বিকৃত মস্তিস্কধারী কোন মানুষের পক্ষেও কোন মানুষকে হত্যা করার পর তার সাথে নৃশংসতা করা অনেকাংশেই অসম্ভবপর।কারো মগজ যত ভালো করেই ধোলাই করা হোক না কেন স্বজাতির কাউকে হত্যা করতে গেলে বুক কাপবে এমনটাই বিজ্ঞান স্বীকৃতি দেয়।ইসলামের মারাত্বক ভূল ব্যাখ্যা গুলোকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে জঙ্গী নামদারী এই বিপথগামীরা।সম্প্রতি হাফিংটন এর এক ফিচারে আইএস ফেরত জঙ্গী স্বীকার করেছেন সুইসাইডাল অপারেশন গুলোতে ভয়ংকর নিষিদ্ধ ড্রাগ নিয়েই যাবতীয় নৃশংসতা ঘটিয়ে যাচ্ছে আইএসের সুইসাইডাল স্কোয়াডের জঙ্গীরা।
বাংলাদেশের অভিভাবকরা যেমন আইএস নিয়ে ভীত! ঠিক তেমনি আতংকিত এদেশের তরুণ-তরুণীরাও,আমার স্মার্ট,উচ্চবিত্ত,সুদর্শন বন্ধু বা বান্ধবীটি জঙ্গী না তো। শঙ্কার ভয় সবার মনে। সবার মনে একটা বিভীষিকাময় প্রশ্ন! কেন মানুষ আইএসে যোগ দেয়! কী লোভনীয়তা লুকিয়ে আছে আইএসে!
জঙ্গীদের স্বভাবতই মগজ ধোলাইয়ের সময়ই হুর-পরীর স্বপ্নে বিভোর করে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে রাখার চেষ্টা করা হয়।সাম্প্রতিক সময়ের নারকীয় নৃসংশ তান্ডব গুলশান ট্র্যাজেডি। এটা কারন বিশ্লেশনে সবার আগ্রহ তুঙ্গে।আমার মত অনেকেই চেষ্টা করছেন জঙ্গিদের নিয়ে জানার।গুলশান ট্র্যাজেডির স্মার্ট,উচ্চবিত্ত ছেলেগুলো যারা তাদের বুদ্ধি-বিবেচনা হারিয়ে এরকম একটা ধ্বংসাত্মক কাজে নিজেদের জড়িয়েছে সেটার শেকড় খোজার চেষ্টা অনেকেরই।প্রশ্ন আসে তারা কীভাবে মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করে! আদৌ কি কারও ব্রেইন ওয়াশ করা সম্ভব! কথাবার্তায় মোটিভেশন করার মাধ্যমে কি সুইসাইডাল স্কোয়াডে পাঠানো সম্ভব! আমি পূর্বেই (Click This Link) শীর্ষক কারযার ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদন অনুবাদ ছায়া অবলম্বনে ব্লগে লিখেছিলাম।
আইএস জঙ্গিদের নিয়ে ইন্টারনেটে গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন ও হাফিংটনের ফিচারের আইএস ফেরত জঙ্গী স্বীকারোক্তি মতে আইএস এর সুইসাইডাল অপারেশন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ক্যাপ্টাগন অ্যাম্ফিটামিন নামের ট্যাবলেট যা উচ্চ ক্ষমতার নেশা শক্তি সম্পন্ন যা আইএস সুইসাইডাল অপারেশনের সদস্যরা বাধ্যতামূলক ব্যাবহার করছেন। বিজ্ঞান বলে এই নেশাজাত দ্রব্যটি গ্রহণ করলে যে কারো মাঝেই উন্মত্ততা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায় এবং মৃত্যুর পরোয়া না করেই যে কোন নৃশংসতায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পরার মত ক্ষমতা তৈরি হয়।
মনোচিকিৎসকদের মতে,অ্যাম্ফিটামিন খেলে মানুষের মাঝে মারাত্মক ধরনের উদ্দাম ও সুখ সুখ ভাব সৃষ্টি হয়।ঘুম হারাম হয়ে যায়, খাওয়া-দাওয়ার রুচি কমে গেলেও শরীরে ব্যাপক শক্তি অনুভূত হয় এবং যা কারো মতকে সহজেই ঢুকিয়ে বাস্তবায়ন করানো যায়।আইএসের হাত ধরে অ্যাম্ফিটামিন ট্যাবলেট এখন বাংলাদেশের জঙ্গিদের হাতে।
ক্যাপ্টাগন অ্যাম্ফিটামিন প্রাথমিক ব্যাবহৃত হত উচ্চমাত্রার যৌন উত্তেজক পিল রুপে , যা সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরাকে সবচেয়ে জনপ্রিয়।যার নেশা দীর্ঘ সময় এমনিতেই থাকে।২০১৩ সালে লেবানন-সিরিয়া সীমান্তে ১২ মিলিয়ন ক্যাপ্টাগন পিলের বড় একটি চালান আটক করে, একই বছর তুরস্ক ৭ মিলিয়ন পিল আটক করে, গত বছরের ডিসেম্বরে দুবাই সরকার সাড়ে চার মিলিয়ন পিল আটক করে।
জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধ বিভাগ এর তথ্য মতে, ১৯৮৭ সাল থেকেই অ্যাম্ফিটামিন নামের এই ওষুধটির উৎপাদন নিষিদ্ধ।এরপরও মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে অ্যাম্ফিটামিনের ব্যাবহার রমরমা । সৌদি আরব, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও তুরস্কের ল্যাবগুলোতে এ ট্যাবলেটের উৎপাদন ও সরবরাহ হচ্ছে।
আইএসের টার্গেটের প্রধান পছন্দ একাকীত্ব, বেকারত্ব ও চরম হতাশ,বিচ্ছেদ যন্ত্রনা মুক্তির আশায় থাকা তরুণ-তরুণীরদের ব্যার্থহীনতার যন্ত্রণায় হতাশাগ্রস্ততার সুযোগ নেয় চারপাশে অপেক্ষমান প্রশিক্ষিতরা।স্বভাবতই কিছু তরুণ-তরুণীরা জীবনে অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করে।আর তাদেরই মাথায় ঢুাকিয়ে দেয় "তুমি বিধর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। চমৎকার একটা দেশের নাগরিক হবে তুমি। সেখানে তুমি অনেক সুন্দরী ললনাদের পাবে। তারা তোমার দাস হয়ে তোমার সেবা করতে থাকবে। তোমাকে সেবা করার জন্য তারা অপেক্ষা করছে।কেন ঘরে বসে সময় নষ্ট করছো। তোমাকে যারা চাকর বানাতে চায়, কেন তাদের চাকর হয়ে থাকবে। আমাদের সঙ্গে এসো। জীবনে বৈচিত্র্য পাবে। হিরোর মতো বাঁচার সাধ পাবে। সবার উপরে থাকবে তোমার ইচ্ছার প্রাধান্য।অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকবে তোমার।এর পাশাপাশি মারা গেলে জান্নাত ও হুরের লোভ এটা তো আছেই।এধরনের প্রলোভনের কারণেই তরুণ-তরুণীরা আইএসে জড়িয়ে পড়ে।
ধর্মীয় মূল্যবোধ তাদের কাছে কোনো কিছুই নয়, নিষিদ্ধ মাদক সহ তাদের মাথায় যা ঢুকিয়ে দেয় তাই তাদের কাছে মুখ্য।ধর্মীয় ব্যানারকে অপমান করে পথভ্রষ্ট আইএস জঙ্গিরা মেয়েদের অপহরণ ও ধর্ষণের জন্য উদ্বুদ্ধ করে তারও আড়ালে এই ভয়ঙ্কর মাদক।
এই ভয়ঙ্কর মাদকের নাম ক্যাপ্টাগন যার নেশা বাংলাদেশে ব্যাবহৃত নিষিদ্ধ ইয়াবা এর চেয়েও হাজারগুন ভয়ঙ্কর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেমন সৈন্যরা ইয়াবা সেবন করত যুদ্ধের ভয়াবহতা ও হত্যাযজ্ঞের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য, বর্তমানে আইএস জঙ্গিরা সেভাবেই ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেটকে বেছে নিয়েছে। আইএস ধর্মীয় বিভ্রান্তি সহ মগজ ধোলাই করে বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণ-তরুণীদের সংগ্রহ করে আইএস জঙ্গি তৈরি করছে।ইরাক, সিরিয়ায় সম্মুখযুদ্ধে মৃত আইএস যোদ্ধাদের পকেটে ক্যাপ্টাগন পাওয়া যায়।
সুইসাইড মিশনগুলোর আগে দীর্ঘ কয়েক মাস তাদের প্রস্তুতি নিতে হয়, এ সময়ে তাদের নিয়মিত ক্যাপ্টাগন পিল খাওয়ানো হয়। ঢাকার নৃশংস গুলশান ট্রাজেডীর মৃত জঙ্গিদের পূর্বেকার ছবি ও কয়েক মাস পরে হামলার পর নিহত ছবির চেহারা বা অবয়বগত কিছু পার্থক্যের মূল কারণ এই ক্যাপ্টাগন।ক্যাপ্টাগন ও অ্যাম্ফিটামিন জাতীয় বিভিন্ন ধরনের সিডেটিভ ড্রাগ রয়েছে যা দিয়ে কারো মতকে সহজেই মগজে ঢুকিয়ে বাস্তবায়ন করানো যায় এবং এর প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদী।সৌদি আরবে ৪০ ভাগ মানুষ ক্যাপ্টাগন ও অন্যান্য ধরনের মাদকে আসক্ত।বর্তমানে জঙ্গীরা সারা বিশ্বে এ ক্যাপ্টাগন পিল সেবনে অভ্যস্ত, যে কারণে তারা মৃত্যুর ভয় সহজেই এড়িয়ে যায়।
অতীতে যুদ্ধে হাসিস নামক এক ধরনের মাদক ব্যাবহৃত হত। যা তখনকার সময়ে তাদের কাছে খুব সহজলভ্য ছিল। গাছের বিভিন্ন উপাদানের সাথে রাসায়নিক মিশিয়ে মিশ্র পদার্থ তৈরি করে বিপরীত দলের চৌকষ যোদ্ধাদের রাতের আধারে ধরে এনে হাসিস প্রয়োগ করে হিপনোটাইজ করে ছেড়ে দিত।যারা পরবতী দীর্ঘ সময় হাসিসের সূক্ষ নেশায় বুদ হয়ে মাথায় যা ঢুকিয়ে দিত স্বাভাবিক থেকে সেটাই বস্তিবায়ন করত!!
