অনেক সন্ধ্যেবেলারা আমার ভুল করে কেটে গেছে
তাদেরকে আমি ছুঁয়েও দেখিনি
নিজেকেও মাখতে দেইনি তাদের এক ফোঁটা রঙ।
আজকের সন্ধ্যায় ঘুম-মাখা ছানি-পড়া চোখ নিয়ে
পায়ে হেঁটে এসেছিলাম বড় রাস্তার মোড়ে
জিহ্বার কাছে নৈমিত্তিক রূটি মাখনের নিবেদন শেষে
ঘোষ ডেয়ারীর অলস দরজায় দাঁড়িয়ে
বৃষ্টি আর সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারের দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে
অসহায় দৃষ্টি নিয়ে অঘোষিত মানববন্ধনে
উন্মুখ পথচারীদের দেখে আমার মনে হয়ে গেলো-
এইতো সুযোগ!
পকেটে, মার্কিন ক্রেতাকে ফাঁকি দিয়ে অথবা
পোলিশ ক্রেতার জোচ্চুরি সামলে কেনা
আমার অতিপ্রিয় দরিদ্র সেলফোন!
তার কথাও তো ভাবতে হবে-
তাই দুটো দোকানে পরপর বিমুখ হওয়ার পরে
তৃতীয় দোকানীর কাছে পাওয়া গেলো দূর্লভ সেলোফেন,
আদৃতা ঘোড়ারোগটাকে তাতেই জড়িয়ে মনকে প্রবোধ দিলাম-
এতেই চলে যাবে!
কোনও টাকা পয়সা চাইলোনা দোকানী,
তাই এখনই সময়, বুঝে,
অন্যান্য পথচারীদের অনিচ্ছার দেয়াল গলে
নেমে পড়লাম বর্ষার রাস্তায়।
বড় বড় বৃদ্ধ ফোঁটারা আমার সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধে
টি-শার্ট ভেদ করে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চাইলো-
যদিও আমি জানি কেন আমি বৃষ্টিতে নেমেছি!
কেন আমি মানিব্যাগের বঙ্গবন্ধুর ছাপ দেয়া ইউরো-সদৃশ্য
রঙিন বাস্তব নোটগুলোকে টেনে নামিয়েছি বৃষ্টির জলে!
সন্ধ্যার এই বারঙ্গনা পিচের রাস্তায় আজ আর কেউ নেই
তার বুকের কাঁকর দু:খগুলো তাই ক্লান্ত হাটুরেকে ছেড়ে
আমার পায়ের তলায় ঢুকে আমাকেও সমব্যথী করে ফেলতে চায়-
আমি ভালোবেসে মেনে নিই বৃষ্টির আশির্বাদের সব উপজাতকেরে।
তারপর, আমি ছাড়া সব কিছু মৃত মনে হয়;
ঠান্ডার কাঁপনে রোমগুলোর উদ্ধত জৈবিক উল্লাসের কাছে
আমাকে অপাঙক্তেয় ভাবা শুকনো স্থির পথিকেরা অবশ্যই মৃত!
দিগন্তের নির্লিপ্ত শান্তি ভেসে আসে সন্ধ্যার প্রগাঢ় বাতাসে-
কাঁধ বেয়ে নেমে এসে হাতের মুঠোর মধ্যে জমা হয়
আমি মুঠো খুলে দেই- আকাশের কাছে এর চেয়ে বেশি
মানুষ আর কী চাইতে পারে?
কংক্রিট আর ইস্পাতের ফোকলা দাঁতের হাসির নিচ দিয়ে
ফিরে যেতে চাই কর্তব্য-অকর্তব্যের দিকে-
রাস্তায় সাদা হরফের উচ্চাকাঙ্খা অথবা অশ্লীলভাবে পাতাকাটা
গাছগুলো আজ বৃষ্টির জন্যই হয়তো জুতোর ধুলো
আর নিয়ত উপেক্ষা থেকে রেহাই পেয়েছে!
তারপরও সন্ধ্যার এই তিলোত্তমা পিচের রাস্তায়,
বৃষ্টির নিচে, আমি একা।
আমার তীব্র বেদনা এই, নিভে যাওয়া স্ট্রীট ল্যাম্পের নিচে
দাঁড়িয়ে- এই বৃষ্টিতে- চুমো খাওয়ার মতো
একজনও উষ্ণরক্ত যুবতী আজ চিন্ময়ী হয়ে ওঠেনি।
এখনও এই নির্বিরোধ বৃষ্টির নিচে, ভরাট রাস্তায়
আর কেউ নেই।
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:০৪