অনেক সময় আমার মাথায় যে প্রশ্নটা আসে, শেখ হাসিনা এই বাংলাদেশকে কেমন দেশ বানাতে চাইছিলেন? ৫+১৬=২১ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি প্রকাশই করতে পারেন নাই কেমন দেশ তিনি চান বা পুরা জাতিকে কোন পথে তিনি নিয়ে যাবেন ইত্যাদি! প্রত্যেক মানুষ যখন কোন প্রতিষ্ঠানিক প্রধান নির্বাচিত বা সিলেক্ট হন তিনি তখন তার মনে বা কাগজে সেই প্রতিষ্ঠান নিয়ে গবেষণা করে একটা রূপরেখা সাজিয়ে নেন এবং সেই মোতাবেক কাজ করেন।
বার বার চিন্তা করলে আমার মাথায় যে কথাটা আসে, তা হচ্ছে, তিনি মুলত এই বিষয়ে তেমন কোন দৃঢ় চিন্তাই করেন নাই বলে মনে হয়! তিনি পুরা জাতীর চরিত্র থেকে বাস আবাস খাদ্য পোষাক ইত্যাদি নিয়ে কোন গবেষণাই করেন নাই, দেশে কোন অংশে কোন মানুষ, কোথায় কত নদী পানি, কোথায় কত জমি কিংবা চর সেটা উনার মাথায় কোন দিন চিন্তা এসেছে বলে মনে হয় নাই।
এই দেশের শতভাগ মানুষের চরিত্র, পোষাক, খাবার, জীবন যাপনের রুচি এক নয় বা ছিল না, এদের কোন সুতায় বেঁধে মালা বানালে তা টেকসই হতে পারে, তা নিয়েও তিনি কোন গবেষণা করেন নাই, এই মানুষ ভেদে কে কোথায় থাকলে কাকে কোন কাজে দিলে সে খুশি মনে করবে তাও তিনি বুঝতে পারেন নাই।
একটা এমন দেশ যেখানে এমন নানান শ্রেনীর মানুষ, যাদের জন্য অনেক কিছুই সমঅধিকার হতে পারত এবং তা স্থাপনে নিশ্চিত সবাই খুশি হত, তার চিন্তাও হয়ত শেখ হাসিনার মনে আসে নাই। পুরা জাতির উন্নয়ন কিসে তা নিয়ে তিনি ভেবেছেন বলেও মনে হয় না - বড় বড় বিল্ডিং, রাস্তা, সেতু আর জেলখানা কিংবা পুলিশ কার্য্যালয় কিংবা অনেক গুলো বিশ্ববিদ্যালয় বানানোকেই তিনি উন্নয়ন মনে করেছিলেন। বড় রাস্তা কিংবা বড় বিল্ডিং, তা দূর থেকেই দেখতে দেখতে ভাল লাগে, কিন্তু তা যদি ব্যবহার না করা যায়, তবে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে সেই লোকের কাছে সেটা ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি নিজে বা কাদের প্ররোচনায় বড় বড় এমন আকাজের প্রজেক্ট নিতেন তা বুঝে আসে না, এই যে ধরুন 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট', এটা কেন কি কাজে বা কোথায় গেল, তা এখন অজানা, এত টাকার ইনভেষ্ট কে সুফল পাচ্ছে কে জানে, এই টাকা তো জাতীর ছিলো। অথচ তিনি এই টাকার সামান্য কিছু অংশ দিয়ে যদি, মধ্যপ্রাচ্যে প্রথমবার কাজ করতে যাওয়া প্রবাসীদের ওয়ানওয়ে টিকেট ফ্রি করে দিতে পারতেন অন্তত ১০ লক্ষ মানুষের, এখন এই ১০ লক্ষ মানুষ ও তাদের পরিবারের ৫০ লক্ষ মানুষ হয়ত তার জন্য রাস্তায় নেমে আসত, সরাসরি চোখে দেখা বেনিফিশিয়ারী হয়ে!
তার ভিশনে কি ছিলো উপরওয়ালা ছাড়া আর কেহ জানত কি না সন্দেহ! দেশের একজিষ্টিং গণ মানুষের চাহিদা গুলো কথা তিনি জানতেন কিনা কে জানে? এই ধরুন রেলওয়ে, তিনি এই গণ মানুষের যোগাযোগের এই ক্ষেত্রে কোন ভাল করার চেষ্টাই করেন নাই, এই রেল এমন একটা সেক্টর যার অসাধারন উন্নতিতে দেশের সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে সরকারের প্রশাসন দেখানো যেত। অথচ তিনি এত এত বছরে একজন সঠিক রেল মন্ত্রী সিলেক্ট দিতে পারেন নাই, বাবু সুরঞ্জিতের গাড়িতে টাকা পাবার পরেও তিনি কিছু বলে নাই, এর পরে কুমিল্লার এক বুড়োকে দিলেন তিনি কেমন মাল কামিয়েছেন তা তার সরকার পতনের পরে বুঝা গেল, এই লোক স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে গেলেন, তার পরে আরো দুইটা দিলেন, এদের নাম মুখে নিতেও কুলায় না, খেয়ালও রাখি নাই, শেষেরটা তো ২য় স্ত্রী দারা চালিত ছিলো বলে জানা যায়! আহ, অথচ এই রেল দিয়েই পুরা জাতীর মন কেড়ে নেয়া যেত! চলতে আসা বা অনিয়মিত কোন কিছুতে ভাল না নিয়মিত করার মধ্যেই যে উন্নতি এবং সেটা সবার চোখে পড়ে, তা তিনি বুঝতেই পারেন নাই।
