অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করেছি আমি গুগল সার্চ করে পেঁয়াজের কোনো প্রকার অপকারিতা খুঁজে পাচ্ছি না! এমন একটি পণ্য যার শুধু গুণ আর গুণ! - এমনটি তো হবার কথা নয়? পেঁয়াজ কোনো কনজ্যুমার প্রতিষ্ঠান দ্বারা তৈরিকৃত পণ্য নয়, তারপরও যারা গুগল সার্চ করবেন তারা পেঁয়াজের গুণাগুণ পড়ে সপ্তাশ্চর্য হবেন এটি আমার ধারণা। বাঙালির প্রধান খাদ্য পেঁয়াজ নয় ভাত - পেঁয়াজের জন্য হাহাকার দেখে মনে হয় প্রধান খাদ্য হিসেবে ভাতের স্থান পিয়াজ দখল করে নিয়েছে! যাইহোক পেঁয়াজের অপকারিতা ও অতিরিক্ত পেঁয়াজ খেলে কি কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তার কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পেরে ভালো লাগছে, আশা করি ব্লগারদের উপকার হবে এছাড়া যারা ব্লগে না থেকেও ব্লগ পড়েন তারাও উপকৃত হবেন। সকলকে অগ্রিম ধন্যবাদ।
১। অ্যালার্জি: বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়া আমাদের জন্য উপকারী। তবে, পেঁয়াজে অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য খাওয়াটা মোটেই নিরাপদ নয়। কারণ হিসাবে বলা যায়, অ্যালার্জি ও ক্লিনিকাল ইমিউনোলজি জার্নাল অনুসারে, অ্যালার্জির অন্যতম একটি উৎস হচ্ছে পেঁয়াজ। যদি আপনার পেঁয়াজের কারণে অ্যালার্জি হয়, তবে আপনার মনে রাখা উচিত যে, পেঁয়াজ খেলে ত্বক এবং চোখে লালভাব, ত্বকের চুলকানি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, শরীর জ্বলন ইত্যাদির মতো অ্যালার্জির লক্ষণগুলির জন্ম দিতে পারে।
২। অন্ত্রের গ্যাস, লিভার ও অম্বলজনিত সমস্যা: বেশি পেঁয়াজ খাওয়ার আর একটি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হলো আমাদের দেহে অন্ত্রের গ্যাস সৃষ্টি। পেঁয়াজের এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মূলত ফ্রকটোজের মতো প্রাকৃতিক শর্করার উপস্থিতির কারণে। কেননা, আমাদের পেট বেশিরভাগ শর্করা হজম করতে খুব দক্ষ নয়। যার মধ্যে ফ্রুকটোজ অন্যতম। চিনি যেহেতু আমাদের পেটে সঠিকভাবে হজম হয় না তাই তারা অন্ত্রগুলিতে প্রবেশ করে যেখানে তারা ব্যাকটিরিয়া দ্বারা ভেঙে যায়। ফলে এই গ্যাস তৈরি হয়। তবে কম পরিমাণে পেঁয়াজ কোনও হুমকি নয়। যদি আপনি বেশি পেঁয়াজ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন তবে অন্ত্রের গ্যাসের মাত্রা বাড়তে পারে এবং এটি হজমজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন পেট ফুলে যাওয়া, অস্বস্তি, পেট ফাঁপা ইত্যাদি। আপনার পাচনতন্ত্রটি পেঁয়াজের প্রতি অসহিষ্ণু হলে লক্ষণগুলি আরও খারাপ হতে পারে। খাদ্য অসহিষ্ণুতা জীবন হুমকিস্বরূপ, কখনও কখনও এটি বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার কারণও হতে পারে। পেট ফাঁপছে, বুক জ্বালার সমস্যা কিছুতেই আপনার পিছু ছাড়ছে না। কিন্তু কেনো? অতিরিক্ত পরিমাণে পেঁয়াজ খাওয়া লোকদের অম্বল জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেইসঙ্গে গর্ভবতী মহিলারা রয়েছেন হৃদরোগের ঝুঁকিতে । অম্বল এমন একটি সমস্যা যার কারণে বুকে জ্বলন্ত সংবেদন এবং চরম ব্যথা অনুভব হয়। এটি প্রধানত ঘটে যখন আমাদের পেটে উপস্থিত অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উর্ধ্বমুখী প্রবাহিত হয়। এই কারণে, মাঝারিভাবে পিঁয়াজ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং বিশেষত গর্ভবতী মহিলাদের চিকিত্সকের সাথে পরামর্শ করার পরে পেঁয়াজ খাওয়া উচিত।
৩। অত্যধিক পটাসিয়াম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: পটাশিয়ামের কাজ হলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা। তাই শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। সেইদিক থেকে ভালো সংবাদ যে, পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে। তবে আপনি যদি খুব বেশি পেঁয়াজ খান তাহলে আপনার শরীরে উল্টো বিক্রিয়া হয়ে খুব অসুবিধে সৃস্টি করতে পারে। কারণ অনেক বেশি পেঁয়াজ খাওয়া আমাদের রক্তচাপকে বিপজ্জনকভাবে কমিয়ে আনতে পারে এবং হাইপোটেনশনের জন্ম দিতে পারে ফলে ক্লান্তি, হালকা মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, হতাশা, ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি সমস্যায় পড়তে পারেন। এ ছাড়াও, আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতিমধ্যে মেডিসিন গ্রহণ করছেন তবে আপনার ওষুধগুলির জন্য পেঁয়াজ পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত কারণ ওষুধ এবং পেঁয়াজ উভয়ের সম্মিলিত প্রভাব আপনার রক্তচাপকে বিপজ্জনকভাবে নিম্ন স্তরে হ্রাস করতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শরীরের নানাবিধ সমস্যা তৈরি করে অতিরিক্ত পেঁয়াজ।
