- অথবা আজ কেবলই ভালবাসা হতে পারতো! আজ হত তোমার আমার রাত! আজ হতে পারতো আমাদের রাত। উষ্ণ রাত হত উষ্ণতর! নিস্তব্ধ রাতে বুনতাম ডাহুকের সুর! জ্যোৎস্নায় ভিজে জোনাকি গুনতাম! গৃহপালিত ফুল গুলোকে বুনো গন্ধে সাজাতাম! প্রজাপতি গুলোও মাতাল হত, তোমার আমার প্রেম চুম্বন আবেশে!
হল না! হল না আজ প্রেমচুম্বনে আবদ্ধ হওয়া! হল না চারফালি ঠোঁটের সুমিষ্ট বন্ধন! কেবল চোখ জোড়া দেখে গেল বাঁকা ঠোঁটে উথলে ওঠা অভিমান!
-আজ পূর্ণিমা! আজ বিচ্ছেদের উত্তম রাত!
- অথবা আজ কেবলই গান হতে পারতো! তোমার সুর ধরে রবীবাবু আসতেন, তোমার গলায় সাজাতেন আপন শব্দ! অথবা তপ্ত বুকের ওঠানামায় উঠে আসতো কবিতা! গুণবাবুর উত্তপ্ত প্রেমের কোন কবিতা! তোমার এক চিলতে বারান্দায় পুনর্জীবিত হত সহস্র শতাব্দীর প্রেম! তোমার ঘাড় জুড়ে ছড়িয়ে থাকা চুলকে সরিয়ে তোমার মাঝে ছড়িয়ে দিতাম আমার ভারী হয়ে আসা নিঃশ্বাস! তুমি হতে পারতে বেহালার সুরের মত, বিষণ্ণ, অথবা হয়ে যেতে আমার কবিতার স্বচ্ছ সাদা পৃষ্ঠা! তোমাতে ইচ্ছে মতন সাজাতাম টুংটাং গুলো, অথবা হত কবিতার আঁকিবুঁকি! তুমি বেজে উঠতে আপন ছন্দে, অথবা পতনে পরে থাকতে আমার খেই হারানো কবিতার মতন!
হল না! আজ কিছুই হল না! কবিতা ,গান! সব পরে থাকলো ধুলো জমানো পুরাতন চিঠির মতন! আবেগের কিন্তু বড্ড অযত্নের! ভালবাসার কিন্তু বড্ড অবহেলার! শুধু থেকে গেল সেই ঠোঁটের কোনের উথলে ওঠা সেই অভিমান!
চাঁদ ও জ্যোৎস্নার কথোপকথন-
-আমি পূর্ণিমা চাইনা, আমি জ্যোৎস্না ছোঁব না!
-কেন!
-জ্যোৎস্নাবীর আজ খুব কষ্ট তাই!
-এসো, একা হয়ে যাই। ভীষণ রকম একা!
-আমরা প্রত্যেকেই আলাদা করে ভীষণ একা! তুমি নও? কে তুমি?
- আমি নরম রোদবিন্দু! নরম স্বচ্ছ রোদ বিন্দু! দিগন্তকে ভালবেসেছিলাম! দিগন্তের হাত ধরে ছেড়েছিলাম আপন ঘর! পথ ভুলেছি! ফিরে যাওয়া হয়নি সূর্যের কাছে! এখন আমি চাঁদের আলো সেজে ঘুরে বেড়াই! এ পথ ও পথ! মাঝে মাঝে টুকরো জ্যোৎস্না হয়ে পরে থাকি এ পাড় ও পাড়! কোন অভিমানী বালিকা পা মাড়ালেই টুপ করে হয়ে যাই তাঁর পায়ের নূপুর!
-তারপর?
- কোন এক অভিশপ্ত রাতে অভিমানী বালিকা মেতে ওঠে বিধ্বংসী খেলায়! ক্রোধ গুলো উত্থেলিত হতে থাকে বালিকার নাচের প্রতিটি মুদ্রায়! আমি ছিঁড়ে যাওয়া নূপুরের মতই ছিটকে আসি বালিকার পা থেকে! আমার আলো গোলক গুলো ভেঙ্গে যেতে থাকে! আমার সমস্ত আলো ছড়িয়ে পুরো রাতকে ঢেকে ফেলে! আমি হয়ে যাই অভিশপ্ত জ্যোৎস্না! কোন এক অভিমানী জ্যোৎস্নাবীর প্রেমে অভিশপ্ত জ্যোৎস্না! আমার সমস্ত আলো শুষে নেয় রাত! আমি পরে থাকি, ভেঙ্গে যাওয়া নূপুর অথবা শুধু কাঁচের টুকরো হয়ে! আমাকে নিঃশেষ করে আলো গুলো ছড়িয়ে যায়! আমার দীর্ঘশ্বাসে জন্ম হয় পূর্ণিমার! পূর্ণিমা! আর থেকে যায় আর্তনাদ, দীর্ঘশ্বাস, অভিশাপ! পূর্ণিমার গায়ে লেগে থাকে!
সেই থেকে অভিশপ্ত জ্যোৎস্নাবীর আর ভালবাসা হয় না! ভালবাসা হয়না পূর্ণিমায়! সমস্ত পৃথিবী যখন প্রেম নিয়ে কাব্য লেখে পূর্ণিমায়, জ্যোৎস্নাবী তখন অভিশপ্ত জ্যোৎস্নার মত প্রেম হারায়! বিষাদে আক্রান্ত হয় ভালবাসা! লিখে ফেলে জ্যোৎস্নার জন্মগাঁথা! লিখে ফেলে-
আজ পূর্ণিমা! আজ সত্যিই বিচ্ছেদের উত্তম রাত!
(আবার প্রথম থেকে পাঠ শুরু হতে পারে!)
উৎসর্গঃ আমার ভীষণ রকম প্রিয় তিতির পাখি! তিতির আপুকে! ওনার খুব ইচ্ছে জ্যোৎস্নাবীর সাথে জ্যোৎস্নার পথ চিনে নেবার! জ্যোৎস্নাবী সেই পথ চিনিয়ে দিল!
আর আমার প্রিয় অভিশপ্ত জ্যোৎস্নাকে! আজ পূর্ণিমা! আজ আমার রাত ছিল! বারান্দায় বসে জ্যোৎস্না দেখে দেখে নতুন করে নিজেকে সাজালাম! নতুন ভাবে! আজ সত্যিই আমার রাত! আজ পূর্ণিমা, আজ সত্যিই বিচ্ছেদের উত্তম রাত!