তৈদুছড়া ঝর্ণা-১ ও তৈদুছড়া ঝর্ণা-২
ভ্রমণের তালিকায় খাগড়াছড়ির নাম সাধারণত শুরুতে আসে না। বান্দরবান আর রাঙ্গামাটির তুলনায় খাগড়াছড়ি এত জনপ্রিয় না। সাজেক হওয়ার পর খাগড়াছড়িতে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। কিন্তু খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ী অরণ্যেও যে অনেক সুন্দর সুন্দর ঝর্ণা লুকিয়ে আছে সেটি আমাদের বেশিরভাগ মানুষই জানে না। অবশ্য পাহাড়ী অঞ্চলের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে তৈদুছড়া ঝর্ণা একটি অতি পরিচিত নাম। অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল ঝর্ণাদুটি দেখে আসার। এবার সময় সুযোগ মিলে যাওয়ায় চার বন্ধু একদিনের সময় বের করে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ১১ তারিখ রাতে।
সকাল ৬টায় খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছালাম। সেখান থেকে সিএনজি ঠিক করে জামতলী বাজারের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। দীঘিনালার একটু আগেই পড়বে জামতলী বাজার। সেখান থেকে সকালের নাস্তা করে এবং গাইড ঠিক করে আমরা ঝর্ণার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। আগেই খোঁজ নিয়েছিলাম। কিন্তু ঝর্ণার ট্রেইলটা যে এত থ্রিলিং হবে সেটা আগে জানা ছিল না। ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য কয়েকটি পথ আছে। গাইড আমাদের কে বলে সবচেয়ে কঠিন ঝিরি পথ দিয়ে নিয়ে গেল। আমরা তো পুরা অবাক। কয়েকটা জায়গা তো খুবই বিপদজনক। একটু পা পিছলে গেলেই শেষ। কয়েকটা ক্যাসকেডের সামনে হুট করেই অনেক গভীর সরু গর্ত হয়ে গিয়েছে। উপর থেকে পানি প্রবাহের জন্য বোঝার কোন উপায় ও নেই। বান্দরবানের আমিয়াখুম যাওয়ার সময়ও এর চেয়ে কম ভয় লেগেছিল। এভাবে পাহাড় টিলা ঝিরি পথ গভীর অরণ্য পার হয়ে তৈদুছড়া-১ ঝর্ণায় পৌঁছালাম।
ঝিরিপথের একটু বর্ণনা দেয়া প্রয়োজন। বিশাল বিশাল পাথর তো আছেই। একটু পরপর পড়বে বিভিন্ন আকৃতির ডিম্বাকার পাথর। আর এরকম পিচ্ছিল ঝিরিপথ খুব কমই আছে। অনেকবার আছাড় তো খেতেই হবে। যাইহোক, ঝর্ণা দেখার পরেই সব কষ্ট চলে গেল। ঝর্ণার সামনে আবার প্রাকৃতিক সুইমিং পুল। তবে সাঁতার না পারলে পানিতে নামা থেকে বিরত থাকতে হবে। মাঝের অংশটা বেশ গভীর। আর ঝর্ণায় উঠার সময়ও খুব সতর্ক থাকতে হবে। খুবই পিচ্ছিল। বেশ কিছু সময় পার করার পর আমরা যাত্রা শুরু করলাম তৈদুছড়া ঝর্ণা-২ এর দিকে। ১-২ ঘন্টা পর আমরা দ্বিতীয় ঝর্ণায় পৌঁছালাম। তারপর ভিন্ন পথে আবার জামতলী বাজার ফিরে আসলাম।
জামতলী বাজার থেকে যাত্রা শুরু করে আবার জামতলী বাজারে ফিরে আসতে ৬-৭ ঘন্টা তো লাগবেই। কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন, এটা বেশ দীর্ঘ এবং কঠিন একটা ট্রেইল। সেটা মাথায় রেখেই যেতে হবে। যেহেতু ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা, তাই সে বিষয়ে সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। শুকনা খাবার আর স্যালাইন তো নিতে হবে। আর যেটা সবসময়ই মাথায় রাখতে হবে সেটা হল কখনোই পরিবেশে ময়লা আবর্জনা যেমন বিস্কুটের প্যাকেট, পানির বোতল এসব ফেলা যাবে না।
নিচে এই তৈদুছড়া অভিযানের কিছু ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করা হলঃ
তৈদুছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার পথের কিছু দৃশ্যঃ
তৈদুছড়া ঝর্ণা-১ এর দৃশ্যঃ
তৈদুছড়া-১ ঝর্ণার সামনে সৃষ্ট প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে সাঁতারের দৃশ্য। এ অংশটা বেশ গভীর। সাঁতার জানা না থাকলে নামা যাবে না।
তৈদুছড়া-২ এর পথেঃ
রিস্কি ট্রেইলের কিছু অংশঃ
তৈদুছড়া-২ ঝর্ণার দৃশ্যঃ
আরো কিছু ছবি দেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ম্যাক্সিমাম আপলোড লিমিট শেষ আপাতত।
ভ্রমণ করুন। নিজের দেশকে জানুন। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৭