নীলা সহজে সবকিছু সহজভাবে নিতে পারে না। কোন সুখের কথা মনে পড়লে আপন মনে হেসে উঠে, কোন কষ্টের কথা মনে পড়লে বার বার তার মনে খচ্খচ করে দাগ কাটে তখন সে মুখ ভার করে বসে থাকে। আবার কোন কথা তার কাছে অষ্পষ্ট মনে হলে তার কৌতুহলী মন বার বার করে তা জানার জন্য বিচলিত হয়। সুলতানা নীলার মুখে তার বাবার নাম শুনে কেমন যেন থমকে গিয়েছিল, স্বাভাবিকহতে তাঁর কয়েকমুহূর্ত সময় লেগেছিল। আবার নীলার মুখে তার বাবা সুলতানার নাম শুনে কেমন যেন মুখ বিকৃত করেছিল সবকিছু যেন রহস্যময়, একটা অষ্পষ্টতা। নীলা বিভিন্নভাবে এসব রহস্যের সূত্র উদ্ঘাটনের জন্য উৎসুক হয়েছিল এবং এসব রহস্যের জোট খোলার জন্য চেষ্টা করছিল।
আকাশ নীলাকে নিয়ে ইস্টার্ন প্লাজায় একটা মোবাইলের দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল।
নীলা জিজ্ঞেস করল, আকাশ তুমি আমাকে এখানে নিয়ে আসলে কেন?
একটা মোবাইল সেট কিনব, তুমি পছন্দ করে দিবে।
আমি মোবাইল সেটের কি বুঝব?
তবু তোমার পছন্দের গুরুত্ব অনেক।
দোকানদার অনেকগুলো মোবাইল সেট দেখাল, নীলা একটা মোবাইল সেট হাতে নিল।
আকাশ জিজ্ঞেস করল, এটার দাম কত?
দোকানদার বলল, পনেরো হাজার টাকা।
আকাশ মোবাইল সেটটা হাতে নিয়ে নীলাকে জিজ্ঞেস করল, সেটটাতে ভিডিও আছে, এম.পি. থ্রি, ইন্টারনেট আছে আরো অনেক ফাংশন আছে, সেটটা খুব সুন্দর না?
হ্যাঁ সেটটা সুন্দর কিন্তু দামও তো পনেরো হাজার টাকা, কি করবে এত দামি সেট দিয়ে।
একজনকে গিফ্ট করব, যাকে গিফ্ট করব তার জন্য আমার কাছে টাকা কোন বিষয় না। তার জন্য আমার সামর্থ্য আনলিমিটেড।
বাঃ যার জন্য তোমার সামর্থ্যের অভাব নেই সে নিশ্চয়ই খুব ভাগ্যবান।
ভাগ্যবান না ভাগ্যবতী।
নীলার মুখ কালো মেঘে ঢেকে গেল।
আকাশ নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, নীলা রাগ কর না প্লিজ, একটা মোবাইলে তো, না হয় বাবার টাকা থেকে কিছু দিয়ে দিলাম।
না তোমার টাকা তুমি যাকেই দাও না কেন তাতে তো আমার কিছু বলার নেই। আমি তোমার এমন কেউ না যে আমি বললেই তুমি শুনবে। তবে আমি মনে করি মোবাইল কথা বলার জন্য, ভিডিও দেখার জন্য না, কাজেই মোবাইল সেট দিয়ে কথা বলা গেলেই হয়।
নীলা তুমি বুঝতে পাচ্ছ না সে আমার কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ।
ঠিক আছে বুঝলাম, তুমি যা খুশি কর আমি আর দেরি করতে পারছি না।
প্লিজ নীলা একটু সময় দাও। এই যে দোকানদার ভাই একটু কম রাখা যায় না?
