পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ওয়ার ক্রিমিনাল, প্রচলিত বাংলায় "যুদ্ধাপরাধী"দের বিচার হয়েছে । ওয়ার ক্রিমিনালদের উপর জনতার ঘৃণা এত বেশি ছিল যে দেশের ভিতর কবর না দেবার জন্যে বিক্ষোভ পর্যন্ত হয়েছে । সেই কবেকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীও এত দিন পরেও ছাড় পায় নি, বিচার হয়েছে
বাংলাদেশই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যেখানে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিরোধিতা করে দেশে হরতাল ডাকা হয় ।
দেশে দু' ধরণের মানুষ আছে যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিপক্ষে । এক দল বিশ্বাসই করে না যে যুদ্ধাপরাধীরা দেশে যুদ্ধাপরাধ করেছিল । আরেক দলের বক্তব্য- "দেশে এত অপরাধীর বিচার যেখানে হয় না তাহলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার কেন!" । দ্বিতীয় দলের সংখ্যাটা পাল্লায় ভারী, সম্ভবত এ জন্যেই জাতিগত ভাবে আমাদের এত আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দেশের জন সংখ্যা ছিল ৭ কোটি, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল ১ কোটি । যে ছয় কোটি জনতা যুদ্ধের সময়ে দেশে ছিল তাদের একটা বড় অংশের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মানে হচ্ছে "সংগ্রাম ও গণ্ডগোলের বছর"; "কিছু মানুষ"কে মারা হয়েছিল, "কিছু মেয়েকে" ধরে নিয়ে গিয়েছিল । এই "কিছু"র তীব্রতা এত বেশি যে ৩০ লাখ শহীদ নেমে এসেছে ৩ লাখে, তাও এই সংখ্যাতেও অনেকের আপত্তি । আলোচনা শেষ পর্যন্ত থামে "অখণ্ড পাকিস্তান ভাঙ্গনে ভারতের ষড়যন্ত্র" তে এসে । '৭৫ পরবর্তী বেশ কিছু ঘটনা প্রবাহ তাতে নতুন করে আরো বাতাস দেয় । যার ফলে আমজনতার একটা বিরাট অংশ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে কনফিউজড । স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও এই কনফিউশন কাটে নি ।
যুদ্ধাপরাধীর তৎকালীন অপরাধ নিয়ে যারা কনফিউজড তাদের কনফিউশন কাটানো সম্ভব । মুক্তিযুদ্ধের উপর দেশে অনেক বই আছে । দেশী বইয়ে না পোষালে "দ্য বিট্রেইল অব পাকিস্তান" আছে যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেয়া আছে, নিয়াজির নিজের লিখা । তাছাড়া কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবার পর পাকিস্তানের পার্লামেন্টের শোক প্রস্তাব পাশ, সাকা মুজাহিদের ফাঁসির পর পাকিস্তানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখানো কি তার প্রমাণ নয় ?
কিন্তু যারা সব জেনেশুনেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে তাদের নিয়ে আমার বলার কিছু নেই । ইউ হ্যাভ টু বি হিউম্যান ফার্স্ট ।