তৈ গুটিসুটি মেরে বিছানার এক কোণে পড়ে আছে। তীব্র জ্বর তৈ এর সমস্ত স্বত্বাকে একটা ছোট্ট বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে। সেই ছোট্ট বিন্দুটি হল চাঁদ! বিশাল চাঁদ তৈ এর কাছে ছোট্ট একটা বিন্দু! বিগত জ্যোৎস্নার পর থেকে প্রতিটা রাতে যেন চাঁদের আকৃতি একটু একটু করে ছোট হয়েছে, বেড়েছে তিমিরের বিশালতা, সমুদ্রের মতন। গভীর এবং বিশাল। শুধু জ্যোৎস্নার ব্যপ্তি অনেক কমে গেছে। অনেক বেশী রকমের কম!
তৈ আরও গুটিসুটি হয়ে গেল, ভয়ংকর রকমের ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে ওর প্রিয় কবিতাটা আবৃতি করতে... সব ইচ্ছে পূরণ হবার নয়!
আজ অমাবস্যা!
তৈ এর শরীরের উত্তাপ বাড়ছে। বিগত পূর্ণিমার মত শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে... তৈ প্রতীক্ষায় আছে, তিমিরের প্রতীক্ষা! তৈ জানে, তিমির আসবে না! আসবে না আর! তবুও... প্রতীক্ষা!
আজ অমাবস্যা!
জ্যোৎস্নাবীর নূপুর গুলো ঘরের এক কোণে পড়ে আছে, তবুও নূপুরের তীব্র ধারালো শব্দে তৈ এর মাথা ফেটে যাচ্ছে। তৈ এর ইচ্ছে করছে ছুটে ঘর থেকে অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে কিন্তু তৈ জানে এতে সমাধান নেই!
শব্দ নূপুরে নেই, শব্দ তৈ এর আত্মগ্লানিতে, জ্যোৎস্নাবীর দীর্ঘশ্বাসে এবং তিমিরের বিস্ময়ে!
বিগত পূর্ণিমার পর বন্ধুত্যাগে তৈ তারও বিগত বেশ কিছু পূর্ণিমার ক্ষতের ইতি টেনেছিল। পূর্ণিমার ইতি, জ্যোৎস্নার ইতি এবং জ্যোৎস্নাবীর ইতি। পৃথিবীতে তিমিরের রাজত্ব, অমাবস্যার রাজ।
জ্যোৎস্নাবীর শূন্যে মিলিয়ে যাবার কিছু মুহূর্ত পরই তৈ বুঝেছিল তৈ এর সমস্ত স্বত্বাও মিলিয়ে যাবে, কারন তৈ এর সমস্ত সঞ্চয় জ্যোৎস্নায়, তিমিরে নয়।
চাঁদের আলো যত খানি কমেছে, তৈ এর শরীরের উত্তাপ তত বেড়েছে। শুধু সে রাতের পর আর তিমিরের দেখা মেলেনি! তীব্র জ্বরে চাঁদে কেন্দ্রীভূত হতে থাকা চোখ দুটিতে অন্ধকারের নরম স্পর্শ মেলেনি, দীর্ঘদিন ক্লান্ত হয়ে যাওয়া ভেজা গালে রাতের ভালবেসে আলতো করা ঠোঁট মেলেনি!
শুধু রাতের পর রাত প্রকট হয়েছে জ্যোৎস্নাবীর নূপুরের শব্দ!
যদিও এই শব্দ নূপুরে নেই, শব্দ তৈ এর ব্যর্থতায়, জ্যোৎস্নাবীর তীব্রতায় এবং তিমিরের প্রতিশোধে!
এই সিরিজের আগের লেখা দুটিঃ
Click This Link
Click This Link
উৎসর্গঃ আমার প্রিয় সমুদ্রকন্যা আপিকে।
যখন লেখালিখি পুরোপুরি বাদ দিয়ে আমি অলেখক থেকে একেবারে নালেখকে পরিণত হয়ে গেছি, তখনই জানতে পারলাম এখনও কারও মন খারাপ হলে আমার লেখা পড়তে ইচ্ছে হয়! সেদিনই মনে হয়েছিল আমি যাই লিখি, অন্তত একজনের তো এত ভাল লাগে! কেউ তো আমাকে বলে টুকি আবার লিখো! সেদিন আমি আপিকে বলেছিলাম আমি আবার লিখবো, আপির জন্য হলেও শেষ একবার লিখবো। সেই দুঃসাহস আজ করে লিখে ফেললাম! জানি না কেমন হয়েছে, জানার তেমন আগ্রহ নেই, শুধু সমুদ্রকন্যা আপির ভাল লেগে গেলে মনে করবো আমি এখনও অলেখক হবার যোগ্য। নালেখক হবার থেকে অলেখক হওয়া ভাল।