বাংলাদেশে এই মুহূর্তে টিভি চ্যানেল আছে প্রায় বিশ টি।
ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা আই এস পি আছে কয়েকশ।
রেডিও স্টেশন আছে দশ টার উপরে। আরও আসছে।
তাছাড়া ভি-স্যাট সার্ভিস তো আছেই।
এমনি আরো অনেক কারনেই বাংলাদেশে স্যাটেলাইটের ব্যাবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বিটিআরসির হিসাবে, প্রতিটি টিভি চ্যানেল স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ডলার দিয়ে থাকে। বর্তমানে ১৯টি টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪০ লাখ ডলার ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে।
এক হিসাব থেকে দেখা গেছে, দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন ও রেডিও বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়ায় ব্যবহার করে। এতে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গুনতে হয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু করতে পারলে দেশে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয় হবে না, সেই সঙ্গে অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ আয় করা যাবে।
যা আমাদের দেশের টাকা এবং কষ্টার্জিত মুল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে।
অনেক সময় টাকা পাচার বা মানি লন্ডারিং এর মত গুরুতরো অভিযোগ ও আছে এই খাতে।
বাংলাদেশের নিজস্ব উপগ্রহ চালু করতে পারলে ভাড়া বাবদ অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
প্রধানত নিম্নলিখিত যেসব কারনে স্যাটেলাইট এর ব্যবহারঃ
১। মহাকাশ বা জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা
২। আবহাওয়ার পূর্বাভাস
৩। টিভি বা রেডিও চ্যানেল, ফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তি
৪। নেভিগেশন বা জাহাজের ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনায়
৫। পরিদর্শন - পরিক্রমা (সামরিক ক্ষেত্রে শত্রুর অবস্থান জানার জন্য)
৬। দূর সংবেদনশীল
৭। মাটি বা পানির নিচে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে
৮। মহাশূন্য এক্সপ্লোরেশন
৯। ছবি তোলার কাজে, সরকারের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ
১০। হারিকেন, ঘূর্ণিঝড়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর পূর্বাভাস
১১। আজকাল সন্ত্রাসীরা অনেক রিমোট এরিয়া তেও স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করছে।
১২। গ্লোবাল পজিশনিং বা জি পি এস
১৩। গামা রে বারস্ট ডিটেকশন করতে
১৪। পারমাণবিক বিস্ফোরণ এবং আসন্ন হামলা ছাড়াও স্থল সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য ইন্টিলিজেন্স সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা পেতে।
১৫। তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিভিন্ন খনি্র সনাক্তকরণ ইত্যাদি
১৬। ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করা
উপরের বিভিন্ন কাজের জন্য অবশ্য বিভিন্ন আলাদা রকমের স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়। একটি স্যাটেলাইট দিয়েই সব কাজ হয় না। তথাপি আমাদের মত গরিব দেশের জন্য টিভি চ্যানেল আর ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচটা সাশ্রয় করতে পারাও কম না।
আশা করা যায় যে মাত্র তিন থেকে ছয় বছরেই এই স্যাটেলাইট পাঠানোর সকল খরচ উঠে আসবে।
বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধু-১ নামে একটি স্যাটেলাইট উপগ্রহ পাঠানোর কাজ অনেক আগেই শুরু করছে। এর জন্য ৮৫ কোটি টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ কোম্পানিকে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দিয়েছে।
এই মুহূর্তে বিশ্বের ৫৫ টি দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে।
বাংলাদেশ সহ ২৪ টি দেশ নিজস্ব স্যাটেলাইট পাঠানোর চেষ্টা করছে। এখানে উল্লেখ্য যে ভারত ১৯৭৫ সালে Aryabhata নামের উপগ্রহ পাঠায়। আর পাকিস্থান ১৯৯০ সালে Badr-1 নামের উপগ্রহ পাঠায়। বর্তমানে এই দুইটি দেশের একাধিক উপগ্রহ আছে।
এমনকি ভিয়েতনাম, ইন্দনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, কলম্বিয়া, মউরিতাস, কাযাগাস্তান এর ও নিজস্ব উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট আছে।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হল- মায়ানমার, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়ার মত দেশ ও নিজস্ব স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে।
সো আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো?
কিন্তু অতিব দুর্ভাগ্যের বিষয় হলও বিশ্বের ২০ টির ও বেশী দেশ আমাদের স্যাটেলাইট স্থাপনের সম্ভাব্য অবস্থান(মহাকাশে নির্ধারিত স্থান) নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আনুমানিক ৩০০০(তিন হাজার কোটি টাকা লাগবে বলে ধারনা করা হচ্ছে)। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যেই এর কাজ সম্পন্ন হতে পারে। দেখা যাক কি হয়। এই কাজ তরান্বিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিটিআরসি তে একটি টিম তৈরি করেছে বলে জেনেছি।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনে বীমা করার সিদ্ধান্ত ও নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত এটা বলতে পারি স্যাটেলাইট পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেরিতে হলেও ভালই হবে।
পরিশেষে এর সফল উৎক্ষেপণ ও সফল কার্যকারিতা কামনা করি।
ব্লগ
নিউজ পেপার
জনকণ্ঠ
আরেকটা
কম্পিউটার জগত
বি টি আর সি
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৫০