এমন হাজারো সেক্টর আছে, তিনি একজিষ্টিং দূর্বল কিছুকেই সবল করতে পারেন নাই, বা হয়ত সেটা তার চিন্তাতেই আসে নাই, এই কাজ যে মুন্সীয়ানা, সেটা তিনি বুঝেন নাই। আলোচনা করলে হাজার পৃষ্ঠা লিখে ফেলা যায়, আপনারা চিন্তা করে দেখতে পারেন। তিনি ধরে ধরে যাকে যেখানে বসিয়েছেন, সে দুই হাতে চুরি ডাকাতি ও সরকারের লস, জনগণের অমঙ্গল করেছেন, আবার সেটা প্রকাশ হলেও তিনি সেই ব্যক্তির শাস্তির ব্যবস্থা করেন নাই, বরঞ্চ তাকে কোলে তুলেছেন। হয়ত এমন দেখে দেখে গলির কুত্তাটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
অনেক কথা অনেক প্রশ্ন, চিন্তায় নানান বিষয় উঠে আসছে। শেষ চিন্তা, তিনি কেমন জাতি বা কেমন দেশ দেখতে ছেয়েছিলেন, মানে দেশের মানুষের কেমন হলে তিনি খুশি হতেন। এর কোন উত্তর নাই, তিনি সৌদি অনুদানে মসজিদ বানিয়েছেন, আবার সেই মসজিদে মুল ইসলামের চর্চা হলে তাদের ধরে নিয়ে জেলে পুরেছেন, আয়নাঘরে উলংগ করেছেন। আবার উলটা চিন্তায় আসি, তিনি মদ্যপানের লাইসেন্স দিয়েছেন, আবার সেইখানে রেড দিয়ে ধরে নিয়ে যাবার ব্যবস্থাও করেছেন। হা হা হা, মানে সহজ চিন্তা, তিনি নামাজ পড়াও পছন্দ করতে পারেন নাই, আবার সকলের মদ্যপানেও উদার হতে পারেন নাই। এটা উদাহরণ হিসাবে দিলাম এই জন্য যে, পুরা জাতি কি নামাজ মুখি হবে, নাকি বিশ্বমুখি হবে তার কোন বার্তা উনার কাছে ছিলো না! রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে তিনি যে কোন একটা সিলেক্ট করতে পারতেন এবং সেটা বাস্তবায়নের পথে যেতে পারতেন, এত এত বছর ক্ষমতায় থেকেও তিনি সিধান্ত নিতে পারেন নাই, কোন দিকে যাবেন!
ক্ষমতায় থাকার সব চেষ্টা তিনি করেছেন এবং তার প্রায় সব ছিলো ভুল পথের চেষ্টা। পুরা ক্ষমতা নিজের হাতে রেখে, কোন গবেষণা ছাড়া নিজ বুঝে যা মনে করতেন তাতেই আদেশ দিতেন, যার বেশির ভাগ জনগণের কোন কাজের কিছু ছিলো না, ফাঁকে একটা শ্রেণী শুধু কামিয়ে নিত, এবং সেটা নিজ উদ্দোগে বিদেশে পাচার করত! কষ্টার্জিত ডলার পাচার হয়ে অন্য দেশ ফুলে ফেপে গেলেও তার কিছু যেন করার ছিলো না। আর বাকী থাকে পাশের দেশ, তিনি না আমরাও একদম দম ধরে বুঝে গিয়েছিলাম, পাশের দেশের দাদাবাবুটা যতক্ষন আছে তত ক্ষন উনাকে কারো কিছু করার নেই! হা হা হা, তিনি তাদের যা দিয়েছেন তা বলার মত না, হিসাবের বাইরে, আদানী চুক্তি সামনে আসাতে এখন অনেকেই বুঝতে পারছেন, আগামীর কোন সরকার চাইলেও এই চুক্তি লস দিয়েও বাতিল করতে পারবে না, মানে চুক্তিতে বাংলাদেশের কোন এক্সজিট নেই!
অনেক আলোচনা, অনেক কথা, ক্ষমতায় গেলে এত বুঝি জ্ঞানহারা হতে হয়! এত দীর্ঘ সময় পেয়েও কোথায় কোথায় হাত দিলে জনগণের তালি পাওয়া যেত, তা বুঝি চোখেই পড়ে নাই! আফসোস, তিনি নিজে ও তার অনুসারী একটা সৎ লোক রেখে যেতে পারেন নাই, যে তার পালিয়ে যাবার পরে দুইটা লাইন জনগণকে বলবে! হ্যাঁ, এই অপকর্মের পরে আসলে বলারই বা কি থাকে!
বাংলাদেশ কেন, দুনিয়ার কোন দেশই এই আধুনিক প্রযুক্তির এই সময়ে এত নিচুজ্ঞানের শাসক কাম্য হয় না, যদিও এখন কেহ এসে যাবে, জনগণ অপেক্ষা করবে, তার রুচি দেখবে এবং আজ বা কাল, তাকেও শেষ করে ফেলবে, আগেই সেই প্রজা এখন আর কোন দেশেই নেই! শেখ হাসিনার জন্য আফসোস, তিনি ইতিহাসের পাতায় এক জগন্য শাসক নিসাবে নিজের নাম লিখালেন, আর এখন তার ঠাই দুনিয়ার কোন দেশেই হচ্ছে না। ্ভিশন ক্লিয়ার না হলে যা হয় আর কি, দূরের কেন কাজেরও অনেক কিছু দেখা যায় না!
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কি বানাতে চেয়ে ছিলেন, আমার ধারনা হয়, তিনি এই বিষয়ে চিন্তাই করেন নাই!
মালিবাগ, ৪ অক্টোবর ২০২৪ইং
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:০০