কথাটা শুনতে অনেক চমৎকার শোনালেও বিষয়টি বাস্তবে পরিনিত করা খুব জটিল। নিজের শক্তিকে কাজে লাগানো বা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সার্থক ও সফল মানুষদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আপন শক্তি সবার ভিতরেই থাকে কিন্তু তার সদ্ব্যবহার করে অর্থবহ করে তোলা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। নিজেকে নিজে পরিচালিত করা সহসজ কাজ নয়। কথাটি শোনার পর আপাতভাবে মনে হবে, এ আবার কেমন কথা! আমাকে আমি ছাড়া আর কে চালায়। কিন্তু আমাদের অবচেতন মন যে কতভাবে, কতকিছুর দ্বারা পরিচালিত হয় তার খোঁজ বের করা দুরূহ। চারপাশ, পরিবেশ, মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি সবকিছুরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব থাকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। সেই পাথর কঠিন বলয় থেকে মুক্ত করে, স্বতন্ত্রভাবে নিজেকে পরিচালিত করা যুদ্ধ জয়ের চেয়ে কোন অংশ কম নয়। যুগে যুগে যে কিছু সংখ্যক মহামানুষ তা করতে পেরেছেন তারাই পেয়েছেন জীবনের সার্থকতা।
রাহাতের কথা ধরা যাক, সে একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া টগবগে যুবক। অনেক আলসেমি ভরা জীবন থেকে বের হয়ে সে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে জেগে উঠার পণ করলো। প্রথম কয়েকদিন ভালভাবে নিয়ম মেনে উঠলেও, একরাতে দেরিতে ঘুমানোর জন্য পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হল। অথচ সকাল ৬টায় তার এলার্ম ঘড়ি ঠিকভাবেই বেজে উঠেছিল, রাহাত ভাবলো একদিন দেরিতে উঠলে কিছু হয় না। আবার কাল থেকে ঠিক সময় উঠলেই হবে।
অপরদিকে, ১০০০ জন্য সৈন্যের একটি প্রশিক্ষিত চৌকশ ব্যাটেলিয়নের কথা চিন্তা করুন। একজন দক্ষ ক্যাপ্টেনের তদারকিতে তারা প্রতিদিন সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে প্রশিক্ষণে যায়। পুরো চাকরী জীবনে তাদের কখনও সকাল ৬টার ব্যত্যয় করতে দেখা যায় না। যুদ্ধের ময়দানে তারা তাদের কমান্ডারের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালান করে। তারা জানে কাজে অবহেলা করলে আছে ভয়াবহ শাস্তি। কিন্তু হঠাৎ যদি তাদের কোন ক্যাপ্টেন না থাকে তখন কি হবে? কোন জবাদিহিতা যদি না করতে হয় তবেও কি প্রতিটি সৈন্য সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠবে?
এই পরিচালকের আসনটি সেজন্যই এত গুরুত্বপূর্ণ। আর মানুষ যখন নিজেই নিজের পরিচালক হয় তখন সুশৃংখলভাবে কাজটি সম্পন্ন করা ততই কঠিন হয়ে পড়ে। নিজের কাছে নিজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। রাহাত বা আমরা নিজের কাছে, নিজের কাজে নিজেকে ফাকি দেই। আপন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনাকে বিকশিত করতে হবে। সময় হেলায় হারালে তা আর কখনই ফিরে আসবে না। সেরা হতে চাইলে, আত্মনিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সেরা ছাত্র হতেন চান, সেরা শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড়, আইনজীবি, শিল্পী, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ সবারই আত্মনিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টা করতে হবে। তাই সত্যিকার অর্থে প্রত্যাশা করি, জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে..
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১৯