আপনি চৌদ্দ হাজার পাঁচ’শ টাকা দেন।
আকাশ টাকা বের করে দিয়ে বলল, মামা একটা সিমকার্ড দেন।
দোকানদার অনেকগুলো সিমকার্ড বের করে দিল।
আকাশ একটা নাম্বার চয়েজ করে দিয়ে বলল, এটা দিন।
দোকানদার সিমকার্ডের ফরম পূরণ করে সিমকার্ডটা একটিভ করে দিল।
আকাশ আর নীলা ইস্টার্ন প্লাজা থেকে বের হয়ে একটা রিক্সায় চেপে বসল।
নীলা জিজ্ঞেস করল, আকাশ আমাকে হল-এ যেতে হবে।
নীলা আমরা একসঙ্গে লাঞ্চ করব।
নীলা রাগান্বতিস্বরেবলল, যার জন্য মোবাইল কিনেছ তাকে নিয়েই লাঞ্চ কর। আমাকে হল-এ যেতে দাও।
নীলা প্লিজ রাগ কর না। একসঙ্গে লাঞ্চ করার পর তুমি চলে যাবে, আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসব।
আমাকে নামিয়ে দিয়ে আসতে হবে না, আমি একাই যেতে পারব।
এমনিভাবে কথা বলতে বলতে রিক্সা শাহবাগ মোড়ে এসে দাঁড়াল। আকাশ রিক্সা থেকে নেমে একটা ফুলের দোকানে গিয়ে একটা ফুলের তোড়া কিনে এনে আবার রিক্সায় উঠল।
নীলা জিজ্ঞেস করল, আবার ফুল কেন?
আকাশ কোন কথা বলল না। কিছুক্ষণের মধ্যে রিক্সা রমনা রেস্টুরেন্টের গেটে এসে দাঁড়াল। দু’জনে রিক্সা থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে ঢুকল।
রেস্টুরেন্টের শেষ প্রান্তের এক কোণায় আকাশ নিজে একটা চেয়ারে বসে নীলাকে তার মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসতে বলল।
নীলা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, আকাশ আমি কিন্তু তোমার সঙ্গে কিছু খাব না এবং এই দেখাই তোমার সঙ্গে আমার শেষ দেখা, তুমি যার জন্য মোবাইল সেট কিনেছ, ফুলের তোড়া কিনেছ আবার কোনদিন এখানে আসলে তাকে নিয়ে আসিও।
আকাশ ফুলের তোড়াটা নীলার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, নীলা আজ থেকে এক বছর আগে আমাদের দেখা হয়েছিল তাই আজকের দিনটাকে উপভোগ করার জন্য আমি এতকিছু আয়োজন করেছি, মোবাইল, ফুলের তোড়া সবকিছু তোমার জন্য।
আকাশ!
প্লিজ নীলা, তুমি না কর না।
নীলা হেসে উঠল, থ্যাংক ইউ আকাশ, তুমি আসলে পার সবকিছু।
অনেকদিন থেকে ভাবছিলাম তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিব কিন্তু কোন ইস্যু খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই আমি আজকের এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আকাশ প্রাইজ লিস্টটা নীলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, নীলা কী খাবে?
তোমার যা ইচ্ছা।
আকাশ অর্ডার দিয়ে আবার বলতে শুরু করল, নীলা আসলে তোমার সঙ্গে আমার সবসময় কথা বলতে ইচ্ছা করে, বিশেষ করে তুমি যখন গ্রামের বাড়ি গেলে তখন তোমার সঙ্গে কথা বলতে আমার খুব ইচ্ছা করছিল কিন্তু কী করব তোমার কাছে মোবাইল ছিল না তাই তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।
তুমি কি এই মোবাইল সেট আমার জন্য কিনলে?
হ্যাঁ।
কিন্তু আমি যে এটা নিতে পারব না আকাশ।
কেন?
বাবাকে কী জবাব দেবে?
এখানে জবাব দেওয়ার কী হলো? তুমি এখন ভার্সিটিতে পড়ছ তোমার কোন ফ্রেন্ড তোমাকে কিছু গিফ্ট করতেই পারে।
আকাশ তুমি জানো না বাবা কী রকম প্রিন্সিপালের মানুষ?
প্লিজ নীলা তুমি না কর না, পরে কী হবে দেখা যাবে।
তুমি আমাকে আগে বললে না কেন আকাশ?
তোমাকে সাপ্রাইজ দেয়ার জন্য।
নীলা কয়েকমুহূর্ত আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, আকাশ তুমি আমাকে এত ভালোবাস? কোনদিন যদি আমি তোমার কাছে না আসতে পারি তখন কী করবে?
আকাশ জিজ্ঞেস করল, নীলা কী ভাবছ?
আচ্ছা আকাশ তোমার নানার বাড়ি কোথায়?
নজিপুর।
আর তোমার দাদার বাড়ি?