এর আগে, ২০১৪ সালে আইএসয়ের মাদক ব্যাবহার সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করে সিএনএন। এতে এক আইএস জঙ্গিকে এই ক্যাপ্টাগন সম্পর্কে বিবরণ দিতে দেখা যায়।ভিডিওতে কারিম নামের এক জঙ্গিকে বলতে শোনা যায়, তারা সুইসাইড মিশনের অনেক আগে থেকেই আমাদেরকে ওষুধ দেয়; যা খেলে আমাদের মস্তিষ্ক অপারেশন সহায়ক হয়,লক্ষ্য বাস্তবায়নে দৃঢ় এবং স্বাভাবিক থাকি।এরপরই আমরা আমাদের নিজের জীবনের পরোয়া না করেই যুদ্ধের ময়দানে চলে যাই।
বর্তমানে ও জঙ্গিরা মগজ ধোলাই করে কোনোভাবে এসব স্মার্ট,উচ্চবিত্ত,সুদর্শন ছেলে-মেয়ে গুলোকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে যায়। এরপর এসব মাদক প্রয়োগ করে যা করতে বলে, তাই তারা করে এমনটা আপাতত বিশ্লেষনের পর মনে হয়।
কারণ, তাদের তেমন কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।কাউকে যতই বুঝিয়ে মগজ ধোলাই করা হোক তার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা থাকার কথা, আত্মীয়স্বজনদের কথা চিন্তা করার কথা; অন্তত সুইসাইড অপারেশনে নিশ্চিত মৃত্যু জেনে যাবার পূর্বে প্রিয় মুখটা সামনে ভেসে ওঠার কথা। কিন্তু এসব মাদক তাদের মস্তিষ্ককে লক্ষ্য বাস্তবায়নের নেশায় আছন্ন করে রাখে। আর লক্ষ্য বাস্তবায়নে যে কোনো কিছু করার জন্য বাধ্য করে হোক সেটা যত নৃশংস!! নির্মম হত্যাযজ্ঞ গুলোর পর সবাই অবাকই হয় এইরকম একটা স্মার্ট,উচ্চবিত্ত,সুদর্শন,শিক্ষিত ছেলে এমন নৃশংস জঘন্য কাজ কিভাবে করলো !!! শুধু কথাতে আর জান্নাত ও হুরের লোভে ধর্মের অপব্যাখ্যা বাস্তবায়নের টানে হলে তাদের নৃশংস জঘন্য তান্ডব কালে বিবেকবোধের সামান্য পরিচয় অন্তত মাঝে-মাঝে হলেও পাওয়া যেত।
বাংলাদেশে নারকীয় গুলশান ট্রাজেডী,শোলাকিয়ায় হামলা সহ অতীতের সকল জঙ্গীবাদীয় তান্ডবের শোক,স্তম্ভিতার মাঝেই যখন বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে প্রশিক্ষিত ৭০ পুরুষ ও ৩০ সুন্দরী স্মার্ট আইএস জঙ্গী এমন তথ্য ভারতীয় মিডিয়া প্রকাশ করে তখন জাতির হতাশার সাগরে ডুব দেয়া ছাড়া আর কিবা করার থাকে!!!
প্রত্যেক বাবা মায়ের উচিত সন্তানকে সচেতনতা নিয়ে গাইড করা।ইতিমধ্যে বিপথগামী এমন সন্তানের বাবা মায়ের দেশের স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করা প্রয়োজন।দেশের সার্বিক নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে কর্তাদের নতুন করে গভীরভাবে ভাবা উচিত।
তথ্যসূত্র:
১. আর্কাইভ হাফিংটন....
২.সিএনএন....
৩.জাতিসংঘ মাদক এবং অপরাধ বিভাগ রিপোর্ট-২০১৫
৪.ছবি: ইন্টারনেট..
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:২৪