আমি আধারের অপ্সরী। আধারের কাছেই আমার সব আবদার, সব গল্প; আধারের মাঝেই খুঁজে পাই নিজেকে। অথচ ছোট বেলায় এই আধারকে আমার কত ভয় ছিল। দিনের শেষ আলোটা নিভে যেতেই মনে হত দুনিয়ার সব ভুত আমার ঘাড় মটকে দিতে ছুটে আসছে। একটু রাত বাড়তেই ঘুমাতে যেতাম মাকে জড়িয়ে ধরে। রাতের শুধু এই অংশটাতেই আমার কোন ভুতের ভয় ছিল না। কারণ জানতাম আমার পাশে শুয়ে আছে সেই মানুষ যে নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমাকে ভুতের হাত থেকে বাঁচাবে।
ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। দৃশ্যপট অনেক দ্রুত পরিবর্তন হয়ে গেছে। আজ আমাকে শুধু অন্ধকারই তার বুকে আশ্রয় দেয়। মাঝে এক দুবার ভুল করে আর সবার মত দিনের ঝিকিমিকি আলোয় পৃথিবী দেখতে বের হয়েছিলাম। মুক্ত বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নিবার আগেই দেখি আমার আদ্রতায় অভ্যস্ত শরীরের চামড়া এই প্রখর উতাপে ঝলসে উঠেছে। নিজের চামড়ার পোড়া গন্ধ নিজের কাছেই বিকট হয়ে ঠেকে। ছুটে গিয়ে নিজেকে আবার ছুড়ে ফেলি অন্ধকারের বদ্ধ কুঠুরীতে।
আমার ছেলে মানুষী মন তবুও মাঝেমাঝে আবার আলোতে আসতে চায়। আমার এই পোড়া মনকে তখন শত চেষ্টাতেও বোঝাতে পারি না যে আলোর পৃথিবী আমার জন্যে নহে।
