হাজার বার ট্রাই করেও সফল না হওয়া এক ফ্রেন্ডের একটা গল্প বলবো আজ
ইয়াং জেনারেশনের যারা, তারা এতক্ষণে ভেবেই নিয়েছেন যে, বেচারা বন্ধু আমার প্রেম করার ট্রাই করেও সফল হতে পারেনি। আর আমি সেই গল্পটা আজ আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি। হ্যা, ঠিকই ধরতে পেরেছেন। তবে চলুন গল্পটা শুরু করা যাক।
আমার সেই আতেল (যদিও সে মানতে নারাজ) ফ্রেন্ডের নাম শুভ। তার চেহারার বর্ণণা দেয়ার প্রয়োজন আছে কি? থাক নাই দিলাম।
বেচারার ফেসবুকে নাকি হাজারটা মেয়ে বন্ধু। তাদের সাথে রাত দিন মেসেজিং করে বেড়ায় আর আমাদের কাছে এসে গল্প জুড়ে বসে। সে কি গল্প! তার গল্পের চোটে আমাদের প্রেস্টিজের যায় যায় অবস্থা। তার হাতে এতো মেয়ে, আমাদের কয়টা আছে? হ্যান ত্যান আরো কত কি।
আমি আর আমার আরেক বন্ধু রাহাত, দুজনে তো কোনোভাবেই পেরে উঠছিনা। না আছে আমার মেয়ে ফেসবুক ফ্রেন্ড, না আছে গার্লফ্রেন্ড। সো, তার সাথে যুদ্ধে যাওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু হঠাৎ, তার সেই গল্পের এঞ্জেলদের দেখার জন্য কেমন যেনো উতলা হয়ে উঠলাম। চোখের সামনে যে এঞ্জেলদের অবয়ব আমার বন্ধু প্রতিদিন চিত্রায়িত করছে তাদের দেখার লোভ হওয়াটা স্বাভাবিক। আমাদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না।
একদিন আমি আর রাহাত মিলে বুদ্ধি করলাম, কিভাবে এঞ্জেলদের দর্শন পাওয়া যায়। এমন সময় শুভ মাথা নিচু করে আমাদের দিকে আসছিলো। মাথা নিচু বলতে চ্যাটিং করতে করতে।
শুভ: দোস্ত, কাজ তো একটা করে ফেলছি।
রাহাত: কি কাজ দোস্ত? বল, বল।
শুভ: মাইয়া তো ফিদা।
রাহাত: কস কি মামা? কেমনে কি? এতো তাড়াতাড়ি স্বর্গ থাইকা পরী নাইমা আইলো?
শুভ: আরে এখনো আসে নাই। তবে আসবে।
আমি: মামা, আমি কিন্তু পরী দেখার জন্য অস্থির হইয়া আছি। কতদিনের ইচ্ছা আমার পরী দেখমু।
শুভ: ধৈর্য ধরো বৎস্য, তোমাদের জন্যই আমার সকল আয়োজন। কিন্তু...
আমি: কিন্তু কি?
শুভ : তোমরা শুধু দেখতে পারবা। মাগার ছুয়ে দেখার ইচ্ছা মনেও আনতে পারবা না।
রাহাত: তাই হইবো মামা, পরী দেইখা চোখ জুড়ালেই শান্তি। তোমার পরী তুমিই ছুয়ে দেইখো। আমার শুধু রুপ সাগরে ডুব দিবো আবার ভাইসা উঠবো। এইটুকুতেই হবে।
শুভ: গুড বয়েস।
আমি: তো, কবে দেখা হচ্ছে মামা?
শুভ: আগামীকালই।
রাহাত: কস কি মামা! এতো তাড়াতাড়ি কেমনে পটাইলি?
শুভ: বুঝতে হবে ম্যান। আমি কি তোদের মতো আতেল নাকি?
আমি আর রাহাত তো সেই খুশি। অবশেষে বন্ধুর এঞ্জেলের সাথে দেখা হচ্ছে। সাথে ট্রিট হিসেবে কিছু খানাপিনা। সব মিলে অস্থির। কিন্তু এঞ্জেলটা দেখতে কেমন হতে পারে সেটা নিয়ে কৌতুহল যেনো বেড়েই চলছে। পরিসংখ্যান ডিপার্টমেন্টে সদ্য ভর্তি (ফার্স্ট ইয়ার) হওয়া পরী। সব মিলিয়ে ওয়াও।
যথারীতি ক্লাসের ব্রেকে ৩ বন্ধু বের হলাম। মামা, কোথায় মিট হবে? প্রশ্ন করলাম। লাইব্রেরিতে, শুভ উত্তর দিলো। এইডা কোনো কথা হইলো? ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে দেখা করবিনা? প্রথম দেখা, খানাপিনা না হলে হয়?
