কিছু কিছু মুভি শুধু মুভি হয়ে থাকে না, চরিত্র গুলো শুধুমাত্র চরিত্র হয়ে থাকে না,
হয়ে ওঠে জীবনের মহান বোধের প্রতীক,মহান কোন পবিত্র বোধকে স্পর্শের অদম্য আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, কালার অফ প্যারাডাইস তেমনি একটি মুভি, মুভিটি শুরু হয়েছে একটি অন্ধ ছেলের গল্প নিয়ে যার নাম মুহাম্মদ, যে কিনা তেহরানের একটি স্কুলে ব্রেইল পদ্ধতিতে(অন্ধদের পড়াশুনার বিশেষ পদ্ধতি,এ পদ্ধতিতে স্পর্শ করে পড়াশুনা করা যায়)পড়াশুনা করে,গ্রীষ্মের ছুটিতে স্কুল তিন মাসের বন্ধ হয়ে যায় এবং সব ছেলেদের তাদের বাবা মা নিয়ে যায়, মুহাম্মদ অপেক্ষার পর অপেক্ষা করে, তার বাবা তাকে নিতে আসে না,যাই হোক অবশেষে মুহাম্মদের বাবা আসেন এবং স্কুলের হেডমাষ্টারকে অনুরোধ করেন যেন মুহাম্মদকে স্কুলেই রাখা হত, তিনি মুহাম্মাদকে বাড়ী নিয়ে যাতে চান না,মুলত তিনি তার ছেলের অন্ধত্ব নিয়ে লজ্জিত এবং হীনমন্যতায় ভোগা একজন পিতা,স্কুল হেডমাষ্টার অপরাগতা জানালে মুহাম্মাদ তার বাবার সাথে বাড়ী ফেরে,মুহাম্মদের বাড়ি সেই সব প্রাচীন পাহাড়ে যে সব পাহাড় মেঘ স্পর্শ করে,প্রজাপতি উড়ে ঘুরে মেঘের দেশে হারায়, পাহাড়ে পাহাড়ে ফোটে সরিষার গাঢ় ফুল, মুহাম্মাদ ঘাস স্পর্শ করে, পাতা স্পর্শ করে, তার স্নেহময়ী দাদীর হাত স্পর্শ করে, সে পড়তে চায় প্রকৃতি কি লিখে রেখেছে, সে পাখির ডাক শোনে, কাক ঠোকরার কাঠ ঠোক্রানোর আওয়াজ শোনে, তার মনে হয় এরা কিছু বলে, এরাই মহান সৃষ্টিকর্তাকে প্রকাশ করে, সে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায় তার দু বোনের সাথে, তাদের সাথে স্কুলে যায়, যাই হোক এভাবেই চলছিল, বাদ সাধে তার বাবা,
তার বাবা একজন বিপত্নীক হওয়ায় সে স্থানীয় মেয়েকে বিয়ে করতে চায়, বাট সে সেই মেয়ের পরিবারকে জানায় না যে তার একটি অন্ধ্ব ছেলে আছে,পাছে তারা যদি তাদের মেয়েকে তার সাথে বিয়ে না দেয়, সে ফন্দি করে মুহাম্মাদকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ার, সে মুহাম্মাদকে এক অন্ধ কাঠমিস্ত্রীর কাছে রেখে আসে কাজ শেখার জন্য,মুহাম্মাদ কাঁদতে থাকে, কাঠমিস্ত্রী তাকে জিজ্ঞাস করে সে কাদছে কেন? মুহাম্মাদ বলে, তাকে কেউ ভালবাসে না, এমনকি সৃষ্টিকর্তাও না, কাঠমিস্ত্রী বলেন, আসলে আমরা অন্ধ হওয়ায় সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে আরো বেশীই, মুহাম্মাদ বলে, তিনি যদি আমাদেরকে বেশীই ভালবাসেন তাহলে আমাদের অন্ধ করলেন কেন?মুহাম্মাদের শোকে তার বৃদ্ধ দাদীর মন ভেঙ্গে যায়, তিনি তার ছেলের ঘর ছেড়ে চলে যেতে চান এক প্রবল বৃষ্টির দিনে,এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন,এক সময় মারা যান, এ ব্যাপারটাকে খারাপ ভাবে নেয় ঐ স্থানীয় মেয়ের পরিবার, তারা বিয়ে ভেঙ্গে দেয়,
মুহাম্মাদের বাবা সব হারিয়ে তার ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে যান,ফিরে আসার পথে তারা যা কাঠের ব্রীজ দিয়ে নদী পার হচ্ছিলো সেটি ভেঙ্গে পড়ে এবং মুহাম্মদ পানিতে ভেসে যায়, তার বাবা প্রচন্ড শকড হোন এবং প্রানপন চেষ্টা করেন মুহাম্মাদকে বাঁচাতে, কিন্তু তিনি নিজেও ভেসে যান এবং জ্ঞান ফাইল দেখেন তিনি শুয়ে আছেন কাস্পীয়ান সাগরের বেলাভূমিতে, দূরে শুয়ে আছে নিসাড় মুহাম্মাদ,তার ছেলে অন্ধ মুহাম্মাদ, তিনি মুহাম্মাদকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন, মুহাম্মাদ নিসাড় হয়ে থাকে, হটাথ আকাশে উড়ে যায় এক পাল পাখি, কাকঠোকরার আওয়াজ শোনা যায়, দেখা যায় মুহাম্মাদের আঙ্গুল নড়ছে,মুলত সে গুনছিল, হয়ত স্পর্শ করছিল প্রতীকী অর্থে ব্যাবহত সেই কালার অফ প্যারাডাইসে
কালার অফ প্যারাডাইস মুভিটাতে পুরো মুভিতেই ছড়িয়ে আছে সৃষ্টিকর্তাকে খোজার তাড়না, স্পর্শ করার ইচ্ছা. অসংখ্য পুরুস্কার পাওয়া এ মুভিটিতে উঠে এসেছে অন্ধত্বের বেদনা, পারিবারিক বিড়ম্বনা, যাতনা, পারিবারিক ভালবাসা, অভিনয়ের কথা কিছু বলব না, ছেলেটির ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদা এখনো চোখে ভাসে, ক্ল্যাসিক ধারার দর্শকদের জন্য দেখা অবশ্যকীয়।