কয়েক বছর আগেও সারারাত জেগে থেকে কাটাতাম,
ভোরবেলা ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে রক্তলাল চোখ দুটো সরিয়ে
পাশের রুমে খোঁজ করতাম একটা গোল্ড লিফ হবে কি না
এখন সারারাত জেগে কাজ করতে হয়
সারা রাত, আমার সাথে আর কেউ জাগেনা
সমস্ত অফিসে আমি একা জেগে থাকি,
মাথায় প্রচন্ড ব্যথা হয় মাঝে মাঝে তবুও ভালো লাগে
কারণ ভোর পাঁচটা বাজে ঘুম ঘুম চোখে আমি দেখবো মাথার উপর
শামুকখোল পাখির ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে
দেখে টেরোডাকটিলের মতো লাগে
কাঠঠোকরা আর মেঘহও মাছরাঙ্গার ডাক শুনতে একই রকম লাগে
শুধু ভোর ছটায় আমি জেগে থাকতে চাইনা
ভোর ছটা মনে করিয়ে দেয় ছয় বছর আগের কথা
তোমার বাড়ির জানালা গলে আমি বেড়িয়ে আসছি
তোমার ভাই জেনে গেছে সব, পাগল সে
পালাচ্ছি আমি নিশ্চিৎ মানহানির হাত থেকে বাঁচতে
ও না, জানালা দিয়ে আমি বেড়োইনি
রাতে দেখা সিনেমার দৃশ্য সেটা; আমাদের দেশে জানালায় গ্রিল থাকে
আমি দরজা দিয়েই ঢুকেছিলাম; শুধু জুতা অভ্যাসমতো বাইরেই রেখেছিলাম
আর তাতেই ধরা পড়ে গিয়েছিলাম, যখন তোমার বাবা এসে দেখে অচেনা জুতা রাখা বাইরে
তবে পালাইনি আমি, কত মিথ্যে শিখিয়েছিলাম তোমাকে;
ঠিক ঠিক নানা বাহানা আর ছল করে পার পেয়ে গিয়েছিলাম দুজনই
তবে যাবার পালা ঠিকই আসলো
পরদিন ভোর ছটা বাজে, রাত তখন অন্ধকার; অন্ধকারে জোনাক জ্বলে
জ্বলে টর্চের আলোয় শেয়ালের চোখ, হরিণের ডাক
হরিণের ডাকে মনে পড়ে যায় প্রথম তোমার বাসায় যাবার কথা
"একটা রাস্তা ডানে গেছে, একটা রাস্তা বামে, যেটা বেশি উঁচু সেটা দিয়ে আমার বাসা"
সহজ কথা, তোমার ডাক এসেছে, যাও খুঁজে নাও প্রেয়সী কোথায় তোমার
আমি ভুল রাস্তায় গিয়েছিলাম, আর নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম বৃষ্টিস্নাত প্রান্তরে
সেখানে হরিণেরা মানুষের সাড়া পেয়ে কান খাড়া করে দাঁড়ায়
আমি হতবিহবল হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, তোমার বাসায় যাবার রাস্তাই স্বপ্নে মোড়া
তুমি কি সত্যি? নাকি তুমিও কল্পনা?
সেদিন কৈশোর এর খোলস ঝেড়ে ফেলে পান করলাম অনন্ত জীবনের স্বাদ
তোমার ঠোঁটের স্পর্শ আমার ঠোঁটে, আর আমার সমস্ত শরীর শুষে নিয়েছে তোমার প্রাণ
নগ্ন বাহু বৃষ্টিস্নাত নগ্ন বুক, আর ছিলো আমার সমস্ত প্রাণ, তখনও হারায়নি কিছু
ভোর ছটা বাজে জোনাকীর আলোয় তুমি নেমেছিলে বিদায় দিতে
মনে হয় ভোর ছটা না, সন্ধে ছটা
ভোরবেলা জোনাকীরা থাকেনা, তখন আলো জ্বালায় মাথার ভেতরের পোকা গুলো
সহস্র হুল ফুটিয়ে মনে করিয়ে দেয় যে সেটাই আমাদের শেষ দেখা ছিলো
আর দেখা হবেনা, আর দেখা হবেনা- আর দেখা হবেনা।
আশ্চর্য অনুভূতি, থামো তুমি হে যুবক, জীবনে বাদ আছে কী তোমার?
আবার এসেছে প্রেম, যে জীবন ভেবেছিলে থেমে গেছে বিদায়ের সাথে
সিগারেটের ধোঁয়া আর হুট করে পাওয়া টাকায় কেনা ভদকা
তবুও জায়গা রেখেছিলো আরো কিছু প্রেমের
কিছু টুকরো প্রেম, কিছু প্রেমহীন সাধনা
আর একটা মস্ত বড় সম্পর্কের জটিলতা, আমি আবার প্রেমে পড়েছিলাম
এখন আমি আত্মতৃপ্ত, সমস্ত সাধ পূরণ হয়েছে আমার, বাদ রাখিনি কিছুই
এখন আমি অনেক সুখী কোনই খেদ নেই আমার
তবু আমি ভোর ছটায় জেগে থাকতে চাইনা
আর মনে করতে চাইনা কী স্বাধীন ছিলাম তখন
কিচ্ছু ভাবিনি, কিচ্ছু বুঝিনি, শুধু প্রেমে পড়েছিলাম জন্য ভালোবেসেছিলাম
অমন স্বাধীনতা এখন আর পাবোনা
তোমাকে আর ভালোবাসিনা প্রথম প্রেম,
তুমি স্বাধীনতা নিয়ে গেছ আমার, ভালো না তুমি
মাঝে মাঝে শুধু মনে করবো তোমাকে, আর শামুকখোল পাখিদের দেখে ডাইনোসর মনে করে ছবি আঁকবো
আর গান লিখবো, আমার প্রিয়তমা কে শোনাতে।