আগের পর্ব পড়তে.... প্রথম পর্ব ও দ্বিতীয় পর্ব
আমাদের অফিসে একমাত্র ব্যাচেলর আমি। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও কেন বিয়ে করি না, সেটি আমার রহস্যময়তাকে আরও ঘনীভূত করেছে বলে স্বপন ভাইয়ের অভিমত। আমাদের রিসিপশনিস্ট সুন্দরী মেয়েটিকে নিয়ে তিনি যে কতদিন আমাকে টিপ্পনী দিলেন তার ইয়ত্তা নেই।
আমার ডেস্কের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলবেন, ‘রাশেদ সাহেব চোখ মেলে তাকান। দুনিয়াতে অফিসের ফাইল ছাড়াও দেখার মত অনকে কিছু আছে। চোখের রেস্ট বলেও একটা ব্যাপার থাকে’।
স্বপন ভাইয়ের কথায় আমি আরও জোর করে কাজে মনোযোগ দেই। তবে মাঝে মাঝে চুপিসারে যে তাকাই না তা নয়। মেয়েটির নাম জেরিন। সুন্দরী আছে, আর সব সময় টিপটপ থাকে। শহরে বেড়ে ওঠা আধুনিক মেয়ে। জেরিনে কিছু ব্যাপার আমি লক্ষ্য করেছি, তার মধ্যে অন্যতম হল নীল রং তার খুব প্রিয়। অথবা কেউ তাকে বলেছে নীল পোশাকে তাকে পরীর মত লাগে। মনের খেয়ালে একটি প্রশ্ন আসে, জেরিন কি আমাকে নিয়ে কখনও ভাবে? তার মনের মধ্যে অফিসের রাশেদ সাহেব কেমন?
আমার নিজের কাছে তার উত্তর আশানুরূপ হয় না। জেরিন নিশ্চিত ভাবে, রাশেদ সাহেব রাশভারি-চাপা-গ্রাম্য ভুত। অফিসের কারও সাথে কোন সম্পর্ক নেই। খোলসের ভিতর তার মনের ভিতর আছে এক অহংকারের পাহাড়। এই লোকের বউয়ের কপালে দুঃখ আছে।
এই একই কথা হেনাও বলতো। কিন্তু হেনার মনে হত আমার মত হ্যাঙ্গলা-অকর্মার ঢেকিকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। সারাদিন পাড়া মাতিয়ে বেড়াই, ভবিষ্যতের কোন চিন্তা নাই ইত্যাদি। হেনার সাথে আমার কিভাবে সম্পর্ক শুরু হল বুঝে উঠতে পারি না আমরা দুজন। তবে মহীর মতে ঝগড়া করতে করতে। আমার ওমর সানির মত রাখা লম্বা চুল আর সিগারেট খাওয়া নিয়ে হেনার অভিযোগের শেষ নাই। তার উপর আছে সারাক্ষণ উদাহরণ দেবার জন্য মহী। জীবনে মহীর নামে যত খোঁচা খেয়েছি তা যদি হৃদয়ে দাগ কেটে থাকে তাহলে আমার হৃদয়ে দেখতে নিশ্চিত মৌচাকে মত ফুটোফুটো।
আমি ব্যথিত চোখে হেনাকে বলি, ‘আমি আমার মত, অন্য কারো মুর্তি হতে পারবো না’।
হেনার এমন সুযোগ মিস করে না, ‘তাহলে চুলগুলো সানির মত কেন? গুন্ডা ছাড়া ভালো মানুষের কি এমন চুল থাকে। আমার বাবা কি তার মেয়েকে গুন্ডার সাথে বিয়ে দিবে?’
আমি জানি এখন আর কথা বড়ানো যাবে না। অন্য প্রসঙ্গ তুলি। ‘আচ্ছা বলো তো মৌসুমি না হেনা বেশি সুন্দর?’
হেনা যে দেখতে মৌসুমীর মত সে কথা এই পাড়ার সবাই এক বাক্যে স্বীকার করে নেয়। হেনা জানে আমার এই লম্বা চুল মৌসুমীর নায়ক হবার একটি দুঃসাধ্য চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। আমি বলে যাই, ‘ভালোবাসার জন্য দুরন্ত ষাড়ের চোখে লাল কাপড় পরাতে না পারি, অসংখ্য অবাস্তব ভাব বা উপমা দিয়ে কবিতা লিখতে না পারি। আমার মৌসুমীর জন্য কি সামান্য চুলটুকু বড় করতে পারবো না!’
হেনার রাগ পড়ে যায়। তবুও বিরক্তভাব বজায় রাখতে বলে, ‘এইগুলো বলে কোন লাভ নাই। কাজকর্ম নাই আসছে নায়ক সাজতে। অনার্সের রেজাল্ট কবে বের হবে খবর রাখো? মাস্টার্সের ক্লাস করতেও তো একদিনও গেলে না’।
মজিদ উদ্দীন সরকারী কলেজে হিসাবিজ্ঞান বিভাগে আমি মাস্টার্সে ভর্তি হলাম। ছাত্র খুব খারাপ ছিলাম না, তাই রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা নেই। আগের তিন ইয়ারের রেজাল্টের মত হলে ফার্স্ট ক্লাস ঠিকই টিকে যাবে। হেনাও এগুলো সব জানে, কিন্তু আমি কোন কিছুতে সিরিয়াস না কেন এই জন্য বেচারীর ক্ষোভের শেষ নেই।
পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১