somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বনু মুস্তালিক যুদ্ধ, আযলের হাদিস ও জুওয়ায়রিয়া বিনতে হারিস (রাঃ) এর সাথে রাসূল ﷺ এর বিয়ে নিয়ে ইসলাম বিদ্বেশীদের মিথ্যাচার আর কতদিন?

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাযওয়া মুরাইসি ও বনু মুস্তালিক গোত্র:
বনু মুস্তালিক ছিল খুজায়া আযদিয়া ইয়ামানিয়া গ্রোত্রের একটি শাখা। মক্কার অন্যান্য গোত্রের মত রাসূল ﷺ তাদের নিকটেও ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেন। ৩য় হিজরীর ওহুদ যুদ্ধের ইতিহাস কারোরই অজানা নয়। ৩০০০ সৈন্যের শক্তিশালী কুরাইশ ও তার মিত্র বাহিনী মাত্র ৭০০ সৈন্যের ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। অসম এই যুদ্ধে তারা মুসলিমদের উপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় ও রাসূল ﷺ কে মারাত্নকভাবে আহত, রক্তাক্ত করে। রাসূল (সাঃ) এর দাঁত ভেঙ্গে যায় ও শিরস্ত্রাণের কিছু অংশ তার মাথায় গেঁথে যায়, বহু সাহাবী আহত হন। এই যুদ্ধে কুরাইশদের বড় শক্তি ছিল বনু মুস্তালিক গোত্র। তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন দলকে একত্রিত করে।যুদ্ধে তারা দূর্বল মুসলিমদের সাথে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করে। ব্যাপক প্রাণনাশ ও ক্ষয় ক্ষতি নিয়ে মুসলিমগণ মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। ক্ষতের দাগ না শুকাতেই ৫ম হিজরীতে রাসূল ﷺ সংবাদ পেলেন, বনু মুস্তলিক সর্দার হারিস ইবনে আবূ দারার অস্ত্রশস্ত্র ও লোকবল ও পার্শ্ববর্তী গোত্রসমূহকে একত্রিত করে মদিনা আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। উদ্বিগ্ন হয়ে ঘটনার সত্যতা যাঁচাইয়ের জন্য রাসূল ﷺ একজন সাহাবীকে গুপ্তচর হিসাবে পাঠান। গুপ্তচর ঘটনার সত্যতা নিয়ে ফেরত আসেন এবং জানান তারা মদিনা আক্রমণের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অতীতের ওহুদ যুদ্ধের দুঃখস্মৃতি ও অভিজ্ঞতা বলে, ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী নিয়ে তাদেরকে মদিনায় ঢুকতে বাঁধা দেয়া ও সম্মুখযুদ্ধের ফলাফল হতে পারে আরেকটি ওহুদ যুদ্ধের পরিণাম। এই ভুলের ক্ষমা নেই কারণ তারা মুসলিম বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে মাটি চাঁপা দিতে পারলেই মদিনায় প্রবেশ করবে এবং অসহায় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধকে নির্বিচারে হত্যা করবে, লুন্ঠন করবে ও জীবিতদের দাস দাসী বানিয়ে নিয়ে যাবে। তাই রাসূল ﷺ একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ঠিক করলেন বনু মুস্তালিক গোত্রের উপর গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করবেন। ৫ম হিজরীর শাবান মাসের কোন এক সোমবারে ৭০০ পতাতিক ও ৩০ জন অশ্বারোহীর একটি ছোট বাহিনীকে নিয়ে তিনি রওনা দিলেন বনু মুস্তালিক পানে। গোপনে মুসলিম সেনাবাহিনী সুবিধাজনক জায়গায় তাদের অবস্হান গ্রহণ করে এবং বনু মুস্তালিক গোত্রের উপর অতর্কিত গেলিরা আক্রমণ চালায় যখন তাদের পশুগুলি পানি পান করছিল। হটাৎ এমন অভিনব আক্রমণে বনু মুস্তালিক দিশেহারা হয়ে যায়। অস্ত্র হাতে তাদের যোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ হানতে এগিয়ে আসে এবং যুদ্ধে দশজন নিহত হয়। কাজেই এই দশজন মোটেও সিভিলিয়ান ছিলনা, তারা ছিল যোদ্ধা। মুসলিমগণ তাদের ধনসম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন এবং তাদের নারী-পুরুষদের বন্দী করেন। বন্দী, নিহতের সংখ্যা, গণীমত ইত্যাদি ব্যাপারে ইবনে ইসহাক ব্যতীত অন্যদের যেসব বর্ণনা রয়েছে, তার প্রায় অধিকাংশই ভুল বর্ণনা। তার মতে, যুদ্ধের পর বনু মুস্তালিকের ১০০ জন লোককে মুক্তি দেয়া হয় যারা যুদ্ধে বন্দী হয়েছিলেন। ৫ম হিজরীর ২৯ রমজান মুসলিমগণ মদিনায় ফেরত আসেন।

