঘকে আল-বদর বাহিনীতে রুপান্তর করা হয়।

১৯৭১ সালের ৭ই নভেম্বর ঢাকার বাতুল মোকাররম প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের ‘পূর্ব পাকিস্থান শাখা’র সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ‘চার দফা ঘোষনা’ প্রচার করে।

ঘোষনা গুলি হলো:

ঘোষনা ১: দুনিয়ার বুকে হিন্দুস্থানের কোন মানচিত্র আমরা বিশ্বাস করি না। যতদিন পর্যন্ত দুনিয়ার বুক থেকে হিন্দুস্থানের নাম মুছে না দেওয়া হবে ততদিন পর্যণ্ত আল বদর বাহিনী বিশ্রাম নেবে না।

ঘোষনা ২: হিন্দু লেখকদের কোন বই অথবা হিন্দুদের দালালি করে লেখা পুস্তকাদি লাইব্রেরীতে রাখতে পারবেনা। বিক্রী বা প্রচার করতে পারবে না। যদি কেউ করে তবে পাকিস্থান অস্তিত্বে বিশ্বাসী স্বেচ্ছাসেবকরা জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেবে।

ঘোষনা ৩: পাকিস্থান অস্তিত্বে বিশ্বাসী স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পর্কে বিরূপ প্রচার করা হচ্ছে। যারা এই অপপ্রচার করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে হবে।

ঘোষনা ৪: বায়তুল মোকাদ্দেসকে উদ্ধারের অভিযান চলবে।

দৈনিক পাকিস্তান ও পূর্বদেশ পত্রিকায় ২৩ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে আল বদর বাহিনী নিজেদের সম্পর্কে বলে,

"আলবদর একটি নাম! একটি বিস্ময়। আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী আলবদর সেখানেই! যেখানেই দুষ্কৃতকারী, আলবদর সেখানেই। ভারতীয় চর বা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।"

১৪ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে ইসলামি ছাত্রসংঘের নেতা মতিউর রহমান নিজামী বলে,

"আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে। পাকসেনাদের এ দেশের ইসলাম প্রিয় তরুন ছাত্র সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আল-বদর বাহিনী গঠন করেছে। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৩১৩। এই স্মৃতিকে অবলম্বন করে ৩১৩ জন যুবকের সমন্বয়ে এক একটি ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"

মতিউর রহমান নিজামী – পাকিস্তানের প্রধান
আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ - প্রাদেশিক প্রধান
মীর কাশেম আলী – তৃতীয় প্রধান
মোহাম্মাদ কামারুজ্জামান – প্রধান সংগঠক
৭১ সালের সেপ্টেম্বর এর প্রথম দিকে গভর্নরের উপদেষ্টা রাও ফরমান আলীর সংগে বৈঠকে গোলাম আজম বুদ্ধিজীবি নিধনের অনুমোদন লাভ করে। বুদ্ধিজিবী হত্যার মূল দায়িত্ব আল-বদর থাকলেও পরে প্রয়োজনে আরও ব্যাক্তিকে এ সংগঠনের সদস্য করা হয়। আল--বদর বাহিনী তাদের মূল দক্ষতা দেখায় ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজিবী হত্যায়।

রাজাকার

রাজাকার একটি ফার্সি শব্দ। এর অর্থ সেচ্ছাসেবী।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় হায়দ্রাবাদের শাসক নিজাম রেজাকার বাহিনী তৈরী করেন।নিজাম হায়দ্রাবাদকে ভারতের অংশ না করতে, প্রাথমিক প্রদিরোধ করতে তিনি রেজাকার নামে সেচ্ছাসেবি বাহিনী তৈরী করেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সহোযোগীতায় রেজাকার বা রাজাকার বাহিনী তৈরী জামাত-ই-ইসলাম।

নৃশংস, মানবতা বিরোধি রেজাকার/রাজাকার বাহিনী গঠিত হয় ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনার খান জাহান আলী রোডের আনসার ক্যাম্পে। মাওলানা এ.কে.এম ইউসূফের নেতৃত্বে এ বাহিনী তৈরী হয়।তখন এ বাহিনীল সদস্য ছিল ৯৬ জন ।মাওলানা ইউসুফকে আহ্বায়ক এবং এ.এস.এম জহরুল হক পরিচালক।

১৯৭১ এর ১লা জুন জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডন্যান্স ৭১ জারি করে আনসার বাহিনীকেও রাজাকার বাহিনীতে রুপান্তরিত করে। প্রাথমিক পর্যয়ে রেজাকার বাহিনীর প্রশিক্ষনের ছিল ১৫ দিনের। প্রশিক্ষনে তাদের লি-এনফিল্ড,থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানো শেখানো হয়। ১৯৭১ এর ১ জুলাই কুষ্টিয়ায় রাজাকার বাহিনীর প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং সমাপ্ত হয়। পূর্বাঞ্চলের সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল এ এ কে নিয়াজী সেই বছর ২রা নভেম্বর সাভারে রাজাকার বাহিনীর কোম্পানী কমান্ডারদের প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং শেষে বিদায়ী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরবর্তি পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী একটি স্বাতন্ত্র অধিদপ্তরে উন্নিত হয় । প্রাথমিক অবস্থায় ১০টি জেলায় ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাদের রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বে দেওয়া হয়। রাজাকার বাহিনীর রাজাকারেরা কোরআন ছুয়ে শপথ নিতেন I shall bear true allegiance to the constitution of Pakistan as framed by law and shall defend Pakistan, if necessary with my life ।

রেজাকার বাহিনীর নৃশংসতা, কর্মতৎপরতা দেখে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ই সেপ্টেম্বর জারিকৃত এক অধ্যাদেশ বলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ।


আল শামস

আল শামস শব্দের অর্থ সূর্য।এটিও পাকিস্তানী সেনা বাহিনীকে সহোযোগীতা করার জন্য তৈরি করা হয়।মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী আল বদর ও আল শামস বাহিনীর আমীরের পদ গ্রহণ করেন এবং সারা বাংলাদেশে প্রচারণা, সামরিক বাহিনীসমূহের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করে। পরবর্তীতে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদও এ বাহিনীর প্রধান হয়।



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×