২০১৯ সালে অন্তত ১০টি ইংরেজী বই পড়বো বলে ঠিক করেছি। একটি বই পড়া শেষ করলাম। ছোট বই দিয়ে শুরু করলাম। বইয়ের নাম হল: 10 Secrets for success and inner peace by Dr. Wayne W. Dyer. জীবনে অনেক বাংলা বই পড়া শেষ করে উপলব্ধি করলাম যে প্রেম-ভালোবাসার বইয়ের গন্ডি থেকে বের হয়ে এখন কিছু ভিন্নধর্মী বই পড়া দরকার। বয়সতো আর থেমে নেই। বইয়ের রিভিউ লেখার চেষ্টা কখনও করি নি। সেই দিকে যাব না। এই ব্লগটি লিখছি পড়া শেষ করে যে কয়েকটি কথা মনে আছে তার উপর ভিত্তি করে। বইয়ের নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে ১০টি অধ্যায় আছে।
এক, খোলা মনে সবকিছু গ্রহন করা ও কোন কিছু মনের কোনে আটকে না রাখা। জীবনে যে কোন পরির্বতন বা যে কারো কথা খোলা মনে শুনতে হবে। মনকে সব কিছু গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। কিন্তু অনেক সময় আমরা খোলা মনে সবার কথা শুনলেও তা মনের ভিতর গেথে নেই না। কারন, আমাদের মনের ভিতর আগে থেকেই হয়তো কোন একটি সিদ্ধান্ত বা বিশ্বাসে আটকে আছে। সেই বদ্ধমূল ধারনা মনে গেথে থাকার কারনে নতুন কিছু গ্রহন করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
দুই, মনের ভিতরে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখা। লেখক বলেছেন তোমার মনের ভিতর যে গান বাজে তাকে কিছুতেই মরতে দেয়া যাবে না। সেই সপ্নের মৃত্যু মানেই বেঁচে থেকেও মানুষের মৃত্যু। জীবনের নানান ব্যস্ততায় আজ হয়তো সেই স্বপ্নের পিছনে সময় দেয়া যাচ্ছে না। কিন্তু মনের ভিতর সে গানই তাড়না দেবে কোন একদিন ঠিকই স্বপ্নকে ছুয়ে দেখা যাবে।
তিন, তোমার কাছে যা কখনো ছিল না তুমি তা কাউকে দিতে পারবে না। এই অধ্যায়টি আমার সবচেয়ে প্রিয়। মানুষ কেন রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ প্রকাশ করে? কারন তাদের ভিতর এই অনুভূতিগুলো পুঞ্জিভূত হয়ে থাকে। তাই আমাদের ভিতরের এই অনুভূতিগুলোকে শুন্য করতে হবে। আমি তখনই মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলবো যখন আমার ভিতরের কষ্ট চাপা থাকবে না। যদি এমন ভাবে চিন্তা করা যায় যে এই জিনিসগুলো আমার ভিতরে নাই তবে আমরা কখনই তা কাউকে দিতে পারবো না। লেখক এখানে কমলার কোয়ার সুন্দর একটি উদাহরন দিয়েছেন। আমরা যদি কমলার কোয়াকে মুখে নিয়ে চাপ দেই সেখান থেকে কমলার রস বের হবে। যদি জুস মেকারে দেই, যদি আঙ্গুলে চেপে ধরি, যদি হাতের মুঠিতে নেই, যদি পা দিয়ে পিষে দেই অথবা চরম আক্রোশে মাটিতে আছাড় দেই তারপরও কমলার রসই বের হবে। তাই পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমি যদি কমলা হই তবে আমাকে ভালোবেসে আদর করুন আর ঘৃণা ভরে আঘাত করুন আমার ভিতর থেকে মিষ্টি রসই বের হবে। এর অন্য একটি অর্থ আছে, আপনার ভিতরে যদি ভালোবাসা থাকে তবে আপনি তাই বিলাবেন, যদি ঘৃণা থাকে তবে তাই। মানুষের প্রকাশেই লুকিয়ে আছে তার আসল পরিচয়, আমি –আপনি কেউ ব্যতিক্রম নয়।
চার, নিরবতাই শান্তি। যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিনই একান্তে নিজের সাথে কিছু সময় ব্যয় করা। কোন রকম শব্দ নয় সম্পূর্ণ নিরবতায়। এই ক্ষেত্রে যোগব্যায়াম করা যেতে পারে, যার যার ধর্ম মতে প্রার্থনা করা। অথবা কোন নিরিবিলি স্থানে বসে থাকা যায়। যদি প্রতিদিন সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে অন্তত একদিন কিছুটা সময়ের জন্য নিজেকে সবকিছুর থেকে আলাদা করে ফেলা। নিরবতার মাধ্যমেই সৃষ্টিকর্তার খুব কাছাকাছি আসা যায়। মানুষের মনের অশান্তি দুর করার জন্য সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য অপরিহার্য।
পাঁচ, দোষারোপ না করা। জীবনে কোন কিছুর জন্যই কোন রকম নিন্দা বা দোষারোপ খুজে না বের করা। আমার সাথে যে ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে আমার মন খারাপ করাই উচিত। এমন ভাবে আরো অনেক অজুহাত বের করে নিজের মন খারাপের বা কষ্টের কারন জাস্টিফাই না করা। জীবনে সবকিছুকেই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। ক্ষমাই মনকে স্বস্তি দিতে পারে, শান্তি আনতে পারে।
চলবে......
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪১