ডিঅ্যান্ডডি সাগর, গুলিস্তান নদ, তোপখানা নদী, মাঝখানে শেরাটন খাল পেরিয়ে কাওরানবাজার গাঙের স্রোত ভাসিয়ে নিচ্ছিল সব। আকাশের অনবরত কান্নার দৃশ্য দেখেই বুঝা যাচ্ছিল এমনটা হবে। রাজধানীর সাগর, নদ, নদী, খাল আর বিলগুলো যে বৃষ্টির পানি ধারণ করতে পারবে না তা আঁচ করা যাচ্ছিল। গত দুই-তিনদিনে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে এমনটাও ভাবা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। বিপদসীমা অতিক্রম করে নদ-নদীগুলো এখন রাক্ষসে হয়ে উঠেছে। মৌচাক নদীতো হাঁ করে বসে আছে। ওই নদীর মাঝে মাঝে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলে পড়ে বহু লোক আহত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের ঘরে ঘরে হাঁটুপানি। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস-আদালতে যাওয়া লোকজন প্রথমেই ধাক্কা খায়। ঘর থেকে বেরিয়ে তারা দেখতে পান রাস্তায় পানি। শুধু পানি বললে ভুল হবে। কোথাও কোমর পানি, কোথাও বুক সমান পানি। আবার কোথাও হাঁটু পানি। পানিতে সয়লাব গোটা রাজধানী। ডিঅ্যান্ডডি বাঁধের অভ্যন্তরে বসবাসকারীরা পড়েন মহাবিপদে। যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর, ডেমরা থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, পাগলা থেকে বন্দর গোটা এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। ডিঅ্যান্ডডি যেন এক সাগরে পরিণত হয়। ওই সাগরের মাঝখানে কোথাও আলিশান ভবন, কোথাও বা টিনের একচালা বাড়ি। কেউই শান্তিতে নেই। ডিঅ্যান্ডডি সাগর তাদের ঘিরে ফেলেছে। ময়লা পানি ঘরে ঢুকেছে। দুতালা, তিনতালা কিংবা তারও উপরে যারা বসবাস করেন তারা হয়ে পড়েন ঘরবন্দি। আর নীচ তলার বাসিন্দারা পানির সঙ্গে নামেন যুদ্ধে। রাস্তা-ঘাট সব পানিতে নিমজ্জিত। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে কেউ কেউ অতি প্রয়োজনে বেরুলেও গুলিস্তান এসে পড়েন এক ঝামেলায়। গুলিস্তান নদীর পানি আর জিরো পয়েন্ট নদীর পানি মিলে মিশে একাকার। গাড়ি চলছে আস্তে আস্তে। কোথাও গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে পেছনে লেগেছে তীব্র যানজট। একটু সামনে এগুতেই দেখা মেলে আবদুল গণি রোড, প্রেস ক্লাব আর সচিবালয়ের মাঝের রাস্তা, তোপখানা রোডও আরেক নদী। এ নদী সচিবালয়কে ঘিরে তৈরি হয়েছে। বাস যাত্রীরা হাইকোর্ট এলাকা পেরিয়ে মৎস্য ভবনের সামনে এসে যানজটের মুখোমুখি হন। মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ আসতে সময় লেগেছে পাক্কা দেড় ঘণ্টা। কারণ কি? শেরাটন খাল এখানে বিপত্তি। সবগাড়ি শেরাটন সিগন্যালে এসে এক সারিতে আস্তে আস্তে পেরুচ্ছে। ফলে পেছনে তীব্র যানজট। কোনোভাবেই এ যানজট মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ধস্তাধস্তি করে একটু সামনে এলে দেখা যায় কাওরানবাজার নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এটিএন নিউজের সামনে কোমর সমান পানি। এ পানিতে গাড়ি চলছে পিপড়ার মতো। টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখা গেছে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কই একেকটি নদীতে পরিণত হয়েছে। ফলে থমকে গেছে সবকিছু। দুর্ভোগ নয়, মহাদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? এর উত্তর অবশ্যই জানেন রাজধানীর দুই সিটি মেয়র। কিন্তু তারা কি পারবেন সে পথে হাঁটতে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৮