৪। হৃদপিন্ডের সমস্যা: পেঁয়াজের নিয়মিত ও পরিমিত গ্রহণ আমাদের হৃদয়ের পক্ষে খুব উপকারী । যা আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের এই উপকারটি মূলত ভিটামিন, খনিজ, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ইত্যাদির মতো পুষ্টির উপস্থিতির কারণে হয়। পেঁয়াজে উপস্থিত পটাসিয়াম ভাসোডিলেটর হিসাবে কাজ করে যার অর্থ এটি আমাদের রক্তনালীগুলি শিথিল করে এবং আমাদের দেহে রক্ত চলাচলকে উন্নত করে এবং এইভাবে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি হ্রাস করে। তবে এটি লক্ষ করা উচিত যে, প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যে হৃদরোগের পক্ষে খুব ভাল নয়। কারণ আমাদের দেহে পটাসিয়ামের উচ্চ মাত্রা হাইপোটেনশনের জন্ম দিতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে আপনার অনিয়মিত হার্টবিট এমনকি হার্ট স্ট্রোক এর মতো মারাত্মক অঘটন ঘটতে পারে যেকোনো সময়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত ও মাঝারি পরিমাণে পেঁয়াজ খাওয়া খুব উপকারী। পেঁয়াজের এই সুবিধাটি মূলত পেঁয়াজের কম গ্লাইসেমিক সূচক হওয়ার কারণে। পেঁয়াজ খাওয়া রক্তের প্রবাহে ধীরে ধীরে সুগার ছেড়ে দেয় এবং এইভাবে ডায়াবেটিস পরিচালনা করতে সহায়তা করে। এগুলি ছাড়াও, পেঁয়াজে উপস্থিত ক্রোমিয়াম যৌগটি ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এটি রক্তের প্রবাহে চিনির শোষণকে ধীর করে দেয়। খুব বেশি পেঁয়াজ খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার জন্ম দেয়। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে নিম্ন স্তরে নামিয়ে আনতে পারে। ফলে অস্পষ্ট দৃষ্টি, দ্রুত হার্টবিট, অনিয়মিত হার্টবিট, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
৫। চোখের সমস্যা: উল্লেখ্য যে পেঁয়াজ কাটার সময় যে ঝাঁঝালো রস বাতাসে ভেসে চোখে লাগে ও তা চোখের জল ঝড়ায় ও ইরিটেশন সৃস্টি করে তা সকলেরই জানা। কিন্ত পেঁয়াজ নিসৃত রসের সাথে থাকে সালফিউরিক এসিড সেটা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। এই সালফিউরিক এসিডের অস্তিত্বের কারণে পেঁয়াজ কাটার সময় চোখ জ্বালাপোড়া করে ও পানি ঝড়ায়। বিজ্ঞানীরা বলেন এই সাল ফিউরিক এসিড চোখের সংস্পর্শে গেলে শুধু চোখ জ্বলাপোড়া সহ চুলকানিই নয় তা মানুষকে অন্ধ ও করে দিতে পারে। (☼ তথ্য সংগ্রহ করেছেন মাননীয় ব্লগার ডঃ এম এ আলী ভাই ☼। তথ্য: পেঁয়াজের অপকারিতা - ৩, ৪)
৬। মুখে দুর্গন্ধ: অনেক মানুষই মুখে প্রবল দুর্গন্ধের সমস্যায় ভোগেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে তো অবস্যই, সারা দিনই মুখে দুর্গন্ধ হয় অনেকের। ফলে অন্য কারোও সঙ্গে কথা বলতে গেলে মুখের দুর্গন্ধ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মুখে বা শ্বাসে দুর্গন্ধ আপনার স্বাস্থ্যর জন্য কতোটা ক্ষতিকর তা দুর দুরের ব্যাপার হলেও আপনাকে খুব বিব্রতকর অবস্থায় ফেললে এটি নিশ্চিত। আর এই দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ হতে পারে অতিরিক্ত পেঁয়াজ খাওয়া থেকে। কাঁচা পেঁয়াজের এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার মুখ ও শ্বাসকে দীর্ঘসময় ধরে দুর্গন্ধযুক্ত রাখতে পারে।
উপসংহার: অতিরিক্ত যে কোনো খাবার খারাপ। আপনারা জেনে হয়তো অবাক হবেন - শুধুমাত্র গরুর খাঁটি দুধ খাইয়ে একজন সুস্থ সবল মানুষ হত্যা করা সম্ভব! আলাদাভাবে বিষ কেমিক্যাল খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন হবে না! - মানুষ মানুষের জীবনকে ভালোবাসবেন তাই হত্যা আত্মহত্যা নয়, জীবন অমূল্য সম্পদ - জীবনের মূল্যায়ন প্রতিটি মানুষের ধর্ম। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের পেঁয়াজের প্রতি আসক্তি কমুক আপাতত এটিই একমাত্র কাম্য।
তথ্য:
পেঁয়াজের অপকারিতা - ১
পেঁয়াজের অপকারিতা - ২
পেঁয়াজের অপকারিতা - ৩
পেঁয়াজের অপকারিতা - ৪
ছবি: গুগল সার্চ ইঞ্জিন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সামহোয়্যারইন ব্লগ। নির্বাচিত পোষ্টে “উক্ত লেখাটি” স্থান দেওয়াতে সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৫