অভিনয় করতে আগ্রহী হলে, হোক তা টিভি নাটকে বা সিনেমায়, ভাল অভিনয় শিখতে হবে। টিভি নাটকে যেতে হলে পূর্বে মঞ্চ নাটকে পারদর্শিতা অর্জন জরুরি। টিভি নাটকের পরিচালক তার ক্যামেরা চালু রেখে নতুন কাউকে কখনো অভিনয় শেখাবে না। সেখানে কোন রিহার্সেল হয় না। তারা অভিনয় জানে এ ধরনের কাউকে নিবে। লাইন দিয়ে প্রচুর প্রার্থী অপেক্ষা করছে। নতুন কাউকে নিবে কেন? সবাই অল্প বাজেটে কাজ করে, রিহার্সেল করার বা নতুন কাউকে অভিনয় শেখানোর সময় কই?
হুমায়ুন ফরিদি, আলি যাকের, মোশাররফ করিম, শমি কায়সার, বিপাশা হায়াত, অপি করিম সবাই মঞ্চের ‘বিগ বস’ ছিলেন। তবে সুন্দরি প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হলে বা নিজেই প্রায় ১ হতে ২ লাখ টাকা খরচ করে টিভি নাটক প্রযোজনা করলে আলাদা হিসাব!
অভিনয় শেখার জায়গা হল বিভিন্ন থিয়েটার গ্রুপ। সেখানে দীর্ঘ সময় প্রাকটিসের পর একটি নাটক মঞ্চায়িত হয়। টিভি নাটকের পরিচালকরা মাঝে মধ্যে দর্শক হিসাবে আসে, কাউকে পছন্দ হলে তাকে প্রস্তাব দেয়। তাই পূর্বে কোন থিয়েটার গ্রুপে যোগদান করার বিকল্প নাই।
এই থিয়েটার গ্রুপের-ও রকমফের আছে, এর মাধ্যমে নিজেকে ‘হাইলাইট’ করতে হলে যেসব থিয়েটার গ্রুপ ঢাকা মহিলা সমিতি বা শিল্পকলায় নাটক মঞ্চায়িত করে, সেসব থিয়েটার গ্রুপে ঢুকতে হবে। এটা বাংলাদেশের বাস্তবতা, যদিও আঞ্চলিক পর্যায়ের শিল্পীদের জন্য তা দুর্ভাগ্যজনক। তবে এসব জায়গায় আবার সরাসরি প্রবেশ করা যায় না। পূর্বে অন্য কোথাও হতে অভিজ্ঞতা অর্জন করে যেতে হবে। এজন্য নিজের এলাকায় সবচেয়ে বিখ্যাত থিয়েটার গ্রুপে ঢোকাটা আপাতত বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত হবে।
উদাহরণস্বরূপ, মিরপুর এলাকায় একাধিক বিখ্যাত থিয়েটার গ্রুপ আছেঃ অপেরা, সাত্ত্বিক, মানস, অবয়ব ইত্যাদি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন উদীচীর মিরপুর ও মিরপুর শাখা-ও আছে। তারা মাঝে মধ্যে নতুন মুখের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। যারা আগ্রহী তারা সাড়া দেয়, একটি পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন কাউকে নেয়। সাধারণত ২৫ জনে ৫ জন টিকে।
প্রতি এলাকায় উক্ত এলাকার সব নাটক, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য দলের সমন্বয়ে সাধারণত একটা ফোরাম থাকে, যারা বিভিন্ন যৌথ কর্মসূচি দেয়। উদাহরণস্বরূপ, মিরপুরের ৪০ হতে ৫০ টা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে একটি ফোরাম আছে, “মিরপুর সাংস্কৃতিক ঐক্য সংগঠন”, তাদের ফেসবুক গ্রুপ আছে, যেখানে তারা নিয়মিত নতুন মুখের জন্য আহবান করে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সব সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে একটি ফোরাম আছে, “সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ঐক্য জোট”, এটা জাতীয় পর্যায়ের ফোরাম।
এখন এলাকার নাটকের দলগুলোর ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক ফোরামের ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের দিকে! এছাড়াও শিল্পকলার সিঁড়ির পাশে প্রায়ই নোটিস থাকে যা নিয়মিত যেয়ে দেখতে হবে। শেষেরটাই সবচেয়ে জরুরি!
ফেসবুকে শর্টফিল্ম-গুলো দেখতে হবে, এরা সাধারণত নতুন পরিচালক, তবে সবাই না। তারা সাধারণত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে নিজেদের শর্টফিল্ম শেয়ার করে। এই সকল পরিচালকের সাথে ফেসবুকে কথা বলতে হবে, আগ্রহের কথা জানাতে হবে। অনেক সময় এই গ্রুপেও বিজ্ঞাপন দেয়। যদি কোন পরিচালকের টিভি নাটক পরিচালনার পাশাপাশি তার নিজের কোন মঞ্চনাটকের দল থাকে তার দলে যোগদান করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে !!
আরেকটা বিষয়, টাকা পয়সার ব্যাপারে। থিয়েটার গ্রুপগুলো তার মাসিক ব্যয় নির্বাহের জন্য মাসে সাধারণত ৩০০ হতে ৫০০ টাকা নিতে পারে, সদস্য প্রতি। আর প্রথমবার ভর্তির সময় হয়ত হাজার দুয়েক। তবে টিভি নাটক বা শর্টফিল্মে টাকা দিতে হবে না, বরং তারা দিবে। নতুনদের যাওয়া-আসা করার জন্য হাত খরচ, দুপুরে এক প্যাকেট লাঞ্চ। যদি কোথাও এর ব্যতিক্রম হয়, তবে বিষয়টা সন্দেহজনক!!
শুভেচ্ছা রইলো, টিভি-তে দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
(লেখাটা একদম নতুনদের জন্য, যারা অভিনয়ে আগ্রহী, অথচ পথ জানা নেই!)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১:০৭