somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাসেন, ছাত্রলীগ, মিরাক্কেলে জামিল এবং আমাদের সেন্স অব হিউমার

১৩ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সাপ্তাহিক কাগজ: বর্ষ: ৫; সংখ্যা:১৮; ৯ জুন ২০১৩)
আজ (২০/০৫/১৩ইং) একটি বিশেষ দিন। গত বেশ অনেকদিনের অস্থির রাজনীতি, অসভ্য হেফাজতি কর্মকান্ড,

বিষাদের কালো ছায়ায় রানা প্লাজা ট্রেজেডি, জামাতী তান্ডব, পেট্রল বোমার হরতালে রাস্তায় গাড়ি সংকট, বেদের মেয়ে জোৎস্নার মতো মহাসেনের ফাঁকি

সহ নানা জটিলতার পর ফর্মে ফিরেছে ঢাকার জ্যাম, সূর্যের উত্তাপ আর পত্রিকার পাতা জুড়ে মেসির মতো ফর্মের তুঙ্গে আবারো ছাত্রলীগ।

সত্যিই! চমৎকার ভাবেই দেশ আবারো আগের অবস্থানে ফিরে গেছে অনেকটা। বর্তমানে ছাত্রলীগের পারফরমেন্সে কখনো কখনো ভুলে যেতে হয় শিবিরের অসভ্য রাজনীতিক খেলা। মনে এ যেন একটা প্রতিযোগীতা:
‘দেখা যাবে আজি
কে হারে কে জিতে’

এদিকে হঠাৎ একটি ঘটনা আমাদের মাঝে দেশ প্রেমের ঢেউকে মহাসেন থেকে পেরিয়ে সুনামীর দিকে ধাবিত করেছে। কারণ ফেসবুক সহ ইন্টারন্টে ভিত্তিক প্রায় সব সংবাদ, ব্লগসহ যাবতীয় যোগাযোগ মাধ্যমে এই মুহুর্ত্বে চলছে জামিলের বংশ উদ্ধার তান্ডব।

