গত ৫ই আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের ক্ষমতা ছেড়ে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে পালিয়ে আপাতত ভারতে আশ্রয় নিয়ে নিজের ও ছোট বোনের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন । যদি ও শেখ হাসিনা তথা আওয়ামিলীগের নেতৃত্বে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরশাসকদের হঠাতে জীবন দিতে হয়েছে হাজারেরও বেশি মানুষকে পঙ্গুত্ব বরন করেছে হাজার হাজার মানুষ। শেখ হাসিনা এক রক্তপিপাসু হয়ে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে চেস্টা করেছিল তা ক্ষমতার মসনদ ঠিক রাখতে। কিন্তু বাংলাদেশের আপমর জনমানুষের সাহস ও ত্যাগের কাছে পরাভূত হয় শেখ হাসিনার ক্ষমতার লালসা। আপাতত কবর রচিত হয় বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর ইতিহাসে আরো এক স্বৈরশাসকের। জানিনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন অত্যাচারী স্বৈরশাসকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এত জীবননাশ হয়েছে কি না? শেখ হাসিনার পতনের পর তার দুর্দান্ত প্রতাপশালী দোসারেরা অধিকাংশ গা-ঢাকা দিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছেন, কেউ কেউ আবার পরিবার পরিজন নিয়ে বিদেশে পলিয়েছেন, কেউ আবার বিদেশে পালানোর সময় আটক হয়েছেন কেউ আবার পাশ্ববর্তী দেশের পালায়নের সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত ও হয়েছেন। শেখ হাসিনা তথা আওয়ামিলীগ ও ১৪ দলীয় জোট গত সাড়ে পনের বছর জোর করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে এহন কোন অপকর্ম নাই যে না করেছেন। আজ আমি যেই কথা গুলি বিনাদ্বিধায় লিখতে পরছি আজ থেকে মাত্র কায়েক দিন আগে অর্থাৎ শেখ হাসিনার পতনের আগে ও লিখার সাহস দেখানোর মত ক্ষমতা আমার ছিল না। আর সেই ক্ষমতা না থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। গত পনের বছরে শুধু স্বাধীন মুক্তমত ও বাকস্বাধীনতা প্রকাশের জন্যই অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, অনেককে গুম হয়ে তথাকথিত আয়নাঘরের বাসিন্দা হতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা ও তার দোসররা খুবই ভাল করেই জানতেন তাদের এই স্বৈরশাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। তাই ক্ষমতায় এসেই প্রথম যেই কাজটা পরিকল্পিত ভাবে করেছে তা হলো বিভিন্ন কালো আইনের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ। এর পর ই শুরু হয় গুম, হত্যা। আমি আগেই বলেছি গত পনের বছর শেখ হাসিনার জোট সরকার ক্ষমতা দখল করে রেখে রাষ্ট্রের এহেন কোন বিভাগ নাই যে ধ্বংস করে নাই। দেশের অর্থনীতি আজ প্রায় ধ্বংস। যেহেতু অর্থনীতির কথাই আসলো তা হলে এই অর্থনীতি নিয়েই একটু বলি। যদি ও আমি কোন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ না বা অর্থনীতি নিয়ে আমার তেমন কোন ধারনা নেই তার পর ও পত্র-পত্রিকা যতটুকু ধারনা পাই তা থেকেই বলছি। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের অবস্হা কি তা অধিকাংশের জানা। একটু বড় অংকের টাকা উত্তোলনের জন্য অনেক ব্যাংকেই দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। যদি ও এই বিশেষ মুহুর্তে বর্তমান সরকার টাকা উত্তোলনের একটা পরিমান বেঁধে দিয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যাংক গুলিতে শেখ হাসিনা এক ধরনের হরিলুট চালিয়েছেন। চর দখলের মত একের পর এক ব্যাংকের মালিকানা অবৈধ ভাবে দখল করে নিয়ে নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের হাতে তুলি দিয়েছেন ব্যাংকগুলির কতৃত্ব। শুধু মাত্র চট্রগ্রামের খাতুনগঞ্জের ভুষিমালে ব্যবসায়ী সেই সাথে পরিবহন ব্যবসায়ি হিসেবে একসময় পরিচিত এস আলম গ্রুপের হাতেই তুলে দিয়েছিলেন দেশের শরীয়া ভিত্তিক নয়টি ব্যাংকের মালিকানা। তার মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক জামাত-শিবিরের ধোঁয়া তুলে এস আলম গ্রুপের হাতে তুলে দেন শেখ হাসিনা। আর এই এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংক থেকে নামে বেনামে অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকা সব বিভিন্ন ব্যাংক মিলিয়ে ২ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে যার প্রায় পুরোটাই এস আলমের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ, বেক্সিমকোর সালমান এফ রহমান, সামিট গ্রুপের আজিজ খান ও তার ভাই ফারুক খান , সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মত এমন বেশ কয়েকজন ছিলেন শেখ হাসিনার পরিবারের বিশ্বস্ত ক্যাশিয়ার। যাদের মাধ্যমে দেশের টাকা লুট করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে পাচার করে দেশকে আজ একটি ফাপা বেলুনে পরিনত করে আমাদের এক অস্থিরতার মধ্যে রেখেছে । শেখ হাসিনার সরকার সেই ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে শেয়ার বাজার লুট করে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দিয়েছিল এর পর ২০০৮ সালে ও ক্ষমতায় এসে একই ভাবে লুটে নিয়েছে শেয়ার বাজার তার পর সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক গ্রুপের চার হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি। রাজনৈতিক বিবেচনায় অদক্ষ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় একের পর এক ব্যাংক। অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। নুতন করে দেয়া হয় ব্যংকের লাইসেন্স যেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ সব লীগের নেতারা নেমে পরেন ব্যাংক ব্যবসায়। দেশ ও জনগনের টাকা নিয়ে শুরু হয় তশ্রুপ।
