আমাদের বাঙ্গালী আবহে সকল মায়েরাই একই রকমের। আমার মা আর তোমর মায়ের মাঝে তেমন কোন পার্থক্য চোখে পড়ে না। সেই একই রকম। একই তার মমতা, স্নেহ একই সেই চাহনী। কেমন যেন আদ্র, খুশিতেও আদ্র, কষ্টতেও আদ্র। মায়েরা আমাদের মানে সন্তানদের নিয়ে শুধুই চোখ ভেজান।
বাঙ্গালী মায়েরা সব এক। হলুদের আঁশটে গন্ধে ভরা আঁচল, শরীরেও সেই একই গন্ধ। বাড়িতে ভাল কিছু রান্না হলে নিজের জন্য সবচেয়ে খারাপটা রাখার জন্য যেন জন্মগত সংকল্প তার। আর ভালটা সন্তানের জন্য রাখবেন এটাও যেন জন্মগত শপথ।
মায়ের শরীরের সেই মা মা গন্ধ আর কোথাও কি মেলে! কৃত্রিমভাবে কত ফ্লেভারই তো আমরা গ্রহণ করছি রোজ। কিন্তু মায়ের শরীরে, শাড়ির আঁচলে, রান্নাঘরে, জলতলায় কলের পাড়ে যে মা মা গন্ধ সেটা কোথায় পাই! সমাজের একদম উঁচু থেকে একদম ছিন্নমূল মায়ের মাঝে মা মা আবহটার মাঝে কোন পার্থক্য নেই বলেই ধারণা করতে পারি। একই সেই আবেগ, একই সেই মহাত্ব।
আমাদের উন্নত বিশ্ব এখন উন্নতির চরমে পৌঁছে, জীবনযাত্রাকে নিয়ে গেছেন দিবসের কেন্দ্রিকতার জালে। তারা এখন মা দিবস পালন করেন, বৃদ্ধাশ্রমে মা’কে ফুল বা টুকটাক গিফট পাঠিয়ে পাঠিয়ে মায়ের প্রতি দায়িত্ব আর ভালবাসার প্রকাশ ঘটান। অপরদিকে আমাদের দেশ এতটা প্রকট আধুনিকতা এখনো পৌঁছেনি। তদুপরি কিছু কিছু উত্তরাধুনিক পরিবারের সদস্যরা তাদের পরিবারের বোঝা তূল্য বিবেচনায় পরিবারের এই মধুর সম্পর্কটিকে বিচ্ছিন্ন করে মা-বাবাকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে।
আবার অপ্রিয় একটা কথাও এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে, আমাদের ধনিক শ্রেণী এক সময় ক্ষমতা আর টাকার দাপটে ভুলে যান গ্রামে থাকা আত্মীয়স্বজনদের। কখনো কখনো তারা মনেও রাখেন না গ্রামে থাকা মা-বাবার কথা। ফলে শহুরে দাপটের কাছে উনারা হারিয়ে ফেলেন নিজের শেকড়ের ঠিকানা। ফলে জীবনের এই দূর্যোগ মূহুর্ত্বে তারা শহরের এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ফিরে যেতে পারেন না গ্রামের সেই শেকড়ের কাছে। কারণ তখন তাদের যাবার জায়গা নেই বলেই আবিস্কার করেন। বারবার মনে পড়ে, গ্রাম থেকে কাঁদামাটি মাখা সেই মানুষগুলো কখনই ড্রয়িংরুমের দামী সোফায় বসতে পারেনি, ময়লা হবার ভয়ে। দুদিন তার বাড়িতে অবস্থান করতে পারেনি। ফলে আজ তার জন্য বৃদ্ধাশ্রমের বাইরে আর কোন ঠিকানা অবশিষ্ট নেই। অথচ এই মানুষটিই হয়ত এমন দু:ষহ সময়ে চাইলেই আবারো কাছে পেতেন গ্রামের সেই মাটির মানুষদের। কারণ মাটি কখনো বেইমানী করে না। গ্রামের সেই মানুষগুলো সব সময়ই সরল। কিন্তু তাদের সামনে দাঁড়াবার সেই সৎ সাহস তখন আর রাখেন না।
সবশেষ কথা: মা, মাতৃভুমি, মাতৃভাষা এই শব্দগুলো কখনো বস্তুগত বা অবস্তুগত যেভাবেই নেন না কেন, যদি আপনি এদের ভালবাসেন, যদি হৃদয়ের দূর্বিষহ অস্থিরতায় একটু আশ্রয়ের জন্য মায়ের কথা মনে পড়ে, যদি ভালবাসা, শ্রদ্ধা কিংবা অশ্রুসিক্ত চোখে মায়ের পবিত্র মুখটিকে বারবার হৃদয়ে ধারণ করতে পারেন, তবে অবশ্যই এবং অবশ্যই আপনার মন থেকে ঘৃণা আর ধিক্কার বেরিয়ে আসবে তাদের প্রতি যারা আপনার আমার এই বাংলার প্রতিটি মা’কে গণিমত বা লুটের মাল হিসেবে ঘোষণা করে সরবরাহ করতে চেয়েছিল এবং করেছিল পাকিস্তান বাহিনীর হাতে সেই ৭১-এ।
পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা। সকল মা ভাল থাকুক। মা আমরা তোমার কোটি কোটি সন্তান জেগে আছি, তোমার সুরক্ষায় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। নতুন এই যুদ্ধ শেষে আবারো ফিরে আসবো তোমার কোলে। শান্তির সুবাতাস নিতে।
## (লেখাটি সাপ্তাহিক কাগজে প্রকাশিত)
তির্থক আহসান রুবেল
tirthok_duet@yahoo.com
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