ঢাকার জিন্দাবাজারের ঋষিকেশ দাস লেনের ছেলে ঋত্বিক ঘটক, পুরো নাম ঋত্বিক কুমার ঘটক। জন্মেছিলেন ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর। দেশভাগের সময় চলে যান পশ্চিমবঙ্গে। বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটক এক কিংবদন্তি। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তিনি সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেনের সাথে তুলনীয়। ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করে হয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তাঁর নাম বহুল উচ্চারিত। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য ঋত্বিক ঘটকের আটটি চলচ্চিত্রের ডাউনলোড লিংক দেয়ার আগে জানিয়ে দিচ্ছি ক্ল্যাসিক আট চলচ্চিত্রের কথা—
১. নাগরিক/Nagarik [The Citizen] (1952) :
১৯৫২ সালে নিজের গল্পে ও চিত্রনাট্যে ঋত্বিক তৈরি করেন তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘নাগরিক’। কিন্তু ছবিটি তাঁর জীবিত অবস্থায় মুক্তির মুখ দেখেনি, মুক্তি পায় তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭৭ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলার মধ্যবিত্তের জীবন যন্ত্রণার নান্দনিক শিল্পরূপ এই চলচ্চিত্র।
২. অযান্ত্রিক/Ajantrik [The Unmechanical/The Pathetic Fallacy] (1958):
‘নাগরিক’ নির্মাণের ছয় বছর পর সুবোধ ঘোষ এর একটি গল্পের অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘অযান্ত্রিক’ চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনা করেন আলী আকবর খান। বিমল নামের এক যু্বক আর জগদ্দল নামের পুরনো শেভ্রল গাড়ির উপাখ্যান ‘অযান্ত্রিক’ চলচ্চিত্রের প্রশংসা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়।
৩. বাড়ী থেকে পালিয়ে/Bari Theke Paliye [The Runaway] (1958):
শিবরাম চক্রবর্তীর লেখা কাহিনীর চিত্রনাট্যরূপ দেন প্রতিভাবান ঋত্বিক ঘটক। এ্যাডভাঞ্চারপ্রিয় বালক কাঞ্চনের বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা যাওয়া এবং নানা ঘটনা ও মানুষের সংস্পর্শ নিয়ে ফের ঘরে ফেরার গল্প ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’। তবে এর মাঝে ৪৭ এর দেশভাগের প্রকৃত চিত্রও ঋত্বিক ধারণ করেছেন।
৪. মেঘে ঢাকা তারা/Meghe Dhaka Tara [The Cloud Capped Star] (1960):
ঋত্বিকের আটটি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সর্বাধিক আলোচিত ও বিশ্ব পরিচিত। এটি চতুর্থ ছবি হলেও এ ছবির মাধ্যমেই তিনি প্রথম ব্যবসায়িক সাফল্যের মুখ দেখতে পান। ঋত্বিকের এর পরের দুটি ছবি কোমল গান্ধার (১৯৬১) এবং সুবর্ণরেখা (১৯৬২) নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ট্র্যাজেডি হয়েছে। এই সবগুলো ছবিতেই দেশ বিভাগের যন্ত্রণা-ক্ষোভ ফুটে উঠেছে। ঋত্বিক ঘটকের আর সব ছবির মতো এটিতেও রাজনীতি, সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা, মানুষের অধিকার প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। সাইট এ- সাউন্ড ম্যাগাজিনের সর্বকালের সেরা ছবির তালিকায় এটি ২৩১ নম্বরে ঠাঁই পেয়েছে।
৫. কোমল গান্ধার/Komal Gandhar [E-Sharp/The Gandhar Sublime] (1961):
ঋত্বিক ঘটকের পঞ্চম চলচ্চিত্র ‘কোমল গান্ধার’। কোমল গান্ধার উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি রাগ বিশেষ। দেশভাগের যন্ত্রণা, প্রগতি নাট্যের বিরোধ ও সমস্যা চিত্রায়ণে সমস্ত সিনেমা জুড়েই কোমল গান্ধারের আবহ।
৬. সুবর্ণরেখা/Subarnarekha [The Golden Line] (1962):
ঋত্বিকের দেশভাগের ট্রিয়লজির শেষ চলচ্চিত্র হচ্ছে সুবর্ণরেখা। এটি তাঁর ষষ্ঠ চলচ্চিত্র। দেশভাগে অর্থনীতি ও সমাজ জীবনে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছিলো তারই প্রামাণ্য দলিল তৈরি করেছেন সীতা নামের একটি মেয়ের জীবনচিত্র দিয়ে।
৭. তিতাস একটি নদীর নাম/Titas Ekti Nodir Naam [A River Named Titas] (1973):
বাংলাদেশে বোনের বাড়ি বেড়াতে এসেই নাকি ঋত্বিকের মাথায় অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত বিখ্যাত উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম অবলম্বনে চলচ্চিত্র বানানোর চিন্তা আসে। ১৫৯ মিনিটের এই চলচ্চিত্রটি তাঁর একটি অনবদ্য কাজ। ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের এক জরীপে দর্শক, চলচ্চিত্র সমালোচকদের ভোটে এটি সবার সেরা ১০টি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তালিকার মধ্যে শীর্ষস্থান লাভ করেছে।
৮. যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো/Jukti Tokko Aar Goppo [Reason, Debate and a Story] (1974):
ঋত্বিক ঘটকের সবচেয়ে আলোচিত ছবি এটি। তিনি এই চলচ্চিত্র চিত্রিত করেছেন ভীষণভাবে রাজনৈতিক সচেতন ও আত্মজৈবনিক প্রেক্ষপটে। ঋত্বিক ঘটক এ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন মাত্র দুইদিনে । নিজের সময়ের ও জীবনের জবানবন্দী ‘যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো’।
ঋত্বিক ঘটকের এই আটটি কাহিনী চিত্র শুধু মহৎশিল্পকর্মই নয়। এইগুলো তাঁর সময়ের সাক্ষ্য বহন করে। নিচে রয়েছে এই আটটি সিনেমা ডাউনলোড করার টরেন্ট ফাইল। আগ্রহীরা প্রায় আট গিগাবাইটের এই সিনেমাগুলো ডাউনলোড করে পাঠ নিতে পারেন ঋত্বিক ঘটকের নন্দনতত্বের।
যারা ডাউনলোড করে দেখতে আগ্রহী তাদের সুবিধার্থে টরেন্ট ফাইল —
https://www.facebook.com/download/678216888916457/BT-Ritwik.Ghatak.Compl...