প্রিয় মেঘ আব্বু জি,
তোমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের জন্মদিন হয়ত আজ। দিনে দিনে শরীরের মত হৃদয় এর রক্তক্ষরণ ও কমে আসে... সেই ভরসাতেই এই কথা বললাম। কোনো ভাবেই কলম দিয়ে শুভ জন্মদিন কথা টা আসছে না।
কি করে এই জন্মদিন শুভ হয় বল?
মনে আছে, যখন তোমার বয়স দুই বছর, তোমার খুব জ্বর হলো একবার। ধানমন্ডির একটা হাসপাতালে তোমাকে দেখতে গিয়ে দেখি রুনি আপু খাবার নিয়ে তোমার পিছনে ছুটছে। আমি তো অবাক, বললাম কে বলবে তোমার ছেলে অসুস্থ! আপু বলল, আর বল না, স্যালাইন শরীরে পড়তেই এখন উঠে ছুটোছুটি শুরু করে দিল!
বাবা, আমার যদি ক্ষমতা থাকত এমন কোনো সালাইন তোমার শরীরে পুশ করার যাতে তুমি আবার তোমার আগের আনন্দ ভরা সেই জীবনে ফিরে যাও....আমি তাই করতাম! সেই ক্ষমতা আমার নেই । তবে তোমাকে দু কলম লিখে একটু শক্তি যোগাতে ইচ্ছে করছে। কারণ তোমাকে যে অনেক বড় হতে হবে বাবা! হতেই হবে! তুমি জেনে নিও, তুমি আর একা নাই, তোমার সাথে অনেকে আছে, যাদের তুমি দেখতে পাও না, কিন্তু তোমার বিপদে তুমি এদের পাবে। এরা টিভি ক্যামেরার সামনে বড় বড় কথা বলে দায়িত্ব নেয় না, এরা মানবতার শক্তি দিয়ে মাথায় হাত রাখে! আব্বু, তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান ছেলে, বল তো বাতাস কি আমরা দেখতে পাই? কিন্তু বাতাসের শক্তি দেখেছ ঝড় এর সময়? এই বাতাস ই কিন্তু পানিকে সাথে নিয়ে সুনামি তৈরী করে আর তখন পৃথিবীর কোনো শক্তি থাকে না তাকে আটকে রাখে। আমরাও তেমন। আমরা তোমার জন্য লড়ব বাবা। কথা দিচ্ছি। তোমার জন্যই বা বলছি কেন, তুমি তো আমাদের ই...আমরা আসলে আমাদের জন্যই লড়ব।
কষ্ট, দুঃখ, কান্না দুই হাতে চেপে রেখে তোমাকে আশির্বাদ করছি আব্বু জি... জন্মদিনটা শুভ কিছু বয়ে আনুক তোমার জন্য।
- সিলভি খালামনি
সিডনী, অস্ট্রেলিয়া, ১৬ ই জুন ২০১২
দ্রষ্টব্য: ছবিটি গতবছরের, আজ মেঘের দুই পাশে এরা নেই৷ মেঘের মুখের এই হাসিটাও নেই৷ এক কালোরাতেই সবকিছু কেড়ে নিয়েছে হায়নার দল৷ আফসোস সেই হায়নারা আজও ঘুরে বেড়ায় মুক্ত বাতাসে!
(সংগ্রহীত)