অস্পরী মার্কিন এক লাস্যময়ী মার্কিন তরুণী আরেক সুর্দশন মার্কিন তরুনকে স্লো মোশনে মাদকীয় সুরের তালে জড়িয়ে ধরছে !!! আহ কি মোহনীয় সে দৃশ্য। পুরো হল ভর্তি সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত কোথায় যেন হারিয়ে গেছে !!! অবিস্মরনীয় অপরূপ এক অনুষ্ঠানের কথা বলছি!! আগারগাওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ইমামদের উষ্ণ রোমাঞ্চের অনুভূতি ও মার্কিন নগ্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মো: আফজালের এক মহতি উদ্যোগ !!!
গুলশানের হলি অর্টিজানের নারকীয় জঙ্গিবাদী হত্যাযজ্ঞের পর দেশের আবাল বৃদ্ধবনিতা সকলের দৃষ্টি জঙ্গিবাদের কারণ ও তার প্রতিকার খোজার দিকে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের জন্মলগ্ন থেকেই মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের জড়িত থাকার কাহিনী এবং জঙ্গি ধরার হরেক রকম নাটক প্রচলিত থাকলেও গুলশান ট্রাজেডিতে উচ্চবিত্ত,সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত, স্মার্ট,সুদর্শন তরুন-তরুনীদের জড়িত থাকার খবর প্রকাশ্য প্রমানিত হয়। এমনকি নর্থ সাউথের ছাত্র বলে বুক ফুলিয়ে হাটা ছেলেটাও সময়ের পরিবর্তনে মাথা নিচু করে পরিচয় লুকিয়ে হেটে যায়। সাধারনতই জঙ্গিবাদীরা ইসলামের কিছু বিধানের ভ্রান্ত অপব্যখ্যা করে মগজ ধোলাই করে মানুষের নাম জঙ্গিবাদের খাতায় লেখায়। কিন্তু সবার মনে একটাই প্রশ্ন এই উচ্চবিত্ত,সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত সহ সকল জনসাধারনের কাছে ইসলামের বিধানগুলোর সঠিক ব্যাখ্যাটা পৌছে দেবার দায়িত্বটা কার?....!
সাধারনতই সামনে আসে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ও অনুদান ভক্ষনকারী দেশব্যাপী হুজুরদের নিযন্ত্রনকারী সরকারী মোড়ল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নাম। সাম্প্রতিক কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ইসলাম প্রতিষ্ঠায় লুকায়িত ও বিদ্যমান লক্ষ লক্ষ অবদান,বিরোধী দল ও মত গুলোকে ধর্মের ব্যানারে তুলোধুনা করতে প্রিন্ট,ইলেকট্রনিক,অনলাইন সহ যাবতীয় মিডিয়ায় ব্যাপক সরব ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মন্দির,গির্জাতে তাদের গণশিক্ষা কার্যক্রম ঈর্শ নীয় সাফল্যের পর্যায়ে। তাদের এহেন জাগ্রত ভাব দেখে সফল অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গর্বে বুক ভরে যায়।
এইতো সেদিন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মু. আফজালের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশোর জ্বালাময়ী রাজনৈতিক প্রেরনামূলক বক্তৃতা দেখে পুরোই অবিভূত। সেকি জ্বালাময়ী বক্তৃতা!! ইসলামের সেবায় বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা এত্ত কিছু করেছিলেন!! খালেদা জিয়া,জামায়াত নেতারা বসে বসে সিক্স জি স্পীডে জঙ্গি পয়দা করছেন !! এই টকশো না দেখলে জানতামই না!! .... অসাধারন কুবুদ্ধিজীবি!!!
