প্রথম পর্বঃ অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন পদ্ধতি-১
কি কারণে জানি না, প্রথম পর্বটা সঙ্কলিত/ক্রমানুসারে পোস্ট অংশে আসছে না । যাইহোক, সাহস করে দ্বিতীয় পর্ব দিচ্ছি। এ পর্বে অস্ট্রেলিয়া স্টুডেন্ট ভিসা'র জন্য ফান্ডের ধরণ এবং আবেদন পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে লিখছি।
ফান্ডের ধরণঃ ফান্ড হিসেবে একজন আবেদনকারী স্কলারশীপ, ফিক্সড ডিপোজিট, ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সঞ্চয়পত্র (জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো বা পোস্ট অফিস থেকে নয়) অথবা লোন দেখাতে পারবেন। এগুলো আবেদনকারীর নিজের অথবা তার স্পন্সরের নামে ইস্যু করা থাকতে হবে।
-ফিক্সড ডিপোজিট বা সঞ্চয়পত্র কে ফান্ড দেখালে সেটা কমপক্ষে ছয় মাস ব্যাঙ্কে থাকতে হবে, এর বিপক্ষে কোন লোন বা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি থাকতে পারবে না এবং এই ফিক্সড ডিপোজিট/সঞ্চয়পত্র থেকে উক্ত ছয় মাসের মধ্যে টাকা উঠানো বা যোগ করাও যাবে না।
-যদি কোন কারণে এরূপ ফিক্সড ডিপোজিট বা সঞ্চয়পত্র না করা থাকে, তাহলে একটাই উপায় আছে, সেটা হল লোন। এক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকার বেশি শিক্ষা লোন সাধারণত নেওয়া যায় না। কাজেই কেউ যদি পুরো ফান্ড হিসেবে লোন দেখাতে চান, তাহলে ফান্ড থেকে কিছুটা বেশি টাকার একটা নুতন ফিক্সড ডিপোজিট করে সেটাকে সিকিউরিটি দেখিয়ে ওভারড্রাফট লোন নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে ফিক্সড ডিপোজিট এর ৯০%-৯৫% পর্যন্ত লোন নেওয়া যায়, ব্যাঙ্ক ভেদে। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে ফিক্সড ডিপোজিট এর অর্থের উৎস যেন গ্রহণযোগ্য হয়। যেমন-বাড়ি/জমি বিক্রির টাকা, সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানো'র পরে প্রাপ্ত টাকা ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে যে কোন ব্যক্তিগত লোন বা উপহার হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ কখনোই ফিক্সড ডিপোজিট এর অর্থের উৎস হতে পারবে না।
মোটকথা, ফান্ডের সাথে সম্পর্কিত সকল লেনদেন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে করা হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র অবশ্যই থাকতে হবে।
আবেদন পরবর্তী ধাপ-সাক্ষাৎকারঃ
VFS এ আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পরে যদি দূতাবাসে সাক্ষাৎকার প্রদান করতে হয়, সেক্ষেত্রে জমা দেওয়ার দিনেই তা আবেদনকারীকে জানিয়ে দেওয়া হয়। সাক্ষাৎকারের দিনে মূলত আবেদনকারীকে তার কাগজপত্র সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়, এতে কোন সমস্যা থাকলে তা ঐদিনই আবেদনকারীকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
প্রি-ভিসা এ্যাসেসমেন্টঃ
সাক্ষাৎকারে প্রাপ্ত সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ৪-৮ সপ্তাহের মধ্যে আবেদনকারীকে একটি প্রি-ভিসা এ্যাসেসমেন্ট লেটার ইমেইলে পাঠানো হয়, যাতে সাধারণত আবেদনকারীকে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটারে উল্লেখিত টিউশন ফি (ওভারসীজ স্টুডেন্ট হেলথ কভার ফি সহ) জমা দিয়ে প্রাপ্ত কনফার্মেশন অফ এনরোলমেন্ট (সিওই) লেটার VFS এ নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। এছাড়াও প্রি-ভিসা এ্যাসেসমেন্ট লেটারে ফান্ড সঙ্ক্রান্ত অতিরিক্ত কোন কাগজ যেমন লোন ডিসবার্সমেন্ট লেটার (যাতে লোন এ্যাকাউন্টের বিশদ বিবরণ থাকে-এটা মূলত লোন সার্টিফিকেট), লোন এ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট ইত্যাদিও জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হতে পারে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ
অস্ট্রেলিয়া দূতাবাস অনুমোদিত চিকিৎসা কেন্দ্রে ভিসা আবেদনকারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়। এ সংক্রান্ত সকল নির্দেশাবলী প্রি-ভিসা লেটারে দেওয়া থাকে। এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল সরাসরি অনুমোদিত চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ২ কর্মদিবসের মধ্যে।
ভিসা সিদ্ধান্ত, পাসপোর্ট ও কাগজপত্র সংগ্রহঃ
প্রি-ভিসা এ্যাসেসমেন্ট লেটারে চাওয়া সকল কাগজপত্র vfs এ জমা দেওয়ার সাধারণত ১-৪ সপ্তাহের মধ্যে ভিসা'র সিদ্ধান্ত ও আবেদনপত্রের সাথে জমাকৃত সকল মূল কাগজপত্র (স্পন্সরের এ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট, লোন ডিসবার্সমেন্ট লেটার ইত্যাদি বাদে) মুখবন্ধ খামে VFS এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপরে VFS থেকে আবেদনকারীকে ফোন করে এই খামটা সংগ্রহ করতে বলা হয়। কাজেই যতক্ষণ পর্যন্ত খাম খুলে ডিসিশন লেটার ও পাসপোর্ট না দেখা যাবে, ততক্ষণ এমনকি VFS থেকেও ভিসা'র সিদ্ধান্ত জানা যাবে না।
--------------------------------------------------------------------
সবরকম ঝামেলা এড়ানোর জন্য ক্লাস শুরু হওয়ার অন্তত ৪ মাস আগে ভিসা আবেদন করা উচিৎ। তাহলে দেখা যায় যে ভিসা পেয়ে যাওয়ার পরেই টিকেট বুকিং দেওয়া যায়, আন্দাজে আগে আগে বুকিং দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অস্ট্রেলিয়া'র ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া যদিও শুনতে বেশ জটিল মনে হয়, তবুও সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি একবার বুঝে নিলে নিজে নিজেই আবেদন করা যায়, কোন এজেন্টের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদ, লেখাগুলো পড়ার জন্য
(শেষ)