বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন একবার বিজয় দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। একবারের জন্যও 'শেখ মুজিব' বা আওয়ামীলীগের নাম না শুনে মনে হয়েছিল, বিএনপি-জিয়া-খালেদা-তারেক-কোকো...এদের জন্ম মনে হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। এরাই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা, এগার দফা, সত্তুরের নির্বাচন এবং পরে একাত্তরে যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছে। আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধু..এই নামগুলো মনে হয় কোন গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে ইতিহাসে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
আমার বিশ্বাস জিয়া প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন একবারের জন্যও চিন্তা করেননি, কে স্বাধীনতার ঘোষক। আওয়ামীলীগের অনেক নেতাও জিয়াকে একজন বিচক্ষণ বা ভালো মানুষ বলতে শুনেছি। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরই জিয়াউর রহমান 'স্বাধীনতার ঘোষক' হিসেবে আবির্ভূত হলেন। খালেদা জিয়া অষ্টম শ্রেণী পাস, মাফ করে দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু তার পাশের চেলা চামুন্ডারা তো বিলাতি ডিগ্রি অর্জন করা, ডাকসাইটে সাবেক আমলা। ইংরেজি অনুবাদে এতো কাঁচা কেন?
-----------------------------------------
This is the Free Bengal Radio Station. I, Major Ziaur Rahman, at the direction of our great leader Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, do hereby declare that the independent People's Republic of Bangladesh has been established. At his direction , In the name of Sheikh Mujibur Rahman, I call upon all Bengalees to rise up against the attack of the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our motherland. Victory is, by the Grace of Allah, ours. Joy Bangla!
--------------------------------------------------------------
স্বাধীনতার ঘোষক কে, এটা তো আমাদের খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা বা নব্য ইতিহাসবিদ তারেক রহমানের কাছ থেকে জানতে হবে না। জিয়া নিজেই তো বলে গেছেন।
কথিত আছে, বীরাঙ্গনাদের তালিকায় খালেদা জিয়ার নামও থাকা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি পাক আর্মিদের হেফাজতে ছিলেন। ফলস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। পরে, বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে জিয়া তাকে গ্রহণ করেন। আজকের স্বামী-সংসার, সে তো বঙ্গবন্ধুর দান। সেই 'বীরাঙ্গনা' খালেদা, বাংলাদেশের তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর গতকাল প্রথমবার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি এবং সম্মাননা পেলেন। বিএনপি নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, দেশের সকল বীরাঙ্গনাদের খুঁজে বের করে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা দেওয়া হোক।
নব্য ইতিহাস বিশারদ তারেক রহমান জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে গোপন বায়বীয় বার্তা পেয়ে গত মঙ্গলবার লন্ডনে বলেছেন, জিয়া বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। গতকাল তার মাও ঢাকায় বললেন। বাংলাদেশে তো এমনিতেই কৌতুকের অভাব নাই। মানুষ হাসানোর জন্য এটা না করলেও পারতেন। অন্তত: বিলাতি ডিগ্রী পাওয়া শিক্ষিত চেলা চামুন্ডারা এটা আটকাতে পারতেন। রূপালী ম্যাডামের গুণমুগ্ধ জনাব বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বা তরুন তুর্কী গোলাম মাওলা রনি এ সম্পর্কে কি সুদীর্ঘ নিবন্ধ লিখেন, জানার অপেক্ষায় রইলাম।
খালেদার জন্ম তারিখ বারবার পরিবর্তন করে এবার ১৫ আগস্টে স্থির হয়েছে। কিন্তু তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেতো জিয়াকে 'সপ্তম' প্রেসিডেন্ট হিসেবেই দেখানো হয়েছে। সেটা জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করানো দরকার না?
সারা জীবন যে ইতিহাস পড়ে এসেছি, বিএনপি সরকার পড়িয়ে এসেছে তা আবার নব্য ইতিহাসবিদ বদলে দিয়েছেন। নতুন এই আবিষ্কারের জন্য তিনি নি:সন্দেহে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখেন।
ধারণা ছিল, আম্রিকা (ডেন মজিনা), ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চীনা কূটনীতিকরা খালেদাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবেন। দেশের মানুষের অনুভূতির প্রতি ন্যূনতম সম্মান না দেখিয়ে তারা প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে এসি রুমে দরজা আটকিয়ে মিটিং করেছেন। দেশের জনগণের ভোটাধিকারকে তোয়াক্কা না করে বিদেশি কূটনীতিকদের উপর নির্ভরতার ফলাফল বিএনপি পেয়ে গেছে। ক্ষমতায় যেতে না পেরে পাগলা কুত্তার আচরণ করছে বিএনপি নেতা কর্মীরা। সর্বশেষ যোগ দিলেন শীর্ষ ব্যক্তিরা। আফসুস। দেশের মানুষের স্মৃতিশক্তি খুবই কম। সবসময়ই তারা নতুনকে বিশ্বাস করে, পুরনোকে মনে করতে চায় না। অপেক্ষায় আছি, একদিন হয়তো রুহুল কবির রিজভী, হান্নান শাহ, সাদেক হোসেন খোকা রা মিটিঙ মিছিল করে আন্দোলন করবে 'জিয়া বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট' এই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। শফিক রেহমানরা লিখতে লিখতে রাত পার করে দিবে। প্রশ্ন একটা থেকেই যাবে, একাত্তুর থেকে সাতাত্তুর...এই সময়টা কেমনে ম্যানেজ করা যায়? বাংলাদেশ কি আসলে সাতাত্তুরে স্বাধীন হয়েছিল? নাকি সাতই মার্চের ভাষণটা জিয়াই দিয়েছিল? ডিজিটালাইজ করে কন্ঠ-ছবি বদল করা হয়ে থাকতে পারে! কি জানি! আওয়ামীলীগ পারে না এমন কাজ তো দেখি নাই!
তবে কথা হলো, তারেক-খালেদা দেশের মানুষকে নতুন যে 'খাবার' দিয়েছেন তা হজম হবে কি? বিএনপি'র পক্ষ থেকে বিনামূল্যে 'টেস্টি হজমি' বিতরণ কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে। ড্যান মজিনা, ইউনূস সাহেবরা ওবামার সাথে দর-কষাকষি করে কিছু নগদ নারায়ন আদায় করতে পারেন, চীন থেকে কম পয়সায় বানিয়ে আনা যেতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সার্বিক বিষয় তদারকি বা মনিটরিং করতে পারে। তাদের পর্যবেক্ষকদের তো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয় নি, এইটা দিয়ে বাজেটটা খরচ দেখানো যেতে পারে।
প্রশ্ন হলো, সব যদি বিএনপি-খালেদা-জিয়া-তারেকরাই করে থাকে, তাহলে আওয়ামীলীগ কি জিনিস? শেখ মুজিব কেঠা?
ভিত্তি: ১। Click This Link
২। Click This Link
৩। Click This Link
আরো একটা বিষয় পাইলাম: Click This Link