একই উপজেলায় তবে দাদার বাড়ি নজিপুর থেকে পুর্বদিকে আর নানার বাড়ি পশ্চিম দিকে।
ততক্ষণে খাবার চলে এসেছে। আকাশ নীলাকে একটা প্লেট এগিয়ে দিতে দিয়ে বলল, নীলা শুরু কর।
নীলা তার প্লেটে খাবার তুলে নিতে নিতে বলল, আকাশ তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করব, তুমি কিছু মনে করবে না তো?
নীলা তুমি এতদিনেও আমকে চিনলে না। আমার সঙ্গে কথা বলার সময় এত ফরমালিটিস করার কোন দরকার নেই। যা বলার কোন হেজিটেশন ছাড়াই বলে ফেল।
না থাক আর একদিন বলব।
নীলাকে ব্যাগ হাতে রুমে ফিরতে দেখে মোহনা বলল, কী রে এত ব্যাগ-ট্যাগ কেন? খুব শপিং করলি বুঝি?
না শুধু একটা মোবাইল সেট।
দেখি দেখি কেমন মোবাইল সেট? বলে মোহনা তার চেয়ার থেকে উঠে নীলার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে মোবাইল সেটটা বের করল, ওয়াহ, খুব সুন্দর সেট তো? কত দাম হলো রে?
চৌদ্দ হাজার পাঁচ’শ টাকা।
এত টাকা দামের সেট, আকাশ দিয়েছে নিশ্চয়ই?
হ্যাঁ।
তবে শুধু আমাকে বলিস্ কেন?
কী বলি তোকে?
নীলা হৃদয়ের সঙ্গে আমার ফ্রেন্ডশীপ নিয়ে তুই আমাকে অনেক ক্রিটিসাইজ করেছিস্, এখন তো দেখি তুই-
নীলা রাগান্বিত চোখে মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল, মোহনা হৃদয়ের সঙ্গে তোর ফ্রেন্ডশীপ আর আকাশের সঙ্গে আমার ভালোবাসা এক বিষয় না।
এক বিষয় না কেন?
কারণ আকাশ আমার বান্ধবীর রিলেটিভ, স্টুডেন্ট, আমাদের বয়স, পেশার মধ্যে সিমিলারিটি আছে, আর হৃদয়ের সঙ্গে তোর পরিচয় হয়েছে মোবাইলে, তুই হৃদয়ের কোন ঠিকানা পর্যন্ত জানিস্ না। তাছাড়া তোদের বয়সের ডিফারেন্সঅনেক। দেখ্ ঘরে বউ রেখে তোকে অ্যানম্যারিড বলছে নাকি?
নীলা সেকেলে কথা বলবি না। টেকনোলোজি ডেভলাপ করেছে এখনো কারো সঙ্গে ফ্রেন্ডশীপ করার জন্য কাউকে না কাউকে মিডিয়া বানিয়ে তার মাধ্যমে পরিচিত হতে হবে এমন কথা না। তোর সঙ্গে আকাশের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি, আমি হৃদয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি মোবাইল ফোনে। এখানে তো কোন তফাৎ নেই, আর হৃদয়ের বউ আছে কি না বলছিস্ আমি তো তোকে আগেই বলেছি আমি শুধু হৃদয়ের সঙ্গে ফ্রেন্ডশীপ করছি, প্রেম বা বিয়ে কোনটাই না।
নীলা কোন কথা বলল না।
মোহনা মুচকি হেসে বলল, তোর সেটটা খুব ভালো রে, আকাশের পছন্দ আছে, তুই যেমন আকাশের ওপর নির্ভর করতে পারছিস্ আমি যদি সেরকম দায়িত্ববান কাউকে পেতাম-
কেন তোর তো অনেক বন্ধু আছে।
বললাম তো, দায়িত্ববান যদি কাউকে পেতাম, আসলে সবাই শুধু আমার সৌন্দর্য্যের দিকে তাকায়, মনের দিকে তাকায় না। নীলা আকাশের সঙ্গে তোর বিয়ে হলে তুই খুব সুখী হবি।
মোহনা কথায় বলে জন্ম -মৃতু-বিয়ে সব আল্লাহর হাতে, দোয়া করিস্, আল্লাহ যেন তোর দোয়া কবুল করেন।
চলবে...
এই উপন্যাসটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০১
আমার সব লেখা একসাথে পড়তে ক্লিক করুন:আমার ওয়েব ঠিকানা
আমার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান:আমার ফেসবুক ঠিকানা