যেকোন দেশের স্থপতি সেদেশের জনসাধারনের নয়নের মণি। এটাই স্বাভাবিক!! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সকলের জন্যই অনুপ্রানন সরূপ। কিন্তু তা বলে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য সকল প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় তার নাম ব্যবহার করে হবে এমনটা কখনই ঠিক হবে না। কারা যেন অতি উৎসাহী হয়ে কাচা বাজারের নাম বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরন করেছে। এসবে আসলে বিখ্যাতদের সম্মান দেয়ার চেয়ে সমালোচকদের বির্তকের সুযোগ বেশি করে দেয়া হয়।সামীম মু. আফজাল প্রেষনে জেলা জজ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের আসনে বসার পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে ভূলে ভরা আত্মজীবনি প্রকাশ এমনকি বঙ্গবন্ধুকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বলে প্রচার করতে থাকে !!!! অথচ ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ জারিপত্র এবং রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে যোগদান করা ছাড়া তেমন কোন প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস পাওয়া যায় না!!!! কিন্তু সামীম মু. আফজাল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠাতা বলে প্রচার করতে থাকে। খালেদা জিয়ার আমলে দুদকের অধ্যাদেশ পাস হওয়ায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুদকের গলায় প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খালেদার নাম ঝুলানো কতটা যুক্তিযুক্ত হতে পারে?...!!! এতে অবশ্য সামীম আফজালের মত অর্বাচীনরা বাহবাই পেয়ে থাকেন!! ব্যাপারটা অনেকটা থ্রিজি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এমন অর্বাচীনের প্রলাপের মতই।
মর্মান্তিক রানা প্লাজা দূর্ঘটনার পর ঝাকি তত্বের কারনে এসব অর্বাচীনের প্রলাপে আমার মত অনেকেই অভ্যস্ত! গুলশানের হলি অর্টিজানের নারকীয় জঙ্গিবাদী হত্যাযজ্ঞের পর উচ্চবিত্ত,সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত, স্মার্ট,সুদর্শন তরুন-তরুনীদের জড়িত থাকার কারনে প্রশ্ন উঠে, দেশের আপামর জনসাধারনের কাছে ইসলামের বিধানাবলী যেগুলোর মারাত্মক অপব্যাখ্যা করা যায় সেগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা পৌছানোর দায়িত্বটাকি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রকল্প নামে পুরোই কি বিফলে!!!
সাম্প্রতিক সময়ে ৩ কোটি টাকার দেশব্যাপী জনসচেতনতা তৈরির জন্য এবং জঙ্গি প্রতিরোধ মূলক খুতবা নিয়ন্ত্রন ও নজরদারীর জন্য রাষ্ট্রীয় প্রকল্প হাতে নেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন।বিগত দুই জুমায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলাম“ শীর্ষক জঙ্গিবাদ বিরোধী লিফলেট ও জাতীয় ভাবে সকল মসজিদে পড়ার জন্য খুতবা প্রেরন করা হয়!! এমনকি জাতীয় ভাবে সকল মসজিদে জাতীয় ভাবে পড়ার জন্য খুতবা রচনার জন্য কমিটি গঠন করা হয় যাতে আছে ভন্ড দেওয়ানবাগী, মাজার পুজারী নজীবুল বশর মাইজ ভান্ডারীর মত ধূর্ত মূল ধারা হতে বিচ্যুত নামধারী মুসলমানরা।খুতবা সম্পাদন করবেন ব্যালে ড্যান্স কোরিওগ্রাফার সামীম মু. আফজাল স্বয়ং!!
ফলে যা হবার তাই হয়েছে!! জঙ্গিবাদ বিরোধী লিফলেট নয় বরং হয়েছে জামাত শিবির,জাকির নায়েক,পিস টিভি বিরোধী লিফলেট।লিফলেটের ১৩ টি পয়েন্টের ৯ টি পয়েন্টই জঙ্গি প্রতিরোধে নয় বরং জামায়াত-শিবিরকে আইএস,জঙ্গি,ইসরাইলের এজেন্ট ও জাকির নায়েক,পিস টিভিকে আইএসের পৃষ্ঠপোষক প্রমানে ব্যাবহৃত হয়েছে। ভারতের মহারাষ্ট্র পুলিশ জাকির নায়েককে জঙ্গিপৃষ্ঠপোষক প্রমান করতে না পারলেও সামীম মু. আফজাল তার ১২ পয়েটে লিফলেটে তা প্রমান করেই ছেড়েছেন!!! ভারতের ছেড়া গামছা পুরস্কারের অন্যতম দাবিদার আমাদের ইফা ডিজি সামীম মু. আফজাল!!!
