গুলশান ট্রাজেডীর পর হামলাকারীরা অধিকাংশ সরকার সমর্থক ধনী,শিক্ষিত পরিবারের,সুদর্শন এবং নামকরা ব্যয়বহুল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও স্কলাসটিকার মত প্রতিষ্ঠানের ছিল বলে মিডয়ায় প্রকাশ পায়।তার পরই সচেতন মহলের টনক নড়ে।অাগে অধিকাংশের বদ্ধমূল জঙ্গী মানেই মাদ্রাসার হবে হয়েতা।গুলশান ট্রাজেডীর পর হামলাকারী সুদর্শন,শিক্ষিত নিবরাস ইসলামের মগজ ধোলাই কিভাবে সম্ভব!!! তা এখন অনলাইনে ভাইরাল।কারযার ম্যাগাজিনের একটি ফিচারের ভাষায় দেখা যাক আইএসের মগজ ধোলাই পদ্ধতি.....
অ্যালেক্স, ২৩ বছর বয়সী নারী। পেশায় বাচ্চাদের স্কুল শিক্ষক। উত্তেজনায়, ভয়ে কাঁপছিল সে। ঠিক যেদিন সে টুইটারে তার লোমহর্ষ ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার কাহিনী তুলে ধরেছেন তার ফলোয়ারদের কাছে।
কিছুদিন পর, আলেক্স নতুন একটা দলের সদস্যদের খুব কাছাকাছি অনলাইনে ভিড়তে শুরু করে দেয়। সেই দলের লোকজনদের মাঝে এত প্রাণচাঞ্চল্য, এত উৎসাহ, উদ্দীপনা আগে কখনো কোনো দলে দেখা যায়নি। যারা তাকে ‘ইসলাম কি’ এই বিষয়ে জ্ঞানদান করে চলছিল। তারা তাকে জানিয়েছিল, ইসলামিক স্টেট সম্পর্কে। এছাড়া জানিয়েছিল, কিভাবে মহান আল্লাহর আইনে সিরিয়া-ইরাকের মতো সব দেশ গড়ে উঠেছে।
সেই দলের মাঝে ফয়সাল ছিল বেশি দায়িত্ববান। অ্যালেক্সের সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকতে লাগলো। রাতদিন টুইটার, ই-মেইল, স্কাইপে প্রতিনিয়মিত যোগাযোগ রাখছে ফয়সাল। অক্লান্ত সহযোগিতা করে চলছিল আলেক্সকে পাক্কা ইসলামিক হওয়ার উদ্দেশ্যে।
ওয়াশিংটন সিটিতে আলেক্স তার দাদিকে জানালো পাঁচ মাইল দূরে একটা মসজিদ আছে। তখন তার দাদি একটু অন্যমনষ্ক হয়ে গেল। তার দাদি একমাত্র মুসলিম হিসেবে তাকেই দেখল যে কিভাবে অনলাইনে আরেকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তার দাদি তাকে অনুপ্রাণিত করলো। তার আদর্শের পছন্দকে সম্মান দিল। তার সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হলো। তার দাদি তাকে সতর্ক করেছিল জানিয়েছিল, মুসলমানরা আমেরিকায় নির্যাতিত। তিনি এও জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘তোমাকে কিন্তু সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।’
তার দাদি তাকে মাঝে মাঝে চার্চেও যেও বললো। তাদের দুইজনের মধ্যে কথাগুলো গোপন ছিল যা তার পরিবারের অন্য কেউ জানত না। চার্চে গেলেও অ্যালেক্স নীল কভারে মোড়া আইফোনের হেড ফোন কানে লাগিয়ে আইসিসের (আইএস) রণসঙ্গীত শুনত। কিভাবে আইসিস (আইএস) যোদ্ধার জীবন এত বর্ণাঢ্যময় হয়ে উঠে চার্চে বসে ভাবত সে।
আলেক্স বলেন, ‘আমি অনুভব করতে লাগলাম আমি বোধ হয় প্রভু এবং ক্রিশ্চিয়ানিটির সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করছি।’ অ্যালেক্সের আলাদা ছদ্মনাম যখন অনলাইনে ব্যবহার করত তখন তার মনে হতো সে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে না তো। আলেক্স বলেন, ‘কিন্তু তখন এমন উত্তেজনায় ছিলাম । তখন আমার অনেক নতুন বন্ধু গড়ে উঠলো ।’
যদিও তখন ইসলামিক স্টেটের আদর্শ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে তীব্র নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করল। পশ্চিমা দেশ থেকেও অনেককে তাদের দলে ভেড়ালো। আইসিসের দলে ভেড়ানো লোকদের পশ্চিমাদের প্রোপাগাণ্ডাতে পাত্তা দিতে মানা করে দিলো।
এই বছরের জানুয়ারিতে, কমপক্ষে ১০০ অ্যামেরিকানকে প্রশিক্ষণ দেয়া হলো। ইরাক, সিরিয়ার জিহাদি গ্রুপে যোগ দিলো। তাদের মাঝে, পশ্চিমা দেশ থেকেও আরো ৪০০০ লোক তাদের দলে যোগ দিলো।
সোশ্যাল মিডিয়াতে আইসিস তাদের লোকদের দলে ভেড়াতে শুরু করলো। তাদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো চম্পকপ্রদভাবে। সামাজিক গণমাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অপারেশন চলতে থাকে। জার ফলশ্রুতিতে, অনেক আইসিস স্বেচ্ছাসেবী, সমর্থক আইসিসের খবর ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে লিপ্ত থাকত।
আলেক্সের অনলাইন গ্রুপটি জড়িত ছিল ডজনখানেক ফেইক একাউন্টের সঙ্গে। আর কিছু মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হতো যারা আইসিসের সঙ্গে আছে। আলেক্সের গ্রুপটি প্রায় ছয় মাস এক হাজার ঘণ্টা ধরে কাজ করে ছিলো। আইসিস তাদের অর্থ দিতো। চকলেট দিতো।
তাদের কাজে ভূয়সী প্রশংসা করতো। আইসিসের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আরো নিজেকে কাজে লাগাতে বলা হতো। একজন ক্রিশ্চিয়ান হিসেবে অ্যালেক্সকে অনেক পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাকে আইসিসে ভেড়ানোর উদ্দেশে। অ্যালেক্সও নিজেকে সপে দিয়েছিলেন আরো কত উদারভাবে আইসিসের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা যায়।
নিঃসঙ্গরা বিপথে যায় যেভাবে : অ্যালেক্স শহরের খুব কাছেই থাকত। তার দাদা-দাদুরা চাইত নিরিবিলি পরিবেশে থাকতো। কিন্তু অ্যালেক্স চাইত কোনো দলের মাঝে থাকতে। তাদের কাছেই অ্যালেক্স ছোট থেকেই বেড়ে উঠেছে। তার বয়স যখন সবে ১১ বছর। তার মা অতিরিক্ত ড্রাগ সেবনে আসক্ত। তাকে রাখা হয়েছিল পুনর্বাসনকেন্দ্রে।
হঠাৎ তার ফোন ১৯ আগস্ট সিএনএন লাইভ এলার্টে কেঁপে উঠল।
জেমস ফয়েলি নামে এক আমেরিকান সাংবাদিকের মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। তা সম্প্রচার করছে। আইসিস নামে যে কিছু আছে আগে জানা ছিল না অ্যালেক্সের।
সেই দুর্বিষহ হত্যার দৃশ্যে মনে গেঁথে গেল। অতি আগ্রহের সঙ্গে বেশি আইসিস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলো অ্যালেক্স। টুইটারে প্রবেশ করে দেখতে চাইলো আইসিস সম্পর্কে আর কি জানা যায়।
‘আমি এমন কাউকে খুঁজছিলাম তারা কি করা জানার জন্য। কেন তারা এসব কাজ করে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। অনলাইনে তাদের খুঁজে পাওয়া তেমন কঠিন কাজ ছিলো না ।’
অ্যালেক্স সেই মুহূর্তে ঘাবড়ে গেল। যিনি কি না আইসিসের কর্মকাণ্ডের জন্য চিহ্নিত সেই অ্যালেক্সের প্রশ্নের জবাব দেয়।
‘তারা যখন দেখল আমি আইসিস সম্পর্কে জানার জন্য অনেক বেশি কৌতূহলী। তখন তারা খুব বিনয়ের সঙ্গে আচরণ করতে লাগলো। তারা জানতে চাইল আমার সম্পর্কে। আমার পরিবার সম্পর্কে। আমি কোথায় আছি। আমি জীবনে কি করতে চাই।’
পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাকে জানানো হলো, তিনি আইসিসের একজন যোদ্ধা মনজের হামাদ। সিরিয়ার কাছে দামেস্কে থাকেন। ধীরে ধীরে তারা অনালাইনে চ্যাট করতে লাগলেন। ইসলাম সম্পর্কে ধারণা দিতে লাগলেন। আইফোনে ইসলাম হাব নামে আপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করতে বলেন।
প্রতিদিন হাদিস সম্পর্কে নোটিফিকেশন আপডেট দেয়। মনজের অ্যালেক্সের কথা মন দিয়ে শুনতো। দিনের প্রায় সময় তখন অনলাইনে থাকত অ্যালেক্স। সারাদিন আইফোন কেবল মেসেজ, নোটিফিকেশন আপডেট হতে লাগলো। অ্যালেক্স কৌশলে মাঝে মাঝে জানতে চাইতো কিভাবে জিহাদিরা গলা কেটে মানুষ হত্যা করে। কিন্তু অ্যালেক্সের মনে তখন আইসিসের প্রভাব এমনভাবে মোহবিষ্ট করতে লাগল। তখন নিজের মনে একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেলো যে এগুলো মিডিয়ার সৃষ্টি ।
