- বিক্রমাদিত্য আছে?
- আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না ।
- আমি পরী...
- পরী?
- আমার পুরো নাম পরিনীতা । উনাকে বললেই হবে, উনি আমাকে দেখলেই চিনবেন ।
- আসুন, ভিতরে এসে বসুন ।
পরী ড্রয়িং রুমের সোফাতে এসে বসে । এদিক ওদিক ভালো করে দেখে, ছিমছাম গোছানো একটা ফ্ল্যাট । রুমে অদ্ভুত একটা স্মেল, লো টোনের লাইটিং, বাদামী দেয়ালে বাধাই করা স্কেচগুলো, বুকশেল্ফ ভর্তি বই, সবকিছু দেখে একটা ভালো লাগা কাজ করছিলো ওর । প্রেসক্রিপশন এর কাগজ টা হাতে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসলাম । এসে রীতিমত 'থ' ।
- আপনি আমার বাসা চিনলেন কিভাবে?
- (সোফা ছেড়ে উঠে) শুনলাম আপনি নাকি পরিনীতাকে নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছেন?
মুচকী হাসলাম । প্রেসক্রিপশন এর কাগজটা পকেটে রেখে দিয়ে পাশের সোফাটাতে গিয়ে বসলাম । ওকে খুব ভালো ভাবে খেয়াল করলাম । কপালে ছোট্ট করে একটা হলুদ টিপ, সাদা রঙ এর ব্লাউজের সাথে ম্যাচিং করে হলুদ একটা শাড়ি, আর খোলা চুল । ভালো লাগছিলো বেশ । বললাম,
- উপলক্ষ্য কিসের?
- উপলক্ষ্য মানে?
- শাড়ি পড়ার ।
- ওহ । তেমন কিছু না । শাহবাগের দিকে গিয়েছিলাম হাটতে হাটতে । পরে ভাবলাম আপনার সাথে একটু দেখা করে যাই ।
- বাসা চিনলেন কিভাবে?
- আরে আজব তো! আপনি তো দেখছি সবই ভুলে গেছেন!
- মানে?
- একদিন হাটতে হাটতে আপনার বাসার নিচ পর্যন্ত আগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম, মনে নেই?
- (হেসে দিলাম) ওহ আচ্ছা, হ্যা, মনে পড়েছে । অদ্ভুত আপনি, সব মনে রাখেন ।
টুকু (আমার কাজিন) এসে কফি দিয়ে গেলো দুজনকে । পরী খুশি হলো বেশ, বললো,
- খুব কফি খেতে ইচ্ছে করছিলো । (টুকু কে) থ্যাঙ্ক ইউ ।
- (কফি হাতে নিয়ে) শুনলাম আপনার বই বেড়িয়েছিলো, এই বই মেলায় ।
- (চুমুক দিয়ে) সেটা দিতেই তো এলাম ।
- ও তাই নাকি?
- জ্বি জনাব ।
পাশে রাখা বইটা হাতে নিয়ে রীতিমত ধমকের সুরে বললো,
- ধরুন ।
হাতে নিলাম বইটা । ভীষন অবাক হলাম টাইটেল দেখে ।
- সিরিয়াসলী?
- কি?
- 'বিক্রমাদিত্য ভীষন গম্ভীর প্রকৃতির ছিলো'!? এটা টাইটেল?
- হ্যা, তো কি হয়েছে?
- আমাকে নিয়ে লিখেছেন?
- আমাদের নিয়ে লিখেছি ।
- দারুন তো । (বই খুলে দেখা শুরু করলাম) নিশ্চয়ই পুরো বই টা ভীষন রকমের ভারী ভারী শব্দভান্ডারে পরিপুর্ন করে রেখেছেন?
- (ফিক করে হেসে) হাহাহাহাহা! ভালো বলেছেন ।
- বিক্রি কেমন হয়েছে? সত্যি করে বলবেন!
- মোটামুটি । মজার ব্যাপার কি জানেন?
- বলেন নি এখনো, কি করে জানবো!
- এক পাঠক এসে একদিন খুব আগ্রহের সাথে বইটা নেড়েচেড়ে দেখলো, কিনলো । পড়ে শেষ করে পরেরদিন এসে জিজ্ঞেস করলো, 'বিক্রমাদিত্যের সাথে আপনার সত্যিই কখনো প্রেম হয়নি?'
হেসে দিলাম দুজন । বললাম,
- কি বললেন জবাবে?
- কি আর বলবো, সত্যিটাই বললাম । 'জ্বি না, হয়নি' ।
- সে সম্ভবত এটাকে করন জোহরের লেখা কোনো গল্প ভেবেছিলো !
