শ্যামলী স্কয়ারের নিচে রং চা খাচ্ছিলাম সেদিন । এক ফকির এসে বললো,
- ভাই, কিছু টাকা দেন না, সারাদিনে কিছু খাই নাই!
আমি বললাম,
- ভাই রে, আমি তোমার থেকেও বড় ফকির, বরং আমারেই কিছু টাকা দান কইরা যাও, তোমার সওয়াব হবে!
ফকির নিচু স্বরে আমাকে 'হালার পুত' বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলো । পাশের দোকানের মালিক বেগুনি-তে লবন কম হবার কারনে তার ছেলেকে মা-বাপ তুলে(!) গালিগালাজ করছিলো ।
এমন অবস্থায় রং চা শেষ না হতে এক ভদ্রলোক এসে বললেন,
- ভাই, সাভার কোন দিকে, বলবেন একটু?
- নাক বরাবর ।
- জ্বি?
- নাক বরাবর!
- আমার নাক তো আপনার দিক বরাবর আছে!
চা খাওয়া থামালাম, বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- আপনার বাড়ি কই?
- মানুষের আবার বাড়ি কি মশাই, আসছি মাটি থেকে, যাইতে হবে ওই মাটিতেই মিশায়া!
অবাক হলাম, আমার মত কীট এখনো অবশিষ্ট আছে পৃথিবীতে! বাহ!
বললাম,
- নাম কি আপনার?
- নাম? বাবা শখ করে নাম রেখেছিলো 'জীবনানন্দ' । আনন্দ আর পেলাম কোথায় ভাই, মারা খাইতে খাইতে আনন্দ সব মুছে গেছে জীবন থেকে । আপনার নাম কি ভাই?
ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
- আমার কোনো নাম নাই ।
- সে কি, কেনো!
- সে অনেক কাহিনী ।
- বলেই ফেলেন না, শুনি!
- আমার নাম বিক্রমাদিত্য ।
- বাহ! রাজা-প্রজাদের বংশধর নাকি?
- না, সেরকম কিছু না । আসলে ওটা আমার ছদ্মনাম । শুনতে ভাল্লাগে, তাই বলি ।
- লেখালেখি করেন নিশ্চয়ই?
- টুকটাক, কেউ চেনে না সেভাবে ।
- চেনানোর জন্য কেউ লেখে নাকি! লেখবেন তো মনের আনন্দের জন্য, নিজের জন্য ।
- আনন্দের জন্যই তো লিখি ভাই, কেউ পড়ে না, আফসোস টা ওখানেই!
- বিয়ে করেছেন?
- লেখার জন্য কি বিয়ে করা বাধ্যতামূলক?
- হাহাহাহা! ভাই আপনি তো অনেক রসিক! আপনার লেখাও নিশ্চয়ই এমন রসপূর্ণ হবে ।
- পড়বেন নাকি?
- পান্ডুলীপি আছে কোনো?
- নাহ, আজ থাকুক! চলেন উঠি! সাভার যাবেন তো নাকি?
- হ্যা, চলেন । একসঙ্গে যাওয়া যাক...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪৩