পাঠ্যবই কখনোই আমার কাছে আনন্দদায়ক কিছু ছিল না। বই পড়ে যে আনন্দ পাওয়া যায় সেটা অনুভব করেছিলাম সেবা প্রকাশনী আর হুমায়ুন আহমেদের হাত ধরে। বোধহয় আমার মত বহু ছেলেমেয়ের "চাইল্ডহুড হিরো" এদের সৃষ্ট চরিত্রগুলো। আমাদের ছোটবেলা আনন্দময় করার অন্যতম কারিগর প্রিয় কাজী আনোয়ার হোসেন আর হুমায়ুন আহমেদ।
কাজী আনোয়ার হোসেন উপহার দিয়েছেন প্রিয় মাসুদ রানাকে। তার হাত ধরেই রকিব হাসানের সৃষ্টি তিন গোয়েন্দার অমর চরিত্রগুলো। কিশোর পাশা, মুসা আমান, রবিন মিলফোর্ড এবং জিনা পারকার । কিশোর হওয়ার স্বপ্নে কত কিশোর কাটিয়ে দিয়েছে তাদের কিশোরবেলা। এইসব কিছু এসেছে সেবা প্রকাশনীর হাত ধরে যা কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্টি।
পাঠ্যবইয়ের ভেতরে লুকিয়ে তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, কিশোর হরর, রহস্য পত্রিকার পেপারব্যাক বইগুলো পড়ার রোমাঞ্চটাই ছিল অন্যরকম। বইয়ের কাহিনীতে মনোযোগ দেওয়ার সাথে আশেপাশের পরিস্থিতির দিকেও খেয়াল রাখতে হত। বাবার হাতে বা স্কুলের স্যারের হাতে ধরা খেলে যে পিটুনী বা কানমলা থেকে নিস্তার নেই। স্কুলে ক্লাসের মধ্যে এগুলো পড়ার জন্য কত যে কানমলা আর বেতের বাড়ি খেয়েছি হিসাব নেই।
হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে বলার কিছু নেই। বাংলা একাডেমির বইমেলাটা জনপ্রিয় হয়েছে তার বইয়ের হাত ধরেই। তার সৃষ্টি হিমু, মিসির আলী, রুপা চরিত্রগুলো কত কিশোর-যুবকের স্বপ্নের মধ্যে এসেছে তা গুণে বলা যাবে না। এই লোক ছিলেন সর্ববিশারদ। সাহিত্য, সিনেমা সবদিকেই সমান পারদর্শী। ভাবা যায়, তার সৃষ্ট নাটকের চরিত্রের ফাঁশি ঠেকানোর জন্যে জনগণ বাস্তবে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করেছিল ! একজন নির্মাতা বা সাহিত্যিকের সার্থকতা তো এখানেই যে তাদের সৃষ্টিকর্মগুলো বাস্তব হয়ে উঠবে। তারা বেঁচে থাকবেন তাদের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মাঝে।
কি অদ্ভুত ব্যাপার। আজকের দিনটাও তাদেরকে মনে রাখার জন্য একই সূত্রে গাঁথা। ১৯ শে জুলাই একজনের জন্ম আর একজনের মৃত্যুদিবস!
শুভ জন্মদিন কাজীদা! মহানায়ক হয়ে আরো অনেকদিন বেঁচে থাকুন।
যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক গল্পের জাদুকর!
আমাদেরকে বই পড়া শেখানোর জন্য ধন্যবাদ দুজনকেই!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:২৬