শবে বরাতের ফজিলত। (আগের লেখা )
স্বর্গের এক পাখির খুউব ইচ্ছে বাংলাদেশ ঘুরে দেখবে
যেদিন এলো ঘটনা চক্রে সেদিন ছিলো শবে বরাতের রাত,
সন্ধে বেলায় মসজিদে, ঘরে ঘরে কোরান তেলোয়াতের সুমিষ্ট আওয়াজে
স্বর্গের পাখির মন ভরে গ্যালো ,এর থেকে বড় স্বর্গ আর কোথায় হতে পারে!
আম জাম হিজল তমাল দেবদারুর বনে নেচে নেচে সে উড়ে বেড়ায়
রাত একটু একটু করে বাড়তে থাকে, একটু জিরিয়ে নিলে হয়,
শান্ত স্নিগ্ধ কোন এক গ্রামের মসজিদের পাশে কাঠালচাপা গাছে
মুসল্লিদের প্রার্থনা, তেলোয়াত আর অঝোরে কান্নার আওয়াজে
পরম শান্তিতে পাখির চোখ বুজে আসে. স্বর্গের পাখি বলে কথা।
সে আবার সবার মনের কথা বুজতে পারে, কেও লুকোতে পারেনা
সে শুনতে পেলো গায়ের চেয়ারম্যান কেদে কেটে একাকার
হে আল্লাহ গরিবের সম্পদ চুরি করে অঢেল সম্পত্তি করেছি
প্রতিপক্ষকে খুন করেছি, গ্রামের অবলা নারীরা আমার লালসার শিকার
আমার পক্ষ না নেয়ায়, কন্যার উপর পাশবিক অত্যাচারের অপবাদ দিয়ে
জুতার মালা গলায় দিয়ে তাকে এলাকা জুড়ে অপমান করে তাড়িয়ে বেড়িয়েছি
হে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিও. আমাকে ভালো হওয়ার সুমতি দাও।
তার অনুতাপ দেখে পাখির মন ব্যথিত হয়ে উঠলো, সুবহানাল্লাহ
সে স্থির করলো স্বর্গে ফিরে গিয়ে আল্লাহর কাছে মাফ করে দেয়ার
সুপারিশ করবে. চোখের পানিতে আল্লাহর মন নিশ্চয়ই গলবে,
একটু বিশ্রাম নিয়ে পারিজাত পাখি শহরের দিকে রওনা দিলো
শহরের সবচেয়ে বড় কারু কার্যময় মসজিদের ছাদে গিয়ে সে বসলো।
কোরান তেলোয়াত, জিকির, আশকর এবং কান্নার ফরিয়াদে
পাখি ধন্য ধন্য করে বিড়বিড় করে উঠলো, ধন্য আল্লাহর বান্দা
শহরের পদস্থ কর্মচারী, কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সকলে
তারস্বরে চিত্কার করে কাদছে আর আল্লাহর কাছে মাফ চাইছে,
পাখি শুনতে পেলো তারা আর্তনাদ করে বলছে, হে আল্লাহ
জনগনের হক চুরি করে, প্রতারণা করে অবৈধ সম্পদ করেছি
তুমি মাফ করে দিও আমার আল্লাহ. আমাকে ঘুম দাও, শান্তি দাও।
পাখির চোখ ভিজে এলো তাদের অনুতাপ দেখে, আল্লাহকে কি ভয়!
সে উড়তে উড়তে লোকালয় হতে বনাঞ্চলের দিকে চলল সুন্দরের পানে
পথে সুন্দর পরিপাটি সাজানো গোছানো এক বাসার কার্নিশে বিশ্রাম নিলো,
সে সময় শুনতে পেলো বাড়ির কর্তা তওবা করে প্রার্থনা করছে
হে আল্লাহ অফিসে পরকিয়া করে আমার স্ত্রীকে ঠকিয়েছি
আমাকে মাফ কর, পাশের রুমে মিহিস্বরে কান্নার শব্দ শোনা যায়
কর্তার স্ত্রী কেঁদে কেঁদে বলছে, হে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দাও
স্বামী অফিসে থাকলে আমি পরপুরুষের সাথে অভিসার করি।
পাখির অন্তর গলে এলো. আহা স্বর্গে গিয়ে আল্লাহকে বললে নিশ্চয়ই
তিনি সবাইকে মাফ করে দিবেন. তিনি পরম করুনাময়
বলে পাখি উড়াল দিয়ে বনাঞ্চলের দিকে ছুটলো, সপ্তাশ্চর্য কি তা!
অবাক বিস্বয়ে সে মুগ্ধ হয়ে সুন্দরবন, নিঝুম দ্বীপ, লাওয়াছড়া
ভাওয়াল, মধুপুর, কাপ্তাই, চুনতি, টেকনাফ, ডুলহাজরা, হিমছড়ি
কুয়াকাটায় মনের আনন্দে নেচে গেয়ে ঘুরে বেড়ালো.
আহারে পৃথিবী নামক ভুখন্ডের এ তল্লাটে কি অপার বিস্বয়ই
না সাজিয়ে রেখেছে বিধাতা. তার মহিমা বোজা ভার।
দু সপ্তাহ পর হৃষ্টচিত্তে পাখি এবার স্বর্গের দিকে রওনা দিলো
ফেরার পথে তো তার চক্ষু চড়কগাছ, উল্টে ছানাবড়া
সে দেখতে পেলো সেই চেয়ারম্যান, পুলিশ, আমলা, মন্ত্রী
ব্যবসায়ী আরো বেশি করে দুর্নীতি করছে, ভ্রুক্ষেপ হীন
সেই দম্পত্তির পাপাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে, নিপুন অভিনয়ে
পাখির দম বন্ধ হয়ে ওড়ার শক্তি তিরোহিত হওয়ার দশা।
এবার পাখিই মিনতি করে আল্লাহর কাছে বললো
এবাব্রের মত আমাকে মাফ করে দাও. আর কোনদিন যদি
বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডে আসার নাম নেই তোমার কাছে।
বিধাতার দয়ায় কোনরকমে পাখি বাংলাদেশের বায়ুমন্ডল
অতিক্রম করে স্বর্গের রাস্তার সূচনায় গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাচলো
আহারে পাখির মত যদি বাংলাদেশের মানুষ সবার মনের কথা
বুজতে পারতো, যদি প্রতিদিন শবে বরাত হোত. আলহামদুলিল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:১১