somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হামাগুড়ি (কল্পগল্প)

০৭ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
খুব সাধারণ ব্যপারই মাঝে মাঝে মানুষকে এমন ভাবিয়ে তোলে ভাবলে অবাক লাগে! এই যেমন এখন সুমন বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। আসলে একটু ভয় ভয়ই পাচ্ছে বুঝি। যে মামুলি ব্যপারটা এই অস্বস্তির সুচনা করেছে যেটা নিয়ে অন্য কোন পরিবেশে ভাবলে হয়তো নিজেই হেসে উঠতো। কিন্তু এখন এই ঝি ঝি নীরবতায় সব কিছু ঠিক ‘ভাল' লাগছে না।

এসেছে সে মনিরামপুর। যশোরের একটা থানাসদর। নামেই পৌরসভা। আসলে অজপাড়া গা। কয়েকটা দালান বাড়ি অবশ্য আছে। কোন হোটেল মোটেল নেই। পৌছতে পৌছতে পুরো রাত হয়ে গেছে। ঘড়িতে অবশ্য বাজে সাড়ে সাতটা। এখন দিন ছোট। অফিস থেকেই একটা ব্যবস্থা করেছে থাকার। অনেকটা পেইং গেস্ট এর মত। দুই দিনের ট্যুর। একটু আগে শিরিণ ফোন করেছিল। ঠিক মত পৌছেছে কিনা সেসব খোজ খবর নিল।

থাকার ব্যবস্থা ভালই। দক্ষিন মুখি একটা ঘর বরাদ্দ হয়েছে তার জন্য। ঘরের জানালা দিয়ে একটা জবা গাছ দেখা। গাছে অনেক গুলো জবা ফুটে আছে। রক্ত জবা। চাঁদের আলোয় মনে হচ্ছে কালো। সেদিকে তাকিয়ে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল সুমনের। তাদের নিজেদের বাড়িতেও এরকম একটা জবা গাছ ছিল। খুব ভোরে কখনো সুপ্রিয়াদি কখনো কাজলামাসি আসতো ফুল নিতে। পাঁচিলের ওপাশ থেকেই ফুল টেনে নিত। তার বাবা প্রতিদিন ফজরের নামাজে সময় বেগানা মেয়েছেলের ফুল নিয়ে টানা টানি দেখে বিরক্ত হত খুব। একদিন তো একটা দাঁ নিয়ে কুপিয়ে কেটেই ফেললো পুরো গাছ। তার বাড়ির গাছে উঠে হিন্দুমেয়েরা বেল্লেলা পনা করবে! আর গাছের ফুল নিয়ে সকাল বিকাল শীবের গাজন গাইবে! এইসব তার সহ্য হয়নি বেশিদিন...

এসব ভাবছিল সুমন। হঠাৎ করেই পাচিলের ওপাশ থেকে একটা হাত এসে টুক করে একটা ফুল ছিড়ে নিলো! ব্যপারটা ভাল করে দেখার জন্য কিছুটা এগিয়ে গেল সে। তখন সেই হাতটা উকি দিল আবার। এবার আর ফুল ছিড়লো না। কেমন যেন ইশারা করতে লাগলো। কিছু একটা বলতে চাইছে যেন! কমিউনিকেশনের ব্যপারে সুমন একটু কাঁচা। ইঙ্গিত-ইশারা এসব বোঝেনা তেমন। তারপরও চেষ্টা করতে লাগলো বোঝার। কয়েকবার ‘কে কে’ করে উঠলো। সাড়া এলনা কোন। তারপর এক সময় মনে হল কিছুটা যেন বুঝতে পারছে। হাতটা তাকে বলতে চাইছে। ‘এখানে থেকোনা। বেড়িয়ে পড় তাড়াতাড়ি’। অবশ্য মনের ভুলও হতে পারে। হাতটা হারিয়ে গেল এর পর। অন্ধকারে।

আর তখনই অস্বস্তি টা শুরু হল। অসংগতি গুলো চোখে পড়েছিল শুরুতেই। এবাড়িতে যখন সে ঢোকে, তখনই দরজা খুলে কেমন ঝুকে দাঁড়িয়ে ছিল বয়স্ক মহিলাটা। বুড়ো মানুষ অবশ্য এভাবেই দাঁড়ায়। বসার ঘরে টিভি। টিভি দেখছে এবাড়ির একটা মেয়ে। মেঝেতে মনে হয় কাজের মেয়ে বসে আছে। সেও টিভি দেখছে। তার অনাহুত উপস্থিতি তে যেন একটু বিরক্ত হল তারা। মেয়েটা টিভির সামনের সোফা ছেড়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলে গেল রুমের অন্যপাশে। আরেকটা চেয়ারে উঠে বসল। ফুটফুটে একটা মেয়ে। কিন্তু পায়ে কোন সমস্যা আছে মনে হয়। এসব ভাবতে ভাবতে সে ফিরলো সেই বুড়ি মহিলার দিকে। বুড়িও দরজা আটকিয়ে ফিরে আসছে এদিকে। ঝুকে হাত দিয়ে মাটি ছুয়ে ফেলেছে প্রায়। যেন হামাগুড়ি দিচ্ছে। এজন্যই এ বয়সে লাঠি ব্যবহার করা উচিৎ। বুড়ির লাঠি মনে হয় আছে অন্য কোথাও। তার সাথে চোখাচোখি হতেই আবার উঠে দাড়ালো বুড়ি। একটু কুজো হয়ে।

ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়েও একই রকম ব্যপার দেখলো সুমন। বুড়িটা হামাগুড়ি দিয়ে সুড়ুত করে চলে গেল রান্না ঘরের দিকে। একটা মধ্যবয়সী লোকও অবিশ্বাস্য দ্রুততায় এক রুম থেকে আরেক রুমে চলে গেল। হামাগুড়ি দিয়ে। সুমন একটু অবাক হল। এবাড়ির লোকদের সবারই কি পায়ে সমস্যা। দাড়াতে তো পারে ঠিকই। অবশ্য একটু ঝুকে দাড়ায়। আর পা ফেলতে গেলে টাল মাল করে। অস্বস্তিকর বিষয়। তাই রাতে খাবার সময় এই প্রসংগ তুললো না। অবশ্ টেবিলে কথাও হয়নি তেমন। আর তখন ব্যপারটা অত অস্বাভাবিকও মনে হয়নি। যতটা মনে হচ্ছে এখন।

রুমের বাইরে সর সর এক ধরনের শব্দ হল যেন। আবারো মনে হয় কেউ হামাগুড়ি দিচ্ছে। একটু তৃষ্ণা পায় তার। খাবার ঘরে পানি আনতে গিয়ে দেখে জগে পানি নেই। পিছন দিকে সরসর শব্দটা হয় এবার। চকিতে ফিরে দেখে মেঝের উপর দিয়ে ওপাশের রুমে ঢুকে গেল একটা লালচে শাড়ীর আচল। কোন ফাকে কাজের মেয়েটা হামাগুড়ি দিয়ে এসে টেবিলের ওপাশে হুট করে উঠে দাঁড়ায়। কুজো হয়ে। সুমন একটু চমকে উঠে। বলে, ‘জগে পানি নেই’। মেয়েটা নিঃশব্দে জগ নিয়ে চলে যায় পানি আনতে। প্রথমে একটু টালমাল হেটে এক সময় হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ে রান্না ঘরে। ওপাশের ঘরের দরজায় মেঝের দিক থেকে উকি দেয় সেই বুড়ির মুখ। সুমন দ্রুত নিজের ঘরে ফিরে যায়।

নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে এসব কোন ব্যপারই না। শুধু শুধুই উলটা পালটা ভাবছে সে। মশারি টানিয়ে খাটের উপর বসে। ডিমলাইট টা জ্বালিয়ে দিয়ে তাকায় জানালার দিকে। জানালার পাশের দেওয়ালে একটা টিকটিকি দাঁড়িয়ে আছে স্থির হয়ে। তাকিয়ে আছে তার দিকেই। আর তখনই পাচিলের ওপাশ থেকে জবা গাছটার কাছে উকি দেয় একটা হাত। তারপর আরেকটা, তারপর আরেকটা। অনেক গুলো হাত একসাথে তাকে সেই একই ইশারা করতে থাকে। এসময় বিছানাটা কেপে ওঠে একটু। তখন মশারির এপাশ থেকেও উকি দিয়েছে একটা হাত। কাজের মেয়েটা হামা গুড়ি দিয়ে এসে পানি ভরা একটা গ্লাস এগিয়ে ধরেছে মশারির ভিতরে। রুমের বাইরে সর সর শব্দ হচ্ছে। আরো কয়েকজন এগিয়ে আসছে মনেহয়। গ্লাসটা হাতে নেওয়ার পর মেয়েটা কেমন একটু কুজো হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় দরজায় উকি দেয় আরো কয়েকজন। হামা গুড়ি দিয়ে রুমে ঢুকে পড়তে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে জানালার দিকে সরে যায় সুমন। তখন খেয়াল করে। জানালার দিকের দেওয়ালে সেই টিক টিকির সাথে হামাগুড়ি দিচ্ছে সেই বুড়িটাও। একসময় তারা সবাই হামাগুড়ি দিয়ে এসে তার খাটটাকে ঘিরে ধরে। কিছু চতুষ্পদী জন্তুর যেন।

২.
দুই দিন পর। রাত বাজে সাড়ে এগারটা। শিরিণের প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। সুমনের আসার কথা। এখনো পৌছেনি। কত দেরি হবে কে জানে? ওকে রেখেই খেয়ে ফেলবে কিনা বুঝতে পারছে না। শুধু শুধু এতক্ষন বসে থাকাটা বোকামি হয়েছে। এসব ভাবছে সে। এমন সময় গেটে নক হল। পরিচিত নক। ঘুম জড়ানো একটা হাসি মুখ নিয়ে দরজা খুলতে যায় শিরিণ। ভিউয়ারে উকি দিয়ে ওপাশের পরিচিত মানুষ টাকে চিনতে পারে সে। সুমন তখন নিচু হয়ে কি যেন খুজছে সিড়ি ঘরের মেঝেতে। দরজা খুলে জিজ্ঞেস করে ‘কি খুজছো?’ কোন জবাব দেয়না সে। শুধু সর সর শব্দে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ে ঘরে।
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন-হাদিস অনুযায়ী তারা পাকিস্তান এবং অন্যরা অন্যদেশ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২১



সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×