‘আসলেই কি কিচ্ছু হয়নি? একটা সম্পর্ক, দীর্ঘদিনের সম্পর্ক টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পরে আছে, আমাদের কোন রা নেই, তবু কিচ্ছু হয়নি!...’
ওহ! অস্থির লাগছে খুব। ঘড়ির দিকে তাকালাম, ৫টা বাজতে চল। নাহ, এভাবে সম্ভব না। উঠে পরতে হবে, অক্সিজেনের অভাববোধটা তীব্র হচ্ছে আরও, তার থেকেও ভয়ংকর তীব্রভাবে শূন্যতা বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে সব গুলিয়ে যাবে। মনের ঝড়কে পাত্তা দিতে নেই। ঝড় চলুক, তবু স্থির হয়ে, শান্ত হয়ে বসে ভাবতে হবে কি করা যায়। বারবার ফ্যানের দিকে চোখ চলে যাচ্ছে, এই শীতের রাতে আমার এত গরম লাগছে কেন!
কি করা যায়! একটা চিঠি, হ্যাঁ, একটা চিঠি লেখা যেতে পারে! কিন্তু কাকে! যাকে একসময় চিঠির পর চিঠি না দিলে অভিমান করে বসে থাকতো, সে মানুষটিকে? এখনও কি তাঁর এই চিঠির জন্য আবেগ থাকবে! না থাকুক, লিখে চুপচাপ আবার ছিঁড়ে ফেলে টুকরো কাগজ গুলো উড়িয়ে দেয়া যাবে, ক্ষতি কি!
প্রিয় মানুষ,
নাহ! হচ্ছে না! আমি চিঠি লেখাও কি করে ভুলতে পারি!
হ্যাঁ, আমি ভুলে গেছি। আমি দিব্যি চিঠি লেখাও ভুলে গেছি। জানিস, আজ থেকে ঠিক কয়েকমাস পর আমি তোকেও ভুলে যাব? তুই শুধু একটা খণ্ড স্মৃতি হয়ে পরে থাকবি আমার মাথার ভেতর। নিউরনের যেই সেলে তোর নাম্বারের প্রতিটা ডিজিট জমা আছে, একদিন সেসব খালি হয়ে যাবে। আমি অনেক মনে করেও আর পারবোনা কোনদিন তোর মুছে ফেলা ডিজিট গুলো উদ্ধার করতে!
তোকে নিয়ে লেখা গল্প কবিতা গুলো জমা থেকে যাবে, শুধু তোর জন্য যে তীব্র আবেগ ছিল সেসব খুঁজে পাবোনা আর কোনদিন। আজকাল অনেক পুরাতন ডায়েরি হাতে নিয়ে যেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়, তুই ঠিক সেরকম অদ্ভুত অনুভূতি হয়ে থেকে যাবি। পুরাতন ডায়েরীর পাতার মতন, মলিন কিন্তু ঝকঝকে লেখার মতন।
আচ্ছা, তোর মনে পড়ে তো আমাকে? রাত জেগে তোরও কি এমন হাস ফাঁস হয়? তোরও কি ইচ্ছা হয় আমাকে চিঠি লিখতে? ইচ্ছা হয় তীব্র শূন্যতা বোধে আমার হাতটা শক্ত করে চেপে রাখতে? লিখিসনা তুই চিঠি? কাগজের ফুল বানিয়ে উড়িয়ে দিস না? নাকি সিগারেটের ধোঁয়ায় ইচ্ছা গুলোকে পুড়িয়ে ফেলিস! আমার জন্য করা আবেগ অনুভূতি গুলো ময়লা বিছানার ক্লান্তির মত পরে থাকে তোর ধোঁয়াবাক্সে?
শোন, তোকেও আমি ফুল চন্দন করছি না আর। তুইও আজকাল আমার কাছে ভীষণ তুচ্ছ। দেবতার আসন থেকে নামিয়ে দিয়েছি, তুই আর সেই স্বেচ্ছাচারী নেই, ইচ্ছে হলেই ভালবাসবি, ইচ্ছে হলেই বাসবি না তা হবেনা। তুইও এখন বড্ড বেশী সাধারণ। বাকি আর পাঁচটা ছেলের মতন, খুব সাধারণ। তোর চাহনি, ছোট্ট করে বাঁকা হাসি কিচ্ছু টানবে না আর আমাকে, তোর উথাল পাথাল সমুদ্রে মাতাল হব না আমি আর, আমার মুখে কোনদিন আর তো নাম আসবে নারে! শুধু আজ থেকে কয়েক বছর পর যখন তোর কোলে ছোট্ট একটা তুই দেখবো তখন ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে তুই মিশে যাবি আমার জীবনের সাথে। সেই ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস হয়েই তুই থেকে যাবি দিনের পর দিন, আজীবন।
আমি তোর পাঁজরের ভেঙ্গে যাওয়া হাড়।
তোর থেকে চুড়ি যাওয়া পাঁজরের হাড় ফিরিয়ে দিলাম তোকে।
সাড়ে ছয়টা বাজতে চলল! আমি মেয়েটা খুব অস্বাভাবিক! এত রাত করে শুধু শুধু জেগে বসে আছি! ওমা! এ কি! অশ্রু! হাহাহা, খুব হাসি পায় আমার। এসব পাগলামো কি এখন মানায়! আমি উঠে পড়লাম, চিঠিটা ছেড়ার সময় হয়ে গেল। টুকরো করে শুধু উড়িয়ে দেবার কাজ। সাদা ফুলের বৃষ্টিতে স্নান সেরে ঘুমাতে হবে আমার, অনেক দীর্ঘ একটা ঘুম। সহস্র শতাব্দীর ঘুম। খুব ক্লান্ত আমি, খুব বেশী ক্লান্ত। ঘুমঘরে পৌঁছানোর অপেক্ষা শুধু!
যারা এটা পড়েননি- Click This Link