আজ ফেবু ঘাটতে ঘাটতে একজনের পোস্ট লক্ষ করলাম।
"জীবনে বড় হতে হলে,
সবাইকে ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানের মত এটাক দিতে হয়।"
ছোটবেলায় একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা কোন মনীষীর জীবনী তা ঠিক মনে পড়ছে না। যাকগে, গল্পটা অনেকটা এরকম,
এক শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে একটা দাগ এঁকে তার ছাত্রদের বলেছিলেন দাগটা ছোট করতে। প্রত্যেকে দাগটি মুছে মুছে ছোট করলেও একজন ওই দাগটির পাশেই বড় একটি দাগ এঁকে শিক্ষকের আঁকা দাগটিকে ছোট করে দিলেন।
আমাদের মানসিকতা অনেকটা ওই বেশি সংখ্যক ছাত্রের মতই। আমরা চাই অন্যকে দমিয়ে রেখে নিজে বড় হতে। এটা আমাদের সহজাত ধর্ম। মূলত এটাই মহামানবদের সাথে আমাদের পার্থক্য গড়ে দেয়।
নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধি কিংবা মাওলানা ভাষানীর কথাই ধরুন।
ম্যান্ডেলা সাতাশ বছর কারাবন্দী ছিলেন। একটু ধারনা করতে পারেন?
এমনকি উপরের যার পোস্টটি নিয়ে কথা বলছি, তার বয়সও বড়জোর বাইশ কি তেইশ।
আর মহাত্মা গান্ধীজি অথবা ভাষানী কতটা সাধারণ জীবনযাপন করেছেন তা আমরা সকলেই জানি। সাধারণ একটা ধুতি আর একটা চাদর পড়েই জীবন পাড় করেছেন গান্ধীজি। আর ভাষানীর পোশাকও ছিল অতি সাধারণ। ছিল একটা পাঞ্জাবি আর বেতের টুপি।
এরা প্রত্যেকে সারাজীবন ধরে সমাজে শান্তির বাণী ছড়িয়েছেন। সমাজকে আলোকিত করেছেন। একত্রিত করেছেন সমাজের মানুষগুলোকে।
কি মনে হয়? এরাও যদি অন্যকে এটাক দিয়ে বড় হবার চিন্তা করতেন তবে কি আমরা একজন ম্যান্ডেলা কিংবা একজন ভাষানী পেতাম?
সক্রেটিসের কথা আমরা প্রত্যকেই জানি। কিন্তু ক'জন আমরা সেই রাজার নাম গুগলসার্চ না করে বলতে পারব যিনি সক্রেটিসকে বিষপানে বাধ্য করেছিলেন?
সবকিছুই মানসিকতার পার্থক্য। কারো কাছে অর্থ-ক্ষমতা-প্রতিপত্তিই সব। আবার কেউ সম্মানটাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। কেউ চায় টাকার বিছানায় ঘুমাতে, টাকার উপর মরতে। আর কেউ চায় মরে গিয়েও অমর হতে। সবকিছুই নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির উপর।
আমরা আসলে জিততে চাই না। আমরা চাই অন্যকে হারিয়ে দিতে।
শুধু কি তাই, হারিয়ে দেয়ার মধ্যে আবার পৈশাচিক আনন্দও খুঁজে বেড়াই।
জিতার লক্ষ থাকা উচিৎ। অন্যকে হারিয়ে দেবার নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৪৭