দুপুর ১টা বেজে ১১ মিনিট...
ছেলেটি নেটওয়ার্কিং ক্লাসে।তবে মনোযোগ ক্লাসের চাইতে ঘুমের দিকে বেশি। হঠাৎ মোবাইলের ভাইব্রেশনে তন্দ্রার ব্যাঘাত ঘটায় ছেলেটি মোবাইলের দিকে পর্দার দিকে তাকিয়ে বলল “বা#র আননোন নাম্বার।কল দেওয়ার টাইম পাইল না।”
ফোনটা কেটে দিল। আরো ২ বার ফোন আসল। কিন্তু প্রতিবার কেটে দিল।
ক্লাস থেকে বের হয়ে ছেলেটি ফোন দিয়ে ফোন বন্ধ পেল।
এমন ভাবে কয়েক দিন ফোন আসল। কিন্তু রিসিভ করা হয়ে উঠে নাই। পরে ফোন দিলে বার বার ফোন বন্ধ।
একদিন ক্লাস মিস দিয়ে দুপুরের ভূড়িভোজের পর ছেলেটি গভীর ঘুমে মগ্ন।আবার ফোন এল। ছেলেটি এইবার ফোন ধরল।
-“হ্যালো”
আপর প্রান্ত চুপ।
-“হ্যালো”
আপর প্রান্ত থেকে কোন কথা নাই।
-“সমস্যা কি আপনার? মজা নেন নাকি? বার বার ফোন করেন। ব্যাক করলে ফোন বন্ধ । এখন কথা কথা বলেন না।”
(এর মধ্যে “জান” নামের কারো ফোন আসছে। তাই আগের সেই কল রেখে ছেলেটি “জান” এর ফোন ধর।”)
আপর দিকে একটি মেয়ে।
চোখ মুছতে মুছতে ফোন আফ করে সিম চেঞ্জ করতে ব্যাস্ত।
আজ প্রায় ২ বছর পর প্রিয় মানুষের গলার স্বর শুনে আর কিছু বলারা ছিল না।সে আর কি বলবে বলার কিছু নাই।
গলা শুনে মনে হচ্ছে সে ভাল আছে।
“কত কষ্ট দিছি ওকে। কোন দোষ না থাকা সত্যেও।প্রতিদিন আপমান,খারাপ ব্যাবহার কতকিছু। কিন্তু সব মুখবুজে সহ্য করছে। পরে সরাসরি চলে যেতে বলছি। আমার কথা রেখে সে চলেও গেছে। জানি অনেক কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম।
বাসা থেকে বিয়ের চাপ ছিল। একদিন কথা পাকাপাকি করেও ফলল বাবা। আমার বাবার মন ভাংগা সম্ভব ছিল না। আর ওর কোন উপয় ছিল না আমাকে বিয়ে করার মত।
সব খুলে বললে অনেক সমস্যা হত তার। তাই আমার প্রতি ঘৃণা জন্মানো ছাড়া কোন উপায় ছিল না।আমাকে ঘৃণা করুক তবুও ভাল থাক।” মেয়েটি এসব ভাবতে ভাবতে চোখের পানি মুছে ফেলল।
কলিং বেলের শব্দে তার ঘোর কাটল।
মেয়েটার স্বামী এসেছে অফিস থেকে। আবার মেয়েটি সংসারের কাজে চলে গেল।
-“আচ্ছা জান রাখি”
-“বাই। ভাল থেকো।”
-“ভাল করে পড়াশুনা করবি। আর আপাকে বলবি চিন্তা কম করে করতে।রাখি।”
ছেলেটার ভাগনি তাকে জান বলে ডাকে।
ফোন রাখার পর একটা সিগারেটে টান দিতে দিতে বারান্দায় গেল ছেলেটি। দুরের আকাশ দেখতে দেখতে ভালবাসার মানুষটির কথা ভাবতে লাগল।মোবাইলে ছবিটা বের করে একবার দেখল।
ছেলেটা জানে তার সাথে মেয়েটার খারাপ ব্যাবহারের কারন। তাই আর তাকে কোন প্রশ্ন করে নাই।
“আমি তোমাকে ঘৃণা করতে পারব না। তোমাকে ঘৃণা করলে ভালবাসব কাকে?(আকাশের দিকে তাকিয়ে) যেখানেই থাক ভাল থাক”-ছেলেটি এসব ভাবতে ভাবতে সিগারেটের শেষ টান দিয়ে কালো ধোয়া বাতাসে ছাড়ল......।।
এটাই তো ভালবাসা।ভালবাসা মানে কি এক সাথে থাকা, এক ছাদের নিচে থাকা, একই বিছানায় ঘুমানো? নাহ। ভালবাসা মানে যে কোন আবস্থায় দুজন দুজনার ভাল চাওয়া।এক আকাশের নিচে থেকেই সুখ ভাগ করে নেওয়া।নিজে সব কষ্ট নিয়ে প্রিয়াজন কে ভাল রাখার তীব্র প্রচেষ্টাই ভালবাসা।
তাই হয়তো কবি গুরু বলেছেন
“মরে গিয়ে বাঁচব আমি, তবে
আমার মাঝে তোমার লীলা হবে।”