গত বুধবার ১৫ মে রাতে ভারতের জি বাংলা চ্যানেলের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান যা এপার ওপার দু বাংলাতেই হয়ত এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, সেই মিরাক্কেলে বাংলাদেশের প্রতিযোগী জামিল পুরো কৌতুকটিই পরিবেশনা করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে। তার পারফরমেন্স শেষে সে আবারো সেরা পারফরমারের পুরস্কার জিতলেও, বাংলাদেশে সেটা গর্বের বিষয়ে না পৌঁছে, তা নেমেছে প্রথমে প্রতিবাদে আর তারপর গালি গালাজ (প্রথমে জামিলকে তার পর পরিবারকে ধরে) এবং সর্বশেষ ফেসবুকের পাতায় একজনকে দেখেছি কমেন্ট করতে: ‘.......টার মাথার দাম ঘোষণা করা হোক’। এ প্রতিক্রিয়ার পুরোটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি প্রেম আর ভালবাসার কারণেই। কারণ আমাদের রাজনীতি যেখানে দিনের পর দিন আমাদের বিভক্ত করার কাজে নিয়োজিত, সেখানে ক্রিকেট আমাদের করেছে একত্রিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আসলে যা বোঝায়, সেটা তো একমাত্র ক্রিকেটই করেছে। বঙ্গবন্ধু আর জিয়াউর রহমানের পর আমাদের সামনে সত্যিকারের স্টার খ্যাত কে আছে ক্রিকেটার ছাড়া! এই ক্রিকেটারদের সফলতায় আমরা কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে আনন্দ চিৎকার করেছি, আবার তাদের পরাজয়ের কষ্টে আমরা গলাগলি করে চোখের পানি ফেলেছি। বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক কি চ্যালেঞ্জ করতে পারবে তাদের কারো জন্য এভাবে দেশ হাসবে বা কাঁদবে! অসম্ভব এবং অসম্ভব!
আইপিএলের কল্যাণে পুরো ভারত জুড়ে সবগুলো টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের টিআরপি নিম্নমুখি, তখন মিরাক্কেল দু বাংলাতেই সমান রাজত্ব করে যাচ্ছে। এমন কি এত এত গালিগালাজ আর প্রতিবাদের পরও এটাই জানি কেউই মিরাক্কেল দেখা ছাড়বে না। কারণ আর কিছুই না, আমাদের জীবন থেকে জীবনের রঙ হারিয়ে যাওয়া।
মিরাক্কেল এমন একটা অনুষ্ঠান যেখানে প্রতিনিয়ত তারা নানা ব্যপারে ফান করে যাচ্ছে। শচিন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন, প্রসেনজিত থেকে শুরু করে মিঠুন চক্রবর্তী কে বাদ পড়েছে তাদের ফান বান থেকে! মিঠুনের একটি সিনেমা ‘শুকনো লঙ্কা’ নিয়ে ফান করতে গিয়ে মিঠুনের সামনেই অসাধারণ এক জোকসের মাধ্যমে তারা ইঙ্গিত করেছিল বয়সের ফলে মিঠুনের পুরুষচিহ্ন এখন শুকনো লঙ্কা হয়ে গেছে। আর প্রসেনজিতের হাটাচলা থেকে শুরু করে ডায়লগের স্টাইল সবই তারা নিয়মিত ফান হিসেবে ব্যবহার করে। শাহরুখ খানের ছাগলের ডাক মার্কা মূদ্রাদোষ, কলকাতার রাজনীতির দুই প্রতিক লাল এবং সবুজ নিয়ে কতশত কথা হয়, জোকস হয় মমতা বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে। বিচারক হিসেবে উপস্থিত শ্রীলেখা মিত্র আর রজতাভ দত্ত প্রতিনিয়ত হাসির খোরাকে পরিণত হচ্ছেন নানাভাবে। আর পরিচালক শুভঙ্কর তো প্রায় প্রতিটা প্রতিযোগীরই প্রিয় জোকস আইটেম। এতকিছুর পরও তারা সবাই স্পোর্টিং মনোভাবের কারণে নিজেরাই এটা নিয়ে খুব মজা করেন। কিন্তু আমরা সেটা ধারণ করতে পারলাম না। কারণ আমরা জীবনের নানা জটিলতায় সবকিছুতেই আমরা শুধু অপদস্থতা খুঁজি। কারণ আর কিছুই না আমাদের কনফিডেন্সের অভাব। আমরা নিজেদের নিয়ে জোকস করতে পারি না। আমাদের সব সময়ের অভ্যাস, যতক্ষণ নিজের উপর কিছু এসে না পড়ে ততক্ষণ আমরা নির্বিকার থাকি। অপরের সম্মান যাওয়াতে আমরা আনন্দ পাই। ছিনতাইকারী কাউকে ধরলে আমরা গোল হয়ে দেখি। প্রতিবেশী বিপদে পড়লে আমরা দরজা আটকে বসে থাকি। কিন্তু নিজের ঘরে কিছু হলে, কেন প্রতিবেশী এগিয়ে আসলো না সেটা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করি। বাংলাদেশের মিরাক্কেলের একজন দর্শকও কি আছেন যিনি মিরাক্কেল দেখে কখনও ভাবেননি যে, “শুধুমাত্র ভারত বলেই এভাবে রাজনীতি নিয়ে জোকস করলেও তা প্রচার হয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশ হলে হয় সেটা কেটে বাদ দিত নতুবা সরকার চ্যানেল বন্ধ করে দিত”! শুভঙ্কর বা অন্যান্য যারা মিরাক্কেলে নিয়মিত জোকস আইটেম হচ্ছেন উনারা কি এটা নিয়ে কখনই ক্ষিপ্ত হচ্ছেন? হচ্ছেন না। কারণ ব্যপারটা এমন না যে, তাদের সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ থেকে কেউ এটা করছে। নিজেরাও এটা নিয়ে মজা করছে। জামিল বলেছে বলে এটা আশরাফুলের ঘরের ঘটনা বাইরে বের করার মতো অপরাধ না। জামিল বলেছে বলে, আশরাফুলের ছেলে, তার মা’কে সে কথা বলছে না। এটা পুরোটাই একটা কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে মজা করা। যদি সেদিন জামিল বাংলাদেশের পরিবর্তে অন্য যে কোন দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে জোকসটা করতো এবং সেরা পারফরমার নির্বাচিত হতো, তবে আমরা গর্ব করে নানা কথা বলতাম। কিন্তু যেহেতু সে আমাদের খেলোয়অড় নিয়ে মজা করেছে, কাজেই আমরা এখন তার গুষ্টির পিন্ডি উদ্ধার করছি। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, সেন্স অব হিউমারের অভাব। আমরা নিজেদের উপর কনফিডেন্স রাখি না। আমাদের নিজেদের উপর আস্থা কম। বিদেশ গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার মতো কাজ তো জামিল করেনি। সে অন্যদের নিয়ে মজা না করে, নিজেদের নিয়ে মজা করেছে, যেটা আমরা বন্ধুবান্ধবরা প্রায়শ করে থাকি। আজ যদি জামিল বা অন্য কেউ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে মজা করে, তবেও তো সে এলাকার লোকজন তার মাথার দাম চেয়ে বসবে। অথচ আমাদের দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় যে রসবোধ আছে, শুধুমাত্র সে ভাষাতে কথা বললেই বড় বড় জোকস আইটেম মুখ থুবড়ে পড়বে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি কিংবা বরিশালের ভাষায় যে অসাধারণ রসবোধ আছে, সেটা যদি কখনো ব্যবহৃত হয়, তবে দেখা যাবে সে অঞ্চলের লোকজন ঘোষণা দিয়ে বসতে পারে, আমাদের ভাষা কি কৌতুকের ভাষা! তার মানে কি আমরা জোকার! যা ছ্যারার কল্লা কাইটা আন!
ক্রিকেট এবং দেশের প্রতি আপনাদের ভালবাসা এবং শ্রদ্ধার প্রতি সম পরিমাণ ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই। আপনারা আসলে জোকসের হিউমারের চাইতে রিউমারকে নিয়ে বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই আপনারা জোকসের খোলসটা নিয়েই চিৎকার করছেন। আবারো বলছি, আমাদের কনফিডেন্সের খুব বেশী রকমের অভাব। তাই সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আমরা জোকস করতে পারি না আবার জোকসকে নিয়ে অযথাই সিরিয়াস হই। কারণ সেন্স অব হিউমারের প্রচন্ড খড়ায় আমরা দিনযাপন করছি। আর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী লেখাটি যখন পড়ছেন তার আগেই (২১ মে)

