ব্যাকটেরিয়ার সাথে তো সবাই পরিচিত। যারা সায়েন্স এর লোক তারা তো বিশদ চিনেনই এমনকি আজকাল ডেটল বা লাইফবয়ের বিজ্ঞাপনের কল্যাণে কিলবিলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুগুলোর সাথে সবাই পরিচিত। অবশ্য সব ব্যাকটেরিয়াই যে ক্ষতিকর তা কিন্তু না, আমরা যে দই বা ইয়োগার্ট খাই সেটা যে পেটের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কল্যানেই প্রস্তুত হয় সে কথাই বা ক’জন জানে !!
আজকে অবশ্য এগুলো নিয়ে লিখতে নয় বরং এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে বিজ্ঞানীরা কত সুন্দর সুন্দর আর্ট-ওয়ার্ক বানিয়েছেন সেগুলো সবার সামনে হাজির করতে আসলাম।
আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি হচ্ছে মাইক্রোবায়োলজিস্ট দের সবচেয়ে বড় সোসাইটি বা প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক। সারা বিশ্বের সব বড় বড় অনুজীববিজ্ঞানী বা অনুজীববিজ্ঞানের ছাত্র-স্কলার সবাই এর সদস্য। এই সোসাইটি প্রতিবছর তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের সাথে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যার নাম Agar art competition. আগার কি ? সহজ ভাষায় আগার হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে এমন একটা মাধ্যম বা মিডিয়াম যেখানে ব্যাকটেরিয়াকে চাষ( culture) করে নানা পরিক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। বরাবরের ন্যায় ২০১৬ সালেও এই কন্টেস্ট অনুষ্টিত হয়। কন্টেস্টের নিয়ম খুব সহজ “ আগারকে ক্যানভাস ধরে তার উপর ব্যাকটেরিয়া বা ইস্টের কলোনি দিয়ে কোন চিত্র আঁকা। ”
এবছর সব মিলিয়ে ১১৭ টি আর্ট-ওয়ার্ক সাবমিট হয় আমেরিকা এবং আরো ২৬ টি দেশের প্রতিযোগিদের থেকে। আমাদের বাংলাদেশ থেকে কয়জন প্রতিযোগী অংশগ্রহন করেছেন আমার জানা নেই তবে সকল বিচারককে চমকে দিয়ে প্রথম হয়ে গেছেন আমাদের একজন বাংলাদেশি! নাম তার জহুরুল ইসলাম জহির। বর্তমানে তিনি পিএইচডি রিসার্চার হিসেবে ডেনমার্কে আছেন। কারো কারো কাছে হয়তো এইটা সায়েন্টিফিক মেইন্সট্রীম কোন ইভেন্ট বা কম্পিটিশন না হলেও যখন বিবিসি, সিএনএন এর মতো সংবাদমাধ্যম গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে তখন অনেকের কাছেই সেটা ভালো লাগার অনুভূতি দেয়। দেখে নিন তার সাবমিট করা আগার আর্ট !
তার এই শিল্পকর্মের নাম ‘The First Race’ আমরা সবাই জানি জীবন গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকগুলো স্পার্ম বা পুরুষ জনন কোষ থেকে একটিমাত্র স্পার্মের সৌভাগ্য হয় স্ত্রী জনন কোষ ওভাম বা ডিম্বানুকে নিষিক্ত করার। এইটা জীবনের প্রথম রেস বা কম্পিটিশন ! এই ব্যাপারটাকেই ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিচারকদের দৃষ্টিতে এই কাজটাই আবার প্রতিযোগিতার রেসে ফার্স্ট হয়ে গেছে! এই কাজে ৪ টি ব্যাকটেরিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন রঙ ফুটিয়ে তোলার জন্য । ব্যাকটেরিয়ার নামগুলো আর বললাম না অনেকেরইহয়তো সহজবোধ্য হবে না সেজন্য।
প্রতিযোগিতায় ২য় হয়েছে এই কাজটি।
বিশ্বাস করেন এটি একমগ বিয়ারের ছবি না। এটি শুধুই ব্যাকটেরিয়া ! ইতালির কয়েকজন রিসার্চারের কাজ এটি। টাইটেল ছিল This is Not A Beer! সুন্দর না ?
প্রতিযোগিতায় ৩য় হয়েছে এই কাজটি।
Calender of Pathogens শিরোনামের এই ছবিটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মানবজাতির ইতিহাসে প্রতি বছর কিভাবে মহামারি হয়, কোন অসুখ কিভাবে একটার পরে একটা এসেছে সেই ২০০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত। আমেরিকার একজন রিসার্চারের কাজ এটি। টাইটেল ছিল Twelve Years of Yuck.
অন্য অনেক প্রতিযোগিতার মত এই প্রতিযোগিতায়ও ছিল পিপলস চয়েস এওয়ার্ড। তুরস্কের দুইজন শিক্ষার্থী
ব্যাকটেরিয়া দিয়ে একটি নেকড়ের ছবি বানিয়ে জিতে নিয়েছেন বিশেষ পুরস্কার। টাইটেল ছিল Bacterial Shadow of Wolf.
চলুন দেখে নেই গত বছরের পুরষ্কার জেতা মাস্টারপিসগুলো ।
প্রথম পুরষ্কার জিতেছে নিউরন নামের এই ছবিটি।
এই খটোমটো জিনিসটি নাকি নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যাপ। বিচারকদের দৃষ্টিতে অন্যরকম লাগায় ২য় স্থান জিতেছিল এই ছবি।
Ode to Autumn শিরোনামে ৩য় পুরস্কার জেতা এই ছবিটির প্রতিপাদ্য ছিল ফসল তোলার মৌসুম। একটি ফার্মহাউস এবং পাশের শস্য খেতের ছবি ইস্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আসুন আমার পছন্দের আরো কিছু পেইন্টিং দেখি।
শেষ করব আমাদের দেশের উপর একটা আর্ট নিয়ে যেটা দেখে আমি আসলে এই দারুন সৃজনশীল কাজ সম্পর্কে জানতে পারি। বলাই বাহুল্য কাজটা উপরের পুরস্কার জেতা বাংলাদেশির
তো, আপনার কোন ছবিটা ভালো লেগেছে ?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১২