জুওয়ায়রিয়া বিনতে হারিস (রাঃ):
এই যুদ্ধে মুসলিমদের হাতে বনু মুস্তালিকের যেসকল নর-নারী বন্দী হন, তাদের মাঝে জুওয়ায়রিয়া বিনতে হারিস (রাঃ) ছিলেন অন্যতম। জুওয়ায়রিয়া বিনতে হারিস (রাঃ) ছিলেন বনু মুস্তালিক গোত্রের সর্দার হারিস ইবনে আবূ দারার এর কণ্যা। মুসাফী ইবনে সাফওয়ান ছিল তার পূর্ব স্বামী যে বনু মুস্তালিকের পক্ষে যুদ্ধরত অবস্হায় নিহত হয়। এ যুদ্ধে জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) বন্দি হয়ে সাবিত ইবনে কায়েস ইবনে সাম্মাত আনসারী (রাঃ) এর দাসীতে পরিণত হন।
ইসলামী আইন যুদ্ধবন্দী নর-নারীকে মুকাতাবা চুক্তির অপশন দেয়। যুদ্ধে বন্দী হবার পর তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয় মুকাতাবা চুক্তি অনুযায়ী সে তার অধিকার অর্জনকারী মালিকের সাথে আলাপ আলোচনা করে উভয়ে সম্মত একটি মুক্তিমূল্য নির্ধারণ করবে এবং দাস/দাসী সেই মুক্তিমূল্য ধীরে ধীরে বা একসাথে পরিশোধ করে নিজেকে মুক্ত করে নিবে।
জুওয়ায়রিয়া বিনতে হারিস (রাঃ) সাবিত (রাঃ) এর সাথে নয় উকিয়া স্বর্ণের বিনিময়ে দাসীত্ব থেকে মুক্তির চুক্তি করেন এবং তিনি স্বীয় মুক্তিপণের ব্যাপারে সাহায্য লাভের আশায় স্বয়ং রাসূল (স) এর নিকট উপস্হিত হন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ ! আমি মুস্তালিক অধিপতি হারিসের কণ্যা জুওয়ায়রিয়া। আমি বিপদে পরেছি, যা দুর করা আপনার জন্য কঠিন নয়। আপনি আমাকে আমার মুক্তিমূল্য পরিশোধে সাহায্য করুন। জবাবে রাসূল (সাঃ) বললেন, হে জুওয়ায়রিয়া! এটা কি উত্তম নয় যে, আমি আপনার মুক্তিমূল্য পরিশোধ করে দেই এবং আমি আপনাকে বিয়ে করি? জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) জবাবে বললেন, হ্যা! এটাই উত্তম।রাসূল ﷺ সাবিত (রাঃ) এর নয় উকিয়া স্বর্ণ পরিশোধ করে দিলেন এবং উম্মুল মুমিনীন হিসেবে নিজ গৃহে জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) কে জায়গা দিলেন। যখন এই খবর মুসলিমদের কাছে পৌছালো যে রাসূল (সাঃ) জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) কে বিবাহ করেছেন, তখন মুসলিমরা অনুশোচনা করে বলতে লাগল, এরা তো এখন আমাদের আত্নীয়, এরা রাসূলের শ্বশুরপক্ষের লোক, এদের কিভাবে আটক রাখা যায়? তারা বিনাশর্তে সকলকে মুক্তি দেন এবং তাদের ফীরে যাবার বন্দোবস্ত করে দিলেন। মুক্তিপ্রাপ্ত লোকজন যখন বনু মুস্তালিক গোত্রে ফীরে গেল তখন তারা গোত্রপতি হারিস ও অন্যান্য মানুষজনের কাছে জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) এর সাথে রাসূল ﷺ এর বিবাহ এবং তাদের প্রতি মুসলিমদের মহানুভবতার কথা বলতে লাগলেন।এমন দৃষ্টান্ত আরবে ছিল অবিশ্বাস্য ও বিরল। মুগ্ধতা ছড়িয়ে পরে গোটা গোত্রের মাঝে। গোত্রপতি হারিস সহ গোটা গোত্রটিই ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে যায়। ফলে কুরাইশরা হারায় তাদের একটি বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু গোত্র এবং মুসলিমরা পায় নতুন একটি ভ্রাতৃপ্রতিম গোত্র। এটাই ছিল প্রকৃত ইতিহাস যাকে হাজার মিথ্যাচার দিয়ে মাটিচাঁপা দেয়া যায়না।
চলবে______________________( ইনশাআল্লাহ)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দীপনের দীপ নেভে না

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯


ছবিঃ সংগৃহীত
আজকে সামুর অন্ধকার ব্লগার নামে খ্যাত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃত্যু দিবস। ২০১৫ সালে আজকের এই দিনে জঙ্গি হামলায় দীপন মারা যান নিজ প্রকাশনীর কার্যালয়ে । যে ছেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×