আপনার নিশ্চয়ই দেখেছেন জামিল আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ক্ষমাটা তো মহেত্বেরই লক্ষণ। কাজেই এবার নিশ্চয়ই আমরা জাতিগতভাবে সেই মহাত্বটা দেখাবো।
শেষ করবো একটা জোকসের ঘটনা দিয়ে। একবার অভিনেতা এবং উপস্থাপক সাজু খাদেম একটা অনুষ্ঠান করেছিলেন জোকস নিয়ে। সেখানে একটা জোকস ছিল: ‘এক লোক সারা জীবন গোড়া আওয়ামীগ সমর্থন করার পর শেষ বয়সে মৃত্যুর প্রহর গোনার সময় বিএনপিতে নাম লেখালো। এটা নিয়ে সবাই হৈ হৈ করে উঠলো। কারণ সারা জীবন যে আদর্শকে ধারণ করেছে মৃত্যুর আগে আগে কেন তাকে বদল! তখন সে জবাব দিল, আমি মরার আগে শিউর কইরা গেলাম যে দেশ থেইকা একজন বিএনপি সমর্থক কমলো।’ না জোকসটি টিভিতে প্রচার হয় নি। সেটা কেটে দেয়া হয়েছিল। কারণ আমাদের সেন্স অব হিউমারের অভাব। আর তাই চ্যানেল কোন রিস্ক নিতে চায় নি। জোকসটিতে লীগ আর দলের অবস্থান পরিবর্তন করলেও ফলাফল একই থাকতো। কারণ আর কিছুই না.....!!!
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×