আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়।
প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদতে একশ্রেণির দালালরা এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার এই নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকবাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে।
বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা আজ পর্যন্ত গণনা করা হয়নি। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এদের মধ্যে ৯৯১ জন ছিলেন শিক্ষাবিদ, ৪৯ জন চিকিত্সক, ৪২ জন আইনজীবী এবং ১৬ জন সাহিত্যিক, শিল্পী ও প্রকৌশলী। বুদ্ধিজীবী নিধনের এ তালিকায় ঢাকা বিভাগে ২০২ জন শিক্ষক ও ১০ জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয় । চট্টগ্রাম বিভাগে ২২৪ জন শিক্ষক ও ১০ জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়। খুলনা বিভাগে ২৮০ জন শিক্ষক ও ছয়জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়। রাজশাহী বিভাগে ২৬২ জন শিক্ষক ও ১৫ জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়। তবে এ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম ছিল না।
১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। এ কাজে বাংলাদেশীদের মধ্যে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সাথে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের নির্যাতনের পর হত্যা করে। স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের মৃতদেহ সনাক্ত করেন। অনেকের দেহে আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। যা থেকে হত্যার পূর্বে তাদের নির্যাতন করা হয়েছিল সে তথ্যও বের হয়ে আসে। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি, পাওয়াও যায়নি বহু লাশ।
স্থান: পুর্ব পাকিস্তান
তারিখ: ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
লক্ষ্য: বাঙালি বুদ্ধিজীবী
হামলার ধরন: গণহত্যা
নিহত: ১,১১১ জন
হামলাকারী দল: পাকিস্তান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী, জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল শামস
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকঃ
ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র)।
ডঃ মুনির চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)।
ডঃ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)।
ডঃ আনোয়ার পাশা (বাংলা সাহিত্য)।
ডঃ আবুল খায়ের (ইতিহাস)।
ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য)।
ডঃ সিরাজুল হক খান (শিক্ষা)।
ডঃ এ এন এম ফাইজুল মাহী (শিক্ষা)।
হুমায়ূন কবীর (ইংরেজি সাহিত্য)।
রাশিদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য)।
সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা)।
ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান)।
এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান)।
এ মুকতাদির (ভূ-বিদ্যা)।
শরাফত আলী (গণিত)।
এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা)।
অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থবিদ্যা)।
এম এ সাদেক (শিক্ষা)।
এম সাদত আলী (শিক্ষা)।
সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস)।
গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস)।
রাশীদুল হাসান (ইংরেজি)।
এম মর্তুজা (চিকিৎসক)।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকঃ
ডঃ হবিবুর রহমান (গণিত বিভাগ)।
ডঃ শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত)।
মীর আবদুল কাইউম (মনোবিজ্ঞান)।
চিকিৎসকঃ
অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)।
অধ্যাপক ডাঃ আলিম চৌধুরী (চক্ষু বিশেষজ্ঞ)।
অধ্যাপক ডাঃ শামসুদ্দীন আহমেদ।
অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল আলিম চৌধুরী
ডাঃ হুমায়ুন কবীর।
ডাঃ আজহারুল হক।
ডাঃ সোলায়মান খান।
ডাঃ আয়েশা বদেরা চৌধুরী।
ডাঃ কসির উদ্দিন তালুকদার।
ডাঃ মনসুর আলী।
ডাঃ মোহাম্মদ মোর্তজা।
ডাঃ মফিজউদ্দীন খান।
ডাঃ জাহাঙ্গীর।
ডাঃ নুরুল ইমাম।
ডাঃ এস কে লালা।
ডাঃ হেমচন্দ্র বসাক।
ডাঃ ওবায়দুল হক।
ডাঃ আসাদুল হক।
ডাঃ মোসাব্বের আহমেদ।
ডাঃ আজহারুল হক (সহকারী সার্জন)
ডাঃ মোহাম্মদ শফী (দন্ত চিকিৎসক)
অন্যান্যঃ
শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক)।
নিজামুদ্দীন আহমেদ (সাংবাদিক)।
সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক)
সিরাজুদ্দীন হোসেন (সাংবাদিক)।
আ ন ম গোলাম মুস্তফা (সাংবাদিক)।
আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার)।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ)।
রণদাপ্রসাদ সাহা (সমাজসেবক এবং দানবীর)।
যোগেশ চন্দ্র ঘোষ (শিক্ষাবিদ, আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক)।
জহির রায়হান (লেখক, চলচ্চিত্রকার)।
মেহেরুন্নেসা (কবি)।
ডঃ আবুল কালাম আজাদ (শিক্ষাবিদ, গণিতজ্ঞ)।
নজমুল হক সরকার (আইনজীবী)।
নূতন চন্দ্র সিংহ (সমাজসেবক, আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক)।
শহীদ শিক্ষাবিদ (বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া) ও আইনজীবীদের জেলাওয়ারী তালিকা
উপসংহার: - ১৪ ডিসেম্বর সহ ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বাংলার শ্রেষ্ট সন্তানদের রুহের মাগফেরাত কামনা করা আমাদের সকলের কর্তব্য ও দায়িত্ব, ত্রিশ লক্ষ অমূল্য প্রাণের বিনিময়ে আজ আমরা খোলা আকাশের নিচে নির্মল বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি, ত্রিশ লক্ষ শহীদের নিঃস্বার্থ জীবনের বিনিময়ে আজ আমরা সফলতার স্বপ্ন দেখি আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক।
কৃতজ্ঞতা: - সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষ
ছবি ও তথ্য: - গুগল সার্চ ইঞ্জিন
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪৮