ঢং ঢং করে কাছেই কোথাও ঘড়ির কাটায় ১২টা বাজল। ২ ঘন্টা ধরে একই জায়গায় স্থির বসে আছি। কিন্তু দরজার ঐপাশ থেকে কেউ একটি বারের জন্যেও বের হল না। আর কতক্ষন এইভাবে বসে থাকব? আমার শাশ্বরি একবার বিরক্ত মুখে এসে বললেন, “তিথি, একটু নামায কালাম পড়, এইসময় আল্লাহকে একটু ডাকতে হয়।”
কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমি বা কি করতে পারি? আমার মাথা যে একটুও কাজ করছে না। আমার হাসিখুশি মেয়েটা হুট করে অসুস্থ হয়ে গেল।ডাক্তারের কাছে অনেক ছোটাছোটি শেষে ওর কান্সার ধরা পড়ল। ছিঃ ছিঃ ওরা কি সব আজেবাজে কথা যে বলে না! আমার মার এতো বড় অসুখ হতেই পারে না। ওরা খালি খালি টেস্টের নাম করে ওর গায়ে কত ইঞ্জেকশনের সূঁচ ফোটাল। আমার অধরা এমনিতেই অনেক নরম ওকে ওরা আর কত কষ্ট দিবে? এখন আবার ২ ঘন্টা ধরে অপারেশন চালাচ্ছে। এইটূকূন একটা শরীরকে আর কত কষ্ট দিবে?
কতদিন ধরে আমার সোনামানিকটাকে কোলে নেই না! কত দিন ধরে সে তার লাল টুকটুকে জুতা জোড়া পরে টলমলে পায়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে না! কতদিন হয়ে গেল ওর হাসিতে আমাদের সারা বাড়ি আনন্দে ভরে উঠে না!
আমি তো ঠিকই করে রেখেছি অধরা বড় হলে মা বেটি একই রকম ড্রেস পরে ঘুরতে বের হব। কত মজা করব।
ওই যে এক জ়ন ডাক্তার বুঝি বের হল। কি ব্যাপার, ডাক্তারের মুখ এত শুকনা হয়ে আছে কেন?আমার মা মনি কেমন আছে?অপারেশন শেষ হয়েছে কিন্তূ ওরা সবাই খুশি না হয়ে এমন করছে কেন? আমার মা, কতদিন পর বাড়ী যাবে কিন্তু ওরা সবাই এতো কাদঁছে কেন? কতদিন ওকে কোলে নেই না। এবার প্রাণভরে কোলে নিব। ওর লাল টুকটুকে জুতা জোড়া পরে আবার এসে আমাকে জাপটে ধরবে। ভাবতেই আমার এতদিনের ঘুমহীন চোখে রাজ্যের ঘুম এসে বাসা বাধল।