ফজরের নামাজ পড়ে সাদেক আলী হাটছেন,সকাল হচ্ছে,শহরের কালো পিচের রাস্তায় ভোরের মোলায়েম আলো গড়াগড়ি খেয়ে চায়ের দোকানের ধোয়াতে ভাসছে,সাদেক আলীর শৈশবের কথা মনে পড়ছে,দাদাজানের কথা মনে পড়ছে,দাদাজান ফজরের আজান দিলেই তার বিছানার পাশে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন,দাদাভাই,ওঠো,ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম,তাকে কোলে করে নিয়ে পুকুর পাড়ে মুখ ধুইয়ে দিতেন,তার পর গ্রামের একমাত্র মসজিদে তাকে পাশে নিয়ে নামাজ পড়তেন,নামাজ পড়তে আসতো মিয়া বাড়ীর কবির মিয়া,শেখ বাড়ীর জমির শেখ,মুন্সি বাড়ীর হাকিম মুন্সি,নামাজ পড়ে সবাই দু পাশ কোমল সবুজে ঢাকা পথের ধারে চায়ের দোকানে বসতেন,আহ,কি অপূর্ব হালুয়া বানাতো রহিম মিয়া,তার সোদা উষ্ণ ঘ্রান এখনো সাদেক আলীর নাকে গভীরভাবে ভাসে্,নামাজ শেষ হলেই সাদেক আলী দাদাজানের হাত আকড়ে বলতো,দাদাজান, হালুয়া খামু,দাদাজান হালুয়া ছোট ছোট করে ভেঙ্গে দিয়ে গালে দিতেন,মাঝে মাঝে তার চায়ের কাপ থেকে এক চুমুক চা তার ঠোটে দিতেন আর বলতেন,আমার নাতিরে দেহো,সক্কাল হইলেই পাঞ্জাবী পইরা নামাজ পড়তে আসে,জমির মুন্সি মাথা নাড়তো,বলতো উত্তম পরিবার,সাদেক আলীর সব মনে পড়ছে, মক্তবের এক নাগাড়ে পড়া আমপারা,হুজুরের অপূর্ব কোরান তেলায়াত,রাস্তার পাশের লেবু বাগানের লেবু লেবু ঘ্রান,আর মাইলের পর মাইল ভাসা অপূর্ব নীল আকাশ,দাদাজান যখন মারা যান তখন সাদেক আলীর মনে হয়েছিলো ব্যাপারটি সত্যি নয়,আর বুঝি সকালে দাদাজানের হাত ধরে নামাজ পড়তে যাওয়া হবে না,হবে না হঠাত কাধে উঠে ক্ষেতের মাঝে ঘুরে বেড়ানো,পাওয়া যাবে শক্ত হাতে কোমল ভাবে চুল নেড়ে দেওয়া আদর।
-দাদাজান,হালুয়া খামু
-সাদেক আলী চমকে ওঠেন,তিনি তার নাতি অসীমের দিকে তাকান,অসীম অবিকল ছোট্ট সাদেক আলীর মতন বলেছে,দাদাজান হালুয়া খামু।মাঝে মাঝে একই ঘটনা বার বার ঘটে,সাদেক আলী বুকের মাঝে রক্তের শক্ত টান অনুভব করেন।
-চলনা দাদাজান,ঐ দেহো,রাস্তার ঐ পাশে হালুয়া বানায়।
-চলো দাদু চলো।
সাদেক আলীর বৃদ্ধ হাত অসীমের হাত ধরে,আস্তে আস্তে দাদা নাতি হাটতে থাকে,ভোরের রোদ কোলাহলের কোমল স্নিগ্ধ বাতাসে নষ্টালজিক সুঘ্রান ছড়ায় রাস্তার পাশের একদল নষ্টালজিক হালুয়া।