আমার আর রাহাতের মনটা একটু ভেঙ্গে গেলো। পুরোটা না। তবে লাইব্রেরিতে দেখা করলেও ছলে বলে কৌশলে রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে ।
এবার আমদের লাইব্রেরিতে যাওয়ার গল্পের আগে লাইব্রেরির সাথে আমদের কেমন সম্পর্ক সেটা একটু জানা দরকার। ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার আড়াই বছর হতে চললো। এর মধ্যে লাইব্রেরিতে গেছি মাত্র একবার। তাও আবার আমাদের লাইব্রেরিটা কেমন দেখতে সেটা দেখার জন্য। এবার গেলে সব মিলিয়ে দুইবার যাওয়া হবে। লাইব্রেরিতে যাতায়াতের লিস্টে একটা সংখ্যা বাড়বে। যদিও সেটা বন্ধুর হবু গার্লফ্রেন্ডের কল্যাণে।
আমি, রাহাত আর শুভ। লাইব্রেরির নিচ তলায়। ব্যাগ রাখার বক্সে ব্যাগ রাখলাম। আস্তে আস্তে সিড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠছি। শুভর হতে ফোন। কলের অপেক্ষা। অবশ্য এর মধ্যে ওদের কথাও হয়েছে। ফেসবুকের কথোপকথন নাম্বার আদান প্রদান পর্যন্ত গড়িয়েছে। লাইব্রেরির রিডিং রুমে ঢুকলাম। চারপাশে খালি বই আর বই। এতো বই একসাথে কখনো টাকা দিয়ে কিনে দেখতে পারতাম না। পড়া তো দূরের কথা। কিন্তু বিষয় হলো, বইয়ের তুলনায় পাঠকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। দু একজন যা আছে তাও আবার জোড়ায় জোড়ায়। ইয়ে মানে ওরা কাপল। প্রেম করার জন্য লাইব্রেরি যে উত্তম জায়গা সেটা আগে জানা ছিলো না। তবে যাই হোক, আমাদের গল্পে চলে আসি।
শুভ ক্ষাণিকটা ঘেমে গেছে। পরীদের সাথে দেখা করতে এলে ঘেমে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বন্ধু আমার পরীর পাখার শীতল হাওয়ায় ঠান্ডা হয়ে যাবে একটু পর। খেয়াল করে দেখলাম আমিও ঘেমে যাচ্ছি। মনের ভেতর চাপা উত্তেজনা বিরাজ করলে তা ঘাম হয়ে বের হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পরীর শীতল হাওয়ায় ঠান্ডা হওয়ার মতো কপাল এই মুহুর্তে আমার নেই।
আমরা তিনজন তিনটা বই নিয়ে পড়তে বসলাম। এই প্রথম লাইব্রেরির কোনো বই পড়ছি। কিন্তু কি বই পড়তেছি সেটা খেয়াল করা হয়নি। আমাদের লাইব্রেরিতে দুইটা পার্ট। একপাশে সায়েন্সের সকল বই। অন্য পাশে বাকি সব। আমরা বসেছিলাম সোস্যাল সায়েন্সের বইয়ের তাকের পাশে। যদিও চোখের সামনে বই রাখা আছে কিন্তু বইয়ে মন নেই। মন পড়ে আছে পরীর ভাবনায়।
শুভর ফোনে একটা কল আসলো। আমাদের তিন জনের চোখমুখেই হাসি ফুটে উঠলো। শুভ বললো, পাশের রুমটাতে পরী বসে আছে। অগত্যা পাশের রুমে যেতে হলো। বেশ কিছু সুন্দরী মেয়ে বই পড়ছিলো। কিন্তু এর মধ্যে আমাদের কাঙ্খিত পরীকে খুঁজে পেতে একটু হিমশিম খেতে হলো। আমি আর রাহাত শুভর কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলাম যেনো ওরা ওদের মতো করে ফ্রি ভাবে কথা বলতে পারে।
আমি আর রাহাত একটা বই নিয়ে বসলাম। অরগানিক কেমিস্ট্র বই। যদিও আমরা এখন মার্কেটিং বিভাগের স্টুডেন্ট। কিন্তু বাধ্য হয়ে কেমিস্ট্রির পাতা উল্টাতে লাগলাম শুধু। আমাদের অপর পাশে একটা কুৎসিত মেয়ে বসে বসে বই পড়ছিলো। পর্যপ্ত পরিমাণে কালো। কালো হলেও যে সুন্দর দেখায় তার কোনো ছাপ তার মধ্যে নেই। সরাসরি কুৎসিৎ বলার ইচ্ছা যদিও ছিলোনা, তবুও বললাম। সরি। বাদ দেই সেসব কথা। ও মেয়ের বর্ণণা দেয়ার আর দরকার কি? আমরা এসেছি এঞ্জেল দেখতে। এঞ্জেল দেখতে এসে দু একটা ডেমনস দেখা লাগতেই পারে।
এদিকে শুভ মেয়েটিকে খুঁজতে খুঁজতে একটু হয়রান হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এদিক সেদিক যাচ্ছে। পরে খেয়াল করলাম ও আমাদের দিকেই আসছে। ভাবলাম, পরী মনে হয় বন্ধুকে ধোকা দিয়েছে। লাইব্রেরিতে না এসেও লাইব্রেরির কথা বলেছে, মজা নিচ্ছে।
আমাদের অবাক করে দিয়ে শুভ আমাদের অপর পাশের মেয়েটির পাশে বসে গেলো। আমি আর রাহাত হা করে তাকিয়ে অপলক দৃষ্টিতে পরীকে দেখলাম। বাকিটুকু ইতিহাস............
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:১০