আমরা নাকি সভ্য? ইংরেজীতে নাকি Civilized বলে? আমরা নাকি সভ্য দেশে, সভ্য সমাজে, সভ্য সময়তে বাস করি? শুনলে আমার হাসি পায়। তবে এই টুকু বলতে পারি আমরা কিন্তু সবাই অসভ্য না । পুরো নঞ (না-বোধক) অসভ্য শব্দটি ব্যাবহার করতে আমারই রুচিতে বাধে?
ছোটবেলা বয়স্ক লোকদের কাছে শুনতাম Man Dung (Cow Dung এর মত করে লিখলাম) স্বপ্নে দেখলে হাতে টাকা আসে। তারপর আমার যখন টাকা দরকার হতো আমি Man Dung স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করতাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন দেখাও হতো না, আর টাকাও আসতো না, কিন্তু বাস্তবে এখন প্রতিদিন আমি আমার বাসা বাড্ডা থেকে গুলশান হয়ে বনানী অফিসে আসি আর রাস্তার আশে-পাশে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনার সাথে ম্যানডাং দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
আমি এক জায়াগায় শুনেছি, আপনার সভ্যতার যাত্রা শুরু আপনার বাথরুম থেকে। আপনি কতটা সভ্য তা আপনার বাথরুম দেখে বোঝা যাবে? আমি মনে করি আমিও এখনো সভ্য হতে পারেনি। কিন্তু আমার সাড়ে তিন বছরের ছেলে আকিব যথেষ্ট সভ্য। কারণ এক দিন তাকে নিয়ে আমি ঘুরতে বের হয়েছিলাম এক শপিং সেন্টারে এসে বল্লো বাবা, আমি হাগু করবো, তাকে সেখানকার এক বাথরুমে নিয়ে গেলাম। বাথরুমের অবস্থা দেখে আমার ছেলেটি বললো , “বাবা, আমি বাসায় যেয়ে হাগু করবো। এখানে করবো না।“ তবে ঢাকার সব শপিং সেন্টারের কথা বলছি না। একটু খেয়াল করি, এই শহরে সর্বসাধারনের জন্য কি পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট আছে? আমি জানি না। পুরুষদের হয়তো লাগে না, আমরা যেখানে খুশি সেখানে বসে যেতে পারি, আর মহিলারা যাবেন কোথায়? হয়তো তারাও বাসায় যেয়ে কাজ সম্পূর্ন করবেন।
আসলে যা বলতে চেয়েছিলাম, আমরা কেউ অসভ্য না। কিন্তু আমরা কি একটু সভ্য হবার চেষ্টা করতে পারি না?
তবে আমরা যে বর্বরতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করছি। তা বোধহয় আমরা কিছু জীবন দিয়ে টের পাচ্ছি। গত ৬ মাসে রাজন, রাকিবের মত কত শিশু-কিশোর যে নির্যাতিত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাচ্ছে তার হিসেব জাতীয় পত্রিকা খুললেই দেখতে পাই। তার সাথে সবচেয়ে জগন্যতম অপরাধ মেয়ে বাচ্চা শিশু র্যাপড যা যুগ যুগ ধরে আমরা উচ্চ-শিক্ষিত, অল্প-শিক্ষিত, সুশিক্ষিত সমাজের সকল শ্রেণীর কা-পুরুষ, কু-পুরুষ কি বীরপুরুষ কি বাড়িতে, কি গাড়িতে, কি অফিসে, বাজারে, যেখানে যে যাকে যেভাবে সুযোগ পাচ্ছি তাকে ভোগ করছি, শুধু কি ভোগ? তার সাথে প্রানটাও গিলে ফেলছি। আমাদের সমাজে এখন বাবা নাকি ১৪/১৫ দিনের শিশুকে হাসপাতালের ৬ –তলা থেকে ফেলে দিচ্ছে। সেই ছোট বেলা থেকে একটা ভাব সম্প্রাসরণ করে আসছি, “বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।“। মানলাম আমাদের সুন্দরবনের বাঘেরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গে বেড়াতে গেছে। কিন্তু মায়ের গর্ভে থাকা শিশুটি কেন নিরাপদ নয়?
আমরা যে কত দেশ প্রেমিক? এখন আমাদের দেশে ক্রিকেট খেলা হলে বুঝতে পারি। সবাই জাতীয় পতাকা হাতে অথবা মাথায় বেধে মাঠে চলে যাই। নিজেদেরক সাজাই হলুদ-সবুজ – লাল রঙ্গে। কি অফিস, কি হাটে-বাজারে, কি রাস্তার চায়ের দোকানে টিভি অন করে সারা দিন টি-২০ তো অব্শ্যই, ৫ দিনের টেস্ট খেলা দেখতেও ভুলে যাই না? জিতে গেলে রুবেল, মুস্তাফিজ, তাসকিনদের সাথে সেলফি তুলি। আর হেরে গেলে কারো বোন বা কারো বউকেও এমনকি কারো বাপ-চাচা, পরিবার চৌদ্দ গোষ্ঠীকে গাল মন্দ করতে দ্বিধা করি না। জানি না, আমাদের মত অন্যকোন দেশের মানুষ দেশকে এত ভালোবাসে কি না? কে জানে? আমরা নাকি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি? রক্ত দিয়ে, লক্ষ প্রান বিসর্জন দিয়ে এবং মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছি? হয়তো আমরা প্রশ্ন শুনে, আমাকে রাজাকার অথবা পলাশীর সেই মীরজাফর বলে গালি দিচ্ছেন? কারণ আমি প্রশ্ন তুলছি? আমরা নাকি সভ্য? আমাদের সমাজ নাকি সভ্য? আমরা নাকি সিভিলাইজড সমাজে বাস করছি? এখনকার সময় নাকি সভ্য? আমদের দেশ নাকি সভ্য? আমরা নাকি দেশকে ভালোবাসি? আমরা নাকি দেশ-প্রেমিক? আমরা নাকি মুক্তিযুদ্ধের ধারক ও বাহক ? নাকি আমরা সবাই জঙ্গী, নাকি আমরা সবাই মৌলবাদী?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:২৪