পল্লব পরীক্ষা দিয়ে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিল। অনেকদিন বৃষ্টির কাছ থেকে ষ্পষ্ট করে তার মনোভাব শোনার জন্য অপেক্ষা করছে আজ সে বৃষ্টির কাছ থেকে চূড়ান্ত জবাব নেবে। সে বৃষ্টিকে ষ্পষ্ট করে জিজ্ঞেস করবে সে তাকে ভালোবাসে কি না? বৃষ্টির জবাব যদি পজেটিভ হয় তবে তো পল্লবের মনের আশা পূরণ হয়, তার প্রায় এক বছর বৃষ্টির পথ চেয়ে থাকার অবসান হয় আর বৃষ্টির জবাব যদি নেগেটিভ হয় তবে---,
না না নেগেটিভ হবে কেন? তাহলে বৃষ্টি তাকে এতদিন আশ্বাস দিয়ে রাখল কেন? কিন্তু বৃষ্টি তো তাকে আশ্বাস দেয়নি। বরং বার বার হালকাভাবে, ইয়ার্কি করে অনেককিছু্ বলেছে। বৃষ্টি যদি প্রথমে তার ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করত তবে তো তার পিছনে দিনের পর দিন তাকে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।
বৃষ্টি পরীক্ষা দিয়ে বের হলো। সে একরকম পল্লবকে না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিল।
পল্লব ডাক দিল, বৃষ্টি।
কি রে দাঁড়িয়ে আছিস্ কেন? বাসায় যাবি না।
বৃষ্টি আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
কেন?
আজ পরীক্ষা শেষ না, চল্ না কোথাও একটু গিয়ে বসি?
কেন? কি বলবি? এখানে বল?
বৃষ্টি আজকের দিনে আমাকে একটু সময় দে, আমি আর কোনদিন তোর কাছ থেকে সময় চাইব না। তোর সঙ্গে আমার আর কোনদিন কথা নাও হতে পারে।
বৃষ্টি পল্লবের মুখের দিকে তাকাল, সিরিয়াসলি?
অফ কোর্স।
বেশ চল্ তোর শেষ কথা শুনি।
দু’জনে একটা ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে রওয়ানা হলো। বৃষ্টি তার মোবাইলটা দু’জনের সিটের মাঝখানে রেখেছিল পল্লব বৃষ্টির মোবাইল সেটটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ টিপে টিপে কী যেন দেখল।
তার মুখ কালো মেঘে ঢেকে গেল।
বৃষ্টি তা খেয়াল করল না।
মগবাজার মোড় অতিক্রম করার পর ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল, মামা কোথায় যাব?
পল্লব মুখ গম্ভীরস্বরে বলল, চন্দ্রিমা উদ্যানে চল।
কিছুক্ষণ পর ট্যাক্সি ক্যাব চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে এসে দাঁড়াল। দু’জনে ট্যাক্সি ক্যাব থেকে নেমে ব্রিজের ওপর দিয়ে হেঁটে চন্দ্রিমা উদ্যানে ঢুকল। কিছুদূর সোজা যাবার পর হাতের ডানে গিয়ে দু’জনে একটা গাছের নীচে মুখোমুখি বসল।
বৃষ্টি একটা দুষ্টামির হাসি হেসে বলল, পল্লব বল্ তোর শেষ কথাগুলো?
পল্লব বলল, বৃষ্টি তুই আমাকে ক্রিটিসাইজ করছিস্? আসলে সত্যি সত্যি যখন আমাকে জানবি আমি আর নেই সেদিন বুঝবি কিন্তু সেদিন তোর কিছু করার থাকবে না।
বল্, বল্, বল্ তোর কথাগুলো বল্?
তুই যা-ই বল্ না কেন আমি সবকিছু না বলে তোর কাছ থেকে বিদায় নিব না।
বল্?
বৃষ্টি আজ আমাদের ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলো। তোর সঙ্গে আমার পরিচয়েরও প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হলো। আমার যতটুকু মনে পড়ে প্রথম ক্লাসের দিনেই তোর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। সেদিন থেকে আমি মনে মনে তোকে ভালোবেসেছি, আমি অনেকদিন তোকে ইন্ডাইরেক্টলি বলেছি। যখন দেখেছি তু্ই বুঝেও না বোঝার ভান করছিস্, আমাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছিস্ তখন আমি তোকে সরাসরি ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছি। আমি তোর কাছ থেকে যেমন নেগেটিভ এ্যানসার পাইনি তেমনি পজেটিভ এ্যানসারও পাইনি। আসলে আমি একটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। আমি এই অবস্থার অবসান চাই এবং সেটা আজই।
তো আমাকে কি করতে হবে?
তুই আজ আমাকে বলবি, তুই আমাকে ভালোবাসিস্ কি না?
বৃষ্টি একটা মুচকি হেসে বলল, পল্লব তুই কি আমাকে খুব ভালোবাসিস্?
ভালোবাসি বলেই তো তোর অনেক অবহেলা সহ্য করেছি, প্লিজ তুই আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা কর।
পল্লব আমাকে কয়েকদিন সময় দিতে হবে, বলে বৃষ্টি মনে মনে বলল, দিলাম তো একটা প্যাচকি লাগাইয়া।
বৃষ্টি আমরা এক বছর থেকে একসঙ্গে লেখাপড়া করছি, মেলামেশা করছি তোকে আমার ভালোবাসার কথা বলেছি এরপরও কি আমি তোর মনে কোন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারিনি যে সিদ্ধান্ত নিতে তোর সময় লাগছে?
বৃষ্টি মনে মনে বলল, তবুও একটু বাজিয়ে নিতে অসুবিধা কি?
পল্লব জিজ্ঞেস করল, বৃষ্টি কী ভাবছিস্?
পল্লব তুই যা-ই মনে কর না কেন আমাকে কয়েকদিন সময় দিতে হবে। বুঝতেই পাচ্ছিস্ এটা সারাজীবনের ব্যাপার একটু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ক’দিন সময় দিতে হবে?
সাতদিন।
ঠিক আছে তবে সাতদিনের মধ্যে তুই আমাকে জানাবি। আমি আর তোকে রিং করব না।
বৃষ্টি মনে মনে বলল, সাতদিন তুই আমাকে মোবাইল না করে থাকতে পারবি?
পল্লব কিছু বলল না।
চলবে...
এই উপন্যাসটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০১