পত্রসাহিত্যে আগ্রহের কারণ আমার অনেক। মূল কারণটা বোধ হয় এর ব্যক্তিগত আবেদন। চিঠি আগেও লিখতাম এখনও লিখি, হয়তো ভবিষ্যতেও লিখবো। এই 'না পাঠানো চিঠি' গুলো বিরহপত্র নামেই চলতে পারে।
__________________________________________________
প্রতীতি,
কেমন আছো চালতে পাতা?
ভোর সরে সরে সকাল হয়ে যায় তার পরও যেন আমার ঘুম ভাঙতে চায় না। রাতজাগা বা আলসেমি কোনওটাকেই আমি কারণ হিসেবে দেখাতে চাই না। তবে একটা কারণ আমি দেখাতে পারি, বড়ই আজব কারণ!
ঘুম শুরু হয় মাঝরাত পেরিয়ে গেলে যখন বাইরের গাছেরা কেবল ঠায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে নি:শব্দে শ্বাস ফেলে তখন। আমার মনে হয় গাছ গুলো সারাদিন রোদ সয়ে তাদের সর্বংসহ শরীরের আত্মতৃপ্তিতে মুখ গম্ভীর করে আধখোলা চোখে নিজের মধ্যেই গর্বের ফেনা কাটছে।
ঘুম যেতে থাকে ট্রেনের মতো, থাক্ থাক্ শো শো, স্থির এক ছন্দে। এই সমাধি ততক্ষণই টেকে যতক্ষণ না স্বপ্নে ডাকাত এসে ছুরি দিয়ে খোঁচা মারে আমার ঘুম-ট্রেনের জানালায়।
আমি দেখি তোমার মত মুখ মোমবাতির আলোর পেছনে ঝাপসা হয়ে আছে। আমরা বসে আছি কাছাকাছি, কিন্তু আমি যখন স্পর্শ করে নিশ্চিত হতে যাই যে তুমি সত্যিই আছো আমার সাথে ছোট টেবিলের অপর প্রান্তে, তখনই যেন, অসীম রেল লাইনের মতো টেবিলটাও দীর্ঘ হতে শুরু করে। আমি হেঁচড়ে উঠি টেবিলের পাশ ধরে। তোমার হাসি মাখা মুখ নির্বিবাদে মোমবাতির আলোর পাশের তুলোর মতো অন্ধকারে হারিয়ে যেতে থাকে। আমার মধ্যে বিদ্রোহের ঢেউ ফনা তুলতে শুরু করে, ক্রোধে টেবিলটা তুলে আছড়ে ফেলতে চাই। টেবিল যায়, মোমবাতি যায়, তারপর কংক্রিটের স্তব্ধ অন্ধকারে আমি আর কাউকে খুঁজে পাই না।
রেল লাইনের পাশের বিদগ্ধ গাছের দল কোনও জবাব দিতে পারে না। আমি ঘেমে যাই, ঘুমের ট্রেনে শিকল পড়ে। এর পর ঘুমানো কঠিন।
তাই ভোরের পরে যখন একটা একটা করে সূর্য রশ্মির শলাকা চোখে এসে বিঁধতে থাকে কপাটহীন জানালা দিয়ে; তখনও অনুভূতিরা সাড়া দিতে চায় না। শীতল পাথরের নিচে শুয়ে থাকার মতো সকালের অপেক্ষায় ঐ সব জ্বালাতুনে রশ্মিদের সহ্য করে যাই।
তুমি যত দূরে হয়তো আমার স্বপ্নের দৌড়েরও সেই সীমা। মনে রেখো দেখা হবে।
কৌশিক
___________________________________________________
পোস্টের উৎসর্গপত্র:
আরজুপনি দিদিমনি,
বলেছিলেন আমার নিমন্ত্রন রাখবেন, রাখেন নি।