এর পর একে একে নানান ভাবে শেখ হাসিনা ও তার দোষরেরা পুরো দেশ ই লুট করে কারো নাম বসিয়েছে সিংগাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় কেউ কেউ কানাডা আমেরিকা দুবাইতে আমির হয়ে বসে আছেন। দেশের অর্থনীতিকে কতটুকু সর্বনাশ করলে শেখ হাসিনা নিলজ্জের মত সংবাদ সম্মেলনে বলতে পারেন তার পিওন ও নাকি চারশত কোটি টাকার মালিক হেলিকপ্টার ছাড়া চলেন ই না। শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যই প্রমান করে যে শেখ হাসিনা তার পরিবার ও তার দোষররা কত পরিমান অবৈধ অর্থ সম্পদের মালিক? অথচ এই দেশের ই সাধারন যুবকেরা তাদের পরিবার পরিজনদের একটু ভাল রাখার জন্য ইউরোপে পারি দিতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধিত হন আমেরিকায় পারি দিতে গিয়ে পানামা বা কলম্বিয়ার ডরিয়েন গ্যাপে কংকাল হয়ে পরে থাকেন। আর মধ্যপ্রাচ্য সহ অন্যান দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা না হয় নাই বা বললাম। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি নতুন স্বপ্নের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আবার দেশকে দেশের মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। জানিনা এই স্বপ্ন কতটুকু পুরন হবে? ১লা জুলাই ২০২৪ তারিখে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুত্রপাত তখনো এই আন্দোলন চূড়ান্ত পরিনতি যে দেশের মানুষের উপর চেপেবসা দানবীয় স্বৈরশাসকের বিদায় তা কেউ হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি। তবে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের এই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতা ছাড়তেই বাধ্য হন নাই নিজের জীবন রক্ষায় পালাতে বাধ্য হয়েছেন। যেই শেখ হাসিনা দম্ভ করে বলেছিলেন যে শেখ হাসিনা পালায় না। যদিও তাকে পালানোর সুযোগ যারা করে দিয়েছেন তারা কাজটি যথার্থ ঠিক করেছেন বলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি না। কারন তার এই পলায়নে তিনি দেশে গনহত্যা, গুম, দুর্নীতি সহ যে নানান অপকর্ম করেছেন তার বিচারের রায় কিভাবে কার্যকর করা হবে বা আদৌ কি তাকে দেশে এনে যথাযর্থ শাস্তির ব্যবস্হা করা যাবে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর পরই আমাদের দেশ শেখ হাসিনার বড় মিত্র ভারতের জল আগ্রাসনের শিকার হয়ে হঠাৎ বন্যায় আক্রন্ত হয়ে বহু জান ও মালের ক্ষতি সাধন হয়েছে। আর এই বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের আপামর জনসাধারণ তাদের পুরো সামর্থ্য নিয়ে যেই ভাবে ঝাপিয়ে পরেছে তা সত্যি আমাদেরকে আশান্বিত করছে। শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের তিন দিনের মাথায় অর্থাৎ ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহন করেন। যার নেতৃত্বে আছেন বিশ্বের আইকন বাংলাদেশের গর্ব নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মত এক জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিকে রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে পাওয়া আমাদের জন্য সত্যিকারের ই সৌভাগ্য। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে শুধু মাত্র যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ই যে সর্বেসর্বা তেমটি কিন্তু নয়। এই সরকারের মধ্যে এমন ও অনেকেই আছেন যাদের মনের ভিতর পরাজিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার দলের জন্য নমনীয় মনোভাব আছে। যাদের প্রচেষ্টায় ও সহযোগিতায় ২০০৭ সালের এক এগারোর সরকার ভারতের রোড ম্যাপ অনুযায়ী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে জাতিকে দীর্ঘ পনের বছর একটি স্বৈরতন্ত্রের যাতাকলে রেখে পুরো দেশকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এনে দাড় করিয়েছে। জানিনা বর্তমান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থেকে ঐ মানুষ গুলির ভুমিকা কি হবে? তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি যেই ভাবে বর্তমান সরকারের পিছু নিয়েছে তাতে আমাদের ভাগ্য কতটুকু প্রসন্ন হবে সেটা ও একটা প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা আশাবাদী জাতি সেই আশা থেকেই বলতে পারি ছাত্র- জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি যে বৈষম্য দুর করতে আমাদের ছাত্র- জনতা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে আগামীর পথচলাকে মসৃণ করে দিয়ে গেছেন সেই মসৃন পথের পথিক হয়েই আমরা যাতে থাকতে পারি। আর কোন অপশক্তি যেন আমাদের উপর ভর করতে না পারে সেই পথেই এক যোগে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে।