ব্লগিং এ আমার বয়স এক বছর পুর্ন হয়েছে। খুব বেশি একটা পোস্ট করা হয় নাই। মাঝে মাঝে নিকটা ব্যবহার করে কিছু কিছু মন্তব্য করেছি। তবে দিনে একবার করে হলে ও ব্লগে ঢু মারতাম। যাই হোক, সাইকোলজি আমার পছন্দের বিষয় গুলোর মধ্যে একটি। সেই কারনে পত্রিকায় সাইকোলজিক্যাল পাতা গুলো আমি মন দিয়ে পড়ি।বাসায় মাঝে মাঝে দুই একটা ম্যাগাজিন, বই এনে পড়ি। তাই ঠিক করেছি সাইকোলজি নিয়ে কয়েকটি পোস্ট করব। ব্লগার ও ভিজিটরদেরকে সাইকোলজির অজানা বিষয় গুলো জানানোই আমার উদ্দেশ্য।
ভাল লাগ্লে মন্তব্য দিয়ে অনুপ্রানিত করবেন। আজকের পোস্টটি পার্সোনালিটি নিয়ে।

পার্সোনালিটি বা ব্যাক্তিত্ব মানব জীবনের অমুল্য সম্পদ এবং সফলতার চাবিকাঠি। প্রত্যেক মানুষই পার্সোনালিটি নিয়ে জন্মগ্রহন করে। যেমন একজন খারাপ লোকের যেমন পার্সোনালিটি আছে তেমনি একজন মন্দ লোকের ও পার্সোনালিটি আছে। প্রার্থক্য এতটুকুই দুই জনের পার্সোনালিটি দুই ধরনের। এক কথায় বলা যায় যে, ব্যক্তির আচরনের গুন যা তার চিন্তার ধরন ও প্রকাশভঙ্গি,মনোভাব ও আগ্রহ, কাজের প্রক্রিয়া তথা তার সম্পুর্ন জীবন দর্শনে প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় পার্সোনালিটি।
প্রত্যেকটা মানুষই স্বতন্ত্র পার্সোনাটির অধিকারী। হয়ত তাদের মাঝে কিছু বৈশিষ্ট্যের মিল থাকবে। এই বৈশিষ্ট্য গুলোকে নিয়েই বিজ্ঞানিরা পার্সোনালিটিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেন-
বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন ভাগে পার্সোনালিটি কে ভাগ করেছেন-তার মধ্যে সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী কার্ল ইয়ং এর ভাগটি আমার বেশি ভাল লেগেছে।
বিজ্ঞানী ইয়ং পার্সোনালিটিকে ভাগ করেছে দুই ভাগে-
১) অর্ন্তমুখী ব্যক্তিত্ব বা Introvert personality
২) বর্হিমুখী ব্যক্তিত্ব বা Extrovert personality
অর্ন্তমুখী ব্যক্তিত্ব
• এ ধরনের মধ্যে ক্ষোভ কম
• উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতামুলক ভাব কম
• জুয়ার প্রতি বা লটারির প্রতি এদের আকর্ষন নেই।
• এরা শৃঙ্খলিত জোবন পছন্দ করে
• এ ধরনের লোকেরা শান্ত প্রকৃতির
• হৈ হুল্লোড় পছন্দ করে না।
• এসব লোক আবেগ তাড়িত নন হঠাত করে রেগে যাওয়া এদের বৈশিষ্ট নয়।
• চট করে কোন কাজে বসা এদের বৈশিষ্ট্য নয়
• এরা কোন কাজ করার আগে আগাম ভেবে নেয় এবং পরিকল্পনা মোতাবেক সেই ভাবে কাজ করে।
• প্রাত্যহিক জীবনে সব কাজকে এরা গুরুত্ব সহকারে দেখে।
• মাঝে মাঝে এদের জীবন নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা মনে আসে।
• এসব প্রকৃতির লোকেদের অল্পসংখ্যক অন্তরঙ্গ বন্ধু বান্ধব থাকে।
• এ প্রকৃতির লোকেরা অন্যদের সাথে আড্ডা দেওয়ার চাইতে একা একা নিরিবিলি বই পড়তে ভালবাসে।

সাইকোলজিস্টদের মন্তব্য এই সব অর্ন্তমুখী ব্যক্তিদের উপর কোন কাজের ভার বা দায়িত্ব দিয়ে নির্ভর করা যায় না।
বর্হিমুখী ব্যক্তিত্ব
• এ পার্সোনালিটির লোকেরা হৈ চৈ আনন্দ উল্লাস করতে বেশি পচন্দ করে।
• এরা অধিক উত্তেজনায় থাকতে ভালবাসে।
• বিয়ে জন্মদিন ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্টানে উপস্থিত থাকাটা এদের বৈশিষ্ট।

• জুয়া বা লটারিতে এরা অধিক আগ্রহী
• এ প্রকৃতির লোকেরা কৌতুকে মজা পায়।
• কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে খুব দ্রুত তার উত্তর দিয়ে দেয় যেন তার কাছে উত্তর রেডি ছিল।
• মনে কোন চিন্ত এলেই এরা সাথে সাথে তা করত লেগে যায়।
• আবেগের নিয়ন্ত্রন করাটা মাঝে মাঝে এদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়।
• কোন কোন ক্ষেত্রে এরা রাগী ও আগ্রাসী হয়ে যায়।
• এসব লোকের বৈশিষ্ট্য হল এরা কাজের যথেষ্ট সময় থাকা স্বতেও এরা একেবারে শেষ মুহুর্তে গিয়ে কাজ করে।
• পড়াশোনার ক্ষেত্রে একা একা বসে নির্জনে বই পড়াটা এদের কাছে একেবারে অপছন্দনীয়
• এ প্রকৃতির লোকেরা সামাজিক আর মিশুক।

• এদের প্রচুর সংখ্যক বন্ধু বান্ধব থাকে।
• এরা কোন কিছুই মিস করতে চায় না।
সাইকোলজিস্টদের মন্তব্য-
কোন ক্ষেত্রে এদের উপর ১০০% নির্ভর করা ঠিক হবে না। কারন এতে নিজেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে বিজ্ঞানী জাঙ্ক উপরোক্ত দুইটি ছাড়া আরো দুই ধরনের পার্সোনালিটির কথা বলেছেনঃ
সেগুলো হল নিউরোসিটিসম ও সাইকোসিটিসম
নিউরোসিটিসম পার্সোনালিটিঃ
• এ প্রকৃতির লোকেরা প্রায়ই বিষন্ন বা মন খারাপে ভুগে থাকে।
• এদের চেহারায় সব সময় দুঃখের ছাপ থাকে
• প্রায় সময়ই এরা উদ্বিগ্ন থাকে।
• এ প্রকৃতির লোকেদের প্রায়ই ঘুমের সমস্যা থাকে।
• এদের বেলায় পেটব্যাথা, পেপটিক আলসার, আজীর্নতা বেশি পরিমানে দেখা যায়।
• এরা বেশি আবেগ দেখিয়ে থাকে।
• অতিরিক্ত আবেগ প্রবন্তা জন্য এদের আশে পাশের মানুষজন ও পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়।
সাইকোসিটিসম পার্সোনালিটিঃ
• এ ধরনের লোকেরা কিছুটা জালিম প্রকৃতির।
• এদের মধ্যে মানবতা বোধের যথেষ্ট অভাব থাকে।
• এদের অনুভূতই কিছুটা কম।
• পরের ব্যাথা যন্ত্রনা আকুতি মিনতি এদের কাতর করতে পারে না।
• এদের ব্যাবহার আচার আচরনে বাস্তবাদিতার ঘাটতি থেকে যায়।
• এরা নানা কাজে ঝুকিকে একেবারে অগ্রাহ্য করে।
• যে কোন জায়গায় যতার্থভাবে নিজেকে এডজাস্ট করতে এদের খুব সমস্যা হয়।
• এ টাইপের লোকেদের কখনো কখনো তাদের প্রিয় মানুষটির উপর আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ করে।
• আশেপাশের লোকদের প্রতি এরা কখনও দ্বায়িত্ব দেখায় না।
(পরের পোস্টটি করা হবে বিভিন্ন রকম পারর্সোনালিটি ডিসোর্ডার নিয়ে)