বাংলা ব্যাকরণ কে ঘৃনা করার অনেক কারন ছিল ছোটবেলায়। কারক সমাস অনেক কম পারতাম। অনেকেই এইগুলা খুব ভাল পারত। আমি খালি হা হয়ে তাকায় তাকায় বুঝার চেস্টা করতাম তারা পারছে কিভাবে। সব থেকে বিরক্তিকর ব্যাপার ছিল প্রকৃতি প্রত্যয়!! আমি সারাজীবনেও বুঝলাম না রুট বা বর্গমুল চিহ্নটা সেখানে কি কাজে লাগে?! আর ঐটাকে সরানোর জন্য দুই সাইডে বর্গ করে দেওয়া হয় না কেন? পৃথিবীর সব টপিক নিয়ে ইঙ্গিতময় কৌতুক থাকে। বাংলা ব্যাকরণ নিয়েও ছিল। এক ছেলে নাকি একবার বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা দিচ্ছিল। গার্ড দিতে আসা টিচার জানতে চেয়েছিলেন প্রশ্ন কেমন হয়েছে? ছাত্রের সহজ সরল উত্তর, কি আর কমু স্যার। সারারাত লিঙ্গ নিয়া টানাটানি করলাম সকালে উইঠা দেখি ধাতু প্রত্যয় পড়ে আছে!! তবে এসব ঘটনার aftermath গুলা আবার আমরা কখনই জানতে পারিনা তাই ছাত্রের জবাবের পর টিচার এর অভিব্যাক্তি কি হয়েছিল জানা যায় নায়। বাস্তব জীবনের লিংগ পরবর্তন অনেক কঠিন হলেও হতে পারে। সেরকম কারো সাথে এখন পর্যন্ত আসলে আমার দেখা হয় নায়। তবে বাংলা ২য় পত্রে লিঙ্গ পরিবর্তনটাই মনে হয় সব থেকে সহজ ছিল। সুন্দর মিল ছিল। ধোপা থেকে ধোপানি।
আমার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের দুটা জিনিস খুব মজা লাগত। এক কথায় প্রকাশ আর বাগধারা। এক কথায় প্রকাশ গুলা বেশ পারা যেত। তবে একবার অবশ্য কোন একটা পরীক্ষায় “যাকে দেখলে চোখ ফেরানো যায় না” এরকম কিছু একটা এসেছিল আর আমি ঐশ্বরিয়া রায় এর নাম লিখতে গিয়েও লিখিনাই। আমার সব থেকে মজা লাগত বাগধারা। বাগধারা গুলা আসলেই বেশ মজার ছিল। মাঝে মাঝে নিজে নিজেই বাগধারা বানাতাম। “অরণ্যে রোদন” র এর জায়গায় চ বসানোর কারনে অবশ্য একবার বাসার টিচার এর কাছে বেশ মার খেলাম। তাকে যতই বুঝানোর চেস্টা করিনা কেন যে স্যার এইটাতে মুল অর্থ পরিবর্তন হয় না। অরণ্য মানে জঙ্গল । ঐটাতে রোদন ও যা, (বিপ)দন ও তা। তবে বাগধারা গুলা বড্ড সেকেলে। আর অকর্মার ঢেকি নামে তো কোন বাগধারাই থাকা উচিত না। সোজা ওই জায়গায় লেখা হবে “আশরাফুল”। “সন্ধি বিচ্ছেদ” অবশ্য সমাস কারক থেকে সহজ ছিল। তবে সন্ধি মানে মিল মহব্বত। এখানে এত বিচ্ছেদ ঘটানো কেন হবে ঠিক বুঝে উঠতে পারিনাই।বাংলা রচনা কমন পরুক আর না পরুক ১০ পৃষ্ঠা লিখতে হবে এটাই ছিল নিয়ম। সেই নিয়ম এর কারনে ফন্ট এর সাইজ গুলাও মাশাল্লাহ টাইপ হইত। আর হা রচনার ফাঁকে ফাঁকে নিজের বানানো দূর্বল কবিতা থাকত। একবার ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ এ ঠিক করলাম সব গুলা ঋতুর সাথে একটা কবিতা লিখব। কবিতাগুলা খুব জাতের হয় নায়। “বর্ষাকাল মহা কাল, সে বড় আজব কাল” – এই জাতিয় কবিতাই বেশি হত। আর ভাব সম্প্রসারন এ ভাব এতই সম্প্রসারিত হইত যে ভাব কমার কোন উপায় থাকত না।
এক শালিক
কুসংস্কার এ কে কতখানি বিশ্বাস করে জানিনা শালিক জিনিসটার প্রতি আমার কেমন জানি একটা বিশ্বাস চলে আসছে। এক শালিক দেখলে বেশ ভয় পেয়ে যাই। দুই শালিক দেখলে খুশি হই। এই জিনিসটা আমার মাথায় ছোটবেলা থেকেই ঢুকে আছে। ইদানিং মানব সমাজ এবং শালিক সমাজ দুই সমাজেই ডিভোর্স বা বিচ্ছেদ এর পরিমান এত বেশি যে খুবি ভয় লাগে। মানুষ যা খুশি করুক শালিক সমাজ এ বিচ্ছেদ মোটেও কাম্য নয়। কখনও এক শালিক দেখতে চাই না। কয়েকদিন আগেই এক বন্ধুর সাথে দেখা করার আগে এক শালিক দেখলাম। তখনি বুঝতে পারলাম খারাপ পরিনাম অনিবার্য। ঠিক তাই হল। বন্ধু বাথরুম এ যাওয়ার আগে মোবাইল আমার হাতে দিয়ে গেল। ঠিক তখনি মোবাইল এ মেসেজ আসল। কিভাবে জানি সেটা ওপেন হয়ে গেল। কেউ একজন মেসেজ এ খুব সরল ভাবে লিখেছে, “ জান তুমি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়”। বন্ধু বাথরুম থেকে এসে মোবাইল হাতে নিয়েই বুঝে ফেলল যে আমি মেসেজটা দেখে ফেলসি। যাক আর যায় কই। আবেগময় বন্ধু চেঁচামেচি শুরু করে দিল। তুই এটা কি করলি!! আমি বললাম, ভাই মেসেজ টা না হয় ভুল করে দেখলাম ই, বুকে মাথা তুই দিবি, আমি তো আর দিমু না। কে শোনে কার কথা। হেভি চেচামেচি হজম করলাম। কি আর করমু! সব এক শালিক দেখার ফল।