অ্যালেক্স আল্লাহ, যীশু, বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলো। চার্চের ফাদারের সঙ্গে ক্রিচিয়ান প্রিনিসিপাল নিয়ে কথা হলো। তর্ক বাধলো ।
কলেজ ছেড়ে দেয়ার পর, অ্যালেক্স কিছুদিন ডে কেয়ারে কাজ করলো। শর্ত ভঙ্গের কারণে চাকরি ছেড়ে দিল অ্যালেক্স। ফয়সালের সঙ্গে অনলাইন কথোপকথনে এক মোহনীয় কথার জাদুর ফাদে পরে যায়। অ্যালেক্সের মনে গেঁথে যায় কথাগুলো। ক্রিসমাস ডে যতই কাছে আসতে লাগলো অ্যালেক্স নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। ফয়সাল তাকে কলেমা পড়ায়- আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নাই। মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। ধর্মান্তরিত হয়ে অ্যালেক্স হয়ে যান শাহাদা। টুইটারে যখন টুইট করে তখন অনেকে বিশ্বাস করতে পারেনি। হিজাব পরতে আরম্ভ করে। ফয়সাল ও তার কিছু সহযোগীকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আজকে থেকে তারা ভাই-বোন। ধর্মান্তরিত শাহাদা টুইট করে, ‘অনেকে মনে করছেন আমি স্পাই হিসেবে কাজ করছি। আমি বলতে চাই আমি ৯২ শতাংশ নির্ভেজাল সত্য আমি ২৮ ডিসেম্বর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। এখন থেকে আমার নাম শাহেদা ।’
পরিবারের চাপ : অ্যালেক্সের দাদি খুব ভোরে উঠে দেখে অ্যালেক্স জেগে আছে। ঘুমায়নি। সেই মার্চ মাস থেকে দাদুর সঙ্গে তর্ক বাধতে শুরু হয়। একদিন খুব সকালে অ্যালেক্সে দাদি আইসিসের সদস্যদের সঙ্গে অনালিনে মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করেন। যে অ্যালেক্সকে নিয়োগ দিয়েছে আইসিসে। অনেক চেষ্টা চালালো আইসিসের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করার সম্ভব হয়নি। তারপর অ্যালেক্সের কম্পিউটার, ট্যাব, ফোন জব্দ করলো দাদি। আইসিস আবার তার দাদি সঙ্গে কোনো একভাবে যোগাযোগ করলো। দাদি কে সালাম দিলো। দাদি প্রতি উত্তরে জানালো, ‘অ্যালেক্সকে আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তোমরা কি করে মনে করলে নিশ্চিত বিপদ জেনে এমনাবস্থায় আমি অ্যালেক্সকে তোমাদের কাছে তুলে দেব। কি মনে করো তুমি নিজেকে? যেখানে, ২৪ বছর ক্রিসচিয়ান আদর্শে অ্যালেক্সকে গড়ে তুলেছি সেখানে তুমি তাকে মগজ ধোলাই করে তোমাদের দলে ভেড়াতে চাইছো ।’
ফয়সাল কিছুক্ষণ পর উত্তর দিলো, ‘আমি বুঝতে পেরেছি আপনি উগ্র মুসলিম বোঝাতে কি বলতে চাইছেন। আমার অনুরধ রইলো ফক্স চ্যানেলের নিউজকে বিশ্বাস করবেন না। আমরা সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করি না। আমরা এমন কোনো কাজ করি না যা আমার বন্ধুদের জন্য ক্ষতিকর কিংবা অবৈধ।’
অ্যালেক্সের দাদি অ্যালেক্সের টুইটার, ই-মেইল, স্কাইপের পাসওয়ার্ড চাইলে বাধ্যে হন দাদিকে দিতে। অ্যালেক্সের দাদি অ্যালেক্সের সব সামাজিক মাধ্যমের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলেন। অ্যালেক্সের বাসায় এফবিআইয়ের গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন এসে অ্যালেক্সের সব চ্যাটের তথ্য ডাউনলোড করে নিরাপত্তার বিশ্লেষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সেন্টারে। অ্যালেক্সের দাদি অ্যালেক্সকে নিয়ে ভ্যাকেশনে বের হন। তারপর, বেশ অনেক মাস সামাজিক মাধ্যম ছেড়ে সব কিছু থেকে দূরে ছিলো অ্যালেক্স। মগজ ধোলাই হয়ে যাওয়া অ্যালেক্স আবারো নিরাপদ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলো।
অামাদের অভিবাবকদের এখনই সন্তানের গতিবিধি নজরে রেখে সচেতনতা অতীব জরুরী..............
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