জুমার মূল দুই পৃষ্ঠার আরবী যে খুতবা জাতীয়ভাবে পাঠ করতে দেয়া তাতে ব্যকরনগত ভূল ছিল ১৫ টি!.... এর চেয়ে ভাল জোড়ালো নির্ভুল খুতবা সবসময়ই দিয়ে থাকেন আমাদের দেশের ইমামেরা।
চলুন সামীম মু আফজাল সম্পর্কে জেনে নেই, ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ। প্রেষনে জেলা জজ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের আসনে বসেন।পুরোদস্তুর অনৈসলামিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের পরিবর্তে তিনি সরকারের পক্ষে টিভি টকশোতে অংশগ্রহণ, বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা দেয়া, সরকারি প্রিন্টিং প্রেসে সরকারি অর্থে বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ২০ লক্ষ লিফলেট ছাপিয়ে সারাদেশে বিতরণ করেন।তিনি সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে ও ইসলামী দলগুলোর মিছিল-মিটিং বন্ধ করতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে তালা লাগান যোগদানের তৃতীয় দিনেই । গনজাগরণ মঞ্চের নেতা ইমরান এইচ সরকারের নির্দেশমত দেশের মসজিদগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশমত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের অধীন দেশের ৩৮ হাজার মসজিদে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালনাধীন সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় রিসোর্স সেন্টার ও লাইব্রেরিগুলোয় টেলিভিশন ভাড়া করে শেখ হাসিনার ভাষণ সরাসরি ইমাম ও অন্যদের দেখাতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। ওই রিসোর্স সেন্টারগুলো দেশের মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকায় এবং নামাজের সময় মসজিদ কমপ্লেক্সে টেলিভিশন চালনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচার করায় সারাদেশের ইমাম ও মুসল্লিদের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।
‘মাজদার হোসেন বনাম বাংলাদেশ’ মামলার রায়ের পর বিচার বিভাগীয় লোক প্রশাসনের কাজ করা সম্পূর্ণ বেআইনি হলেও সামীম মো. আফজাল একাধারে জেলা জজ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ছিলেন।দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেস থেকে মাত্র ১৮ মাসে সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাত্ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অফিসার নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে দুটি মামলা বিচারাধীন।
২০০৯ সালের ১৭ মার্চ ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে তিনি কাঙালিনী সুফিয়াকে এক অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসেন এবং তার গান ও নৃত্য উপভোগ করেন। এর আগে হাজী ক্যাম্পে ইফা (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাজির করা হয় কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীরকে।
২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ১০০ ইমামের সামনে আমেরিকার ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফপ্যান্ট এবং মিনি স্কার্ট পরিহিত একদল তরুণ-তরুণী দিয়ে জোড়াজুড়ি করে ব্যালে নৃত্য পরিবেশন করানো হয়। নাচের পর তিনি সব নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে হাত মেলান এবং তাদের জড়িয়ে ধরেন। দেশের সব পত্রপত্রিকায় এর ছবি এবং সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সামীম মো. আফজালের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি ব্যালে ড্যান্স ছিল না, ছিল সুইং ড্যান্স’!!
দেশব্যাপী হুজুরদের নিয়ন্ত্রনকারী সরকারী মোড়ল ও সকল জনসাধারনকে ইসলামী বিধানাবলীর আসল ব্যাখ্যা বুঝিয়ে জঙ্গিবাদের করালগ্রাস হতে সচেতন করার দায়িত্ব প্রাপ্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এমন অবস্থার জন্যই হয়তো অাজকাল শ্রদ্ধা কাপুর ও মিয়া খালিফের ফ্যানরাও জঙ্গি হয়!!! ……….
সানি লিওনকে দিয়ে যদি যুবকদের উত্তম চরিত্র গঠন সম্ভব হয় ! তাহলে হয়তো অনৈসলামিক ব্যক্তিত্ব,ব্যালে ড্যান্স-মিউজিক প্রেমী,মাজার পূজকদের দিয়ে পরিচালিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন দ্বারা দেশের জনসাধারনকে ইসলামী বিধানাবলীর আসল ব্যাখ্যা বুঝিয়ে জঙ্গিবাদের করালগ্রাস হতে সচেতন করা যাবে!!! দেশের দায়িত্বশীলদের উচিত বিবেক খাটিয়ে জাতির স্বার্থে জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক মোড়ক না দিয়ে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৬