- (মুচকী হেসে) হয়তো, কি জানি ।
- যাক, ভালো লাগলো বেশ ।
- (খানিকক্ষন চুপ থেকে) একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
- হুম, সিউর ।
- আমাকে মিস করেন নি এতদিন?
- এতদিন কই হলো, আটমাস কি সাতমাসের মত হবে আপনার সাথে দেখা হয় না । আর, মিস করেছি, হ্যা অবশ্যই । তবে, করন জোহরের স্টাইলে না!
মুচকী হাসলো পরী । ওর মুচকী হাসিটা দেখতে ভীষন ভালো লাগে কেনো যেন । হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললো,
- আচ্ছা, এই শহর থেকে দুরে কোথাও কখনো চলে গেলে কোন জিনিস টাকে সবচেয়ে বেশী মিস করবেন?
- হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
- বলুন না ।
- (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) আপনাকে ।
- রিয়েলী?
- সেদিন মোবারক ভাইয়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম, আপনার কথা বেশ মনে পড়ছিলো ।
- আপনাকে না আসলে, গাছের গুড়ির সাথে বেঁধে পেটানো উচিত!
- হাহাহাহাহা!
- এভাবে হুট করে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন? সত্যি করে বলুন, প্রেমে টেমে পড়েননি তো?
- [না-সূচক মাথা নেড়ে]
- আপনার চোখ বলে দিচ্ছে, আপনি নিশ্চিত কারো প্রেমে পড়েছেন, বলে ফেলুন ঝটপট, তথ্য গোপন রাখা হবে!
- কেনো, প্রেমে না পড়লে বুঝি হারিয়ে যাওয়া যায় না?
- (কিছুক্ষন চুপ থেকে) প্রেমে না পড়লে, হারিয়ে যাওয়ার কি মানে?
- [চুপ]
- [চুপ]
- আমার না ভীষন হাটতে ইচ্ছে করে ইদানিং, রাতে, নিয়ন বাতির রাস্তায়, একা, একদম একা । কেউ থাকবে না পাশে, রাস্তার আলোয় রং খেলতে খেলতে রঙ্গিন হতে ইচ্ছে করে ভীষন । (হঠাৎ চুপ হয়ে গেলাম)
- এই বিক্রমাদিত্যকেই আমি খুজি সবসময় ।
- (নিরবতা ভেঙ্গে) খুজে পেলেন?
- নাহ, তবে পেলে জানাবো!
পরী সোফা ছেড়ে উঠে পড়তে পড়তে বললো,
- আজ তাহলে উঠি ।
- হ্যা সিউর ।
- নেক্সট দিন, আপনার বই বের করার প্ল্যান শুনবো ।
- জ্বি । আমি কিন্তু আমার বইয়ের টাইটেল পেয়ে গেছি ।
- কি?
- 'পরিনীতার সাথে বিক্রমাদিত্যের আদৌ কোনোদিন দেখা হয়নি'
দুজন হেসে উঠলাম । হাসতে হাসতে পরী বিদায় জানিয়ে বের হতে যাবে, হঠাৎ খেয়াল করলাম, বাইরে বৃষ্টি পড়ছে । ওকে একটু দাড়াতে বলে, আমার ছাতা টা নিয়ে আসলাম,
- নিন, ধরুন ।
- সে কি, লাগবে না, নিচে গিয়ে রিক্সা নিয়ে নিলেই হবে, হুডি উঠিয়ে ঠিক চলে যেতে পারবো । আর, আজকে এমনিতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে মন চাচ্ছে ভীষন ।
- আহহা । ছাতা দিতে চাচ্ছি, কারন এই ছাতা টার অযুহাতেও অন্তত একদিন দেখা করা যাবে ।
- দেখা হবে তো ।
- হবে তো?
- জ্বি আজ্ঞে, শুধু বিক্রমাদিত্য আগের
মত হারিয়ে না গেলেই হবে ।
- আচ্ছা, ঠিক আছে । তবে তাই হোক, দিলাম না আপনাকে ছাতা, ভিজে বাড়ি যান ।
- (হেসে দিয়ে) ওকে, টাটা ।
পরী চলে গেলো । আমি বইটা হাতে নিয়ে সোফাতে বসে পড়ি । টুকু কে বললাম কফি আরো এককাপ দিয়ে যেতে । বইটা নিয়ে বেশ এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে । যে মেয়েটাকে নিয়ে আমি রাতের পর রাত জেগে ব্লগে লিখি, সে মেয়েটাই কিনা আমাকে নিয়ে লিখে ফেললো, লিখেছে বলতে একদম বই-ই বের করে ফেলেছে, ভাবতেই পারছি না । নাহ, আজই শেষ করে ফেলতে হবে বইটা, এক্ষুনি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০২