-আফা,নোটোটা পাল্টায়া দেন
-কেন এটাতে সমস্যা কি?
-ছিড়া, বলেই রিক্সাওয়ালা নালার পাশে প্রস্রাব করতে বসে গেলো।
প্রিয়াংকা ব্যাগ হাতাতে লাগলো,কই গেল,ব্যাগে একটা ৫০ টাকার নোট থাকার কথা,ব্যাগের ছোট চেইন খুলে দেখলো, নেই, নেই তো নেই, পাওয়াই যাচ্ছে না।
রিক্সাওয়ালা এবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাক চুলকাচ্ছে।
-ভাই,আমার থেকে আর নেই,এটা একটু চালান।
-আফা,দোকান থাইকা নিয়া দেন,এটা চলতো না।
দোকান থেকে টাকা নিয়ে রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে যখন বাসায় ঢুকে দেখলো সৌমিক তাদের মেয়ে অন্বেশাকে নিয়ে খেলছে।
-এত দেরী হলো যে? তোমার অফিস না ৫ টায় ছুটি,সৌমিক অন্বেশার চুল আচড়াতে আচড়াতে বললো।
-আজ একটা রবীন্দ্রসংগীতের প্রোগ্রাম ছিলো,ওগুলো ম্যানেজ করতে করতে ৮ টা বেজে গেলো ,আর বলো না, কি যে ঝামেলায় আছি।
-না আরো মনে করেছিলাম আজ তুমি আমি অন্বেশা আজ একটু বাইরে খেতে যাবো।
-চলো,এখন যাই।
-না আর মুড নেই।
-মাম্মি মাম্মি, তোমার ব্যাগে কি?
প্রিয়াংকার মন খারাপ হয়ে গেলো,মেয়েটা মাঝে মাঝে চকলেট খেতে চায়,চিপস খেতে চায়,হয় না,যেমন আজ মাসের ১০ তারিখ,এখনো অফিসের বেতন হয়নি,সৌমিক একা কতটুক করবে?
যা পারে করে,প্রিয়াংকা মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো,মাম্মি কাল নিয়ে আসবো।সৌমিক টিভি ছেড়ে খেলা দেখতে লাগলো।প্রিয়াংকা রান্না বসালো,সারাদিন অফিস করে রাতে যখন সৌমিক আর অন্বেশার জন্য রান্না করতে বসে প্রিয়াংকার একটুও খারাপ লাগে না,এরা যে তার নিজেরই অংশ,প্রিয়াংকা ভাবতে থাকে,সৌমিকের জন্য একটা ঘড়ি কেনা দরকার,বেচারার একটা ব্লু শার্টের সখ,কয়েকদিন আগে দেখেছিলো,দাম দেখে দোকান থেকে চলে এসেছে,মেয়েটাকে এক বক্স চকলেট কিনে দেওয়া দরকার,বাচ্চাদের ছোটখাট আবদার রাখা উচিত নাহয় মন ছোট হয়ে যায়, প্রিয়াংকা টাকা জমানোর বয়ামটা খুললো,১৫৬০ টাকা,হয়ে যাবে,টাকাটা সে আস্তে আস্তে জমাচ্ছিলো একটা হারমোনিয়াম কেনার জন্য,হয় না,প্রতিবারই জমায়,কোন না কোন ভাবে খরচ হয়ে যায়,যাই হোক পরের বার।
-সৌমিক খাচ্ছে,প্রিয়াংকা এক থালায় ভাত নিয়ে এক গাল অন্বেশার গালে দিচ্ছে আরেক গাল নিজে নিচ্ছে,এর ভেতর সৌমিককে ডাল এগিয়ে দিলো,অন্বেশা মাথা নাড়িয়ে খাচ্ছে,প্রিয়াংকার মন ভালো হয়ে যাচ্ছে,সারাদিনের ক্লান্তি একটুও বোধ করছে না,সৌমিক এটা সেটা নিয়ে হাসাহাসি করছে,প্রিয়াংকা এক হাতে অন্বেশাকে জড়িয়ে ধরলো কেমন আদর আদর গন্ধ,এত ভালো লাগে কেন? হঠাত কারেন্ট চলে যায়,সৌমিক অন্ধকারে বলে উঠে ,একটা চার্জার কেনা দরকার,প্রিয়াংকা মোম জ্বালাতে জ্বালাতে চিন্তা করে,হারমোনিয়াম পরে,একটা চার্জার কেনা দরকার।সৌমিক কিংবা অন্বেশা অন্ধকারে কেউই বুঝলো না,অনন্ত টানাপোড়নের মাঝে থাকা সবসময় হাসিখুশী থাকা,নিজের দুঃখকে আড়াল করা এই অদ্ভুদ মানবীর মাঝে কি অপরিসীম ভালোবাসার ফাল্গুধারা তাদের জন্য প্রবাহিত হয়,অনেকটা সেই নক্ষত্রের মতন, সেই যে-
"একটি নক্ষত্র আসে; তারপর একা পায়ে চ'লে ঝাউয়ের কিনার ঘেঁষে হেমন্তের